সময়ের সঙ্গে পরিবেশ বদলায়, আর পরিবেশের সঙ্গে বদলায় চুলের যত্নের ধরন। চুলে নিয়মিত তেল-শ্যাম্পু ব্যবহার এবং মাসে দুদিন হেয়ারপ্যাক ব্যবহার এখন যথেষ্ট নয়। আগের তুলনায় গ্রীষ্মকালে গরম আরও বেড়েছে, বেড়েছে দূষণ। সেই সঙ্গে বেড়েছে চুল আর মাথার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যাও। ত্বক ভালো রাখতে ক্লিনজিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজিংয়ের পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় পরপর স্ক্রাবিং করতে হবে। কিন্তু স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বকে আমরা জীবনে কয়বার স্ক্রাব করেছি, বলুন তো? অবাক হওয়ার কিছু নেই। মাথার ত্বকেও মৃত কোষ জন্মায়।
তাই সেটি পরিষ্কার রাখতে এবং খুশকি বা চুল পড়ার সমস্যা মোকাবিলায় স্ক্রাবিংয়ের জুড়ি নেই। স্ক্যাল্প স্ক্রাবের উপকারিতা কী, কত দিন পরপর করতে হয় এবং কীভাবে বাড়িতে তৈরি ও ব্যবহার করা যায়, সেসব জানাচ্ছেন শোভন মেকওভারের স্বত্বাধিকারী কসমেটোলজিস্ট শোভন সাহা।
স্ক্যাল্প স্ক্রাব কী
স্ক্যাল্প স্ক্রাব অনেক ক্ষেত্রে হেয়ার স্ক্রাব নামেও পরিচিত। যদিও এই স্ক্রাবিং চুলে হয় না, হয় মাথার ত্বকে। খুশকির সমস্যা, মাথার সিবাম গ্রন্থিগুলো থেকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ ইত্যাদি কারণে স্ক্যাল্পে মরা কোষ জন্মে। আবার স্ক্যাল্পে ব্যবহৃত প্যাক ভালোভাবে পরিষ্কার না করলেও তা চুলের গোড়ায় জমে যায়। এসব ডিপ ক্লিন বা গভীরভাবে পরিষ্কার করার জন্য শ্যাম্পুর পাশাপাশি স্ক্রাব কাজে লাগে। স্ক্রাবিংয়ের ফলে এই তেল বা খুশকি দূর হয়ে চুলের স্বাস্থ্য ফেরায় এবং চুল বড় হতে সাহায্য করে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান মাথার ভেজা ত্বকে মাখলে এবং হালকা ম্যাসাজ করলে উপকার পাওয়া যায়। এখন বিভিন্ন স্যালন বা পারলারেও স্ক্যাল্প স্ক্রাবের সেবা দেওয়া হচ্ছে।
কীভাবে ও কতবার স্ক্যাল্প স্ক্রাব
সমস্যা বুঝে স্ক্যাল্প স্ক্রাব করতে হবে। মাথার ত্বকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ, সেনসিটিভিটি, চুল পড়ে যাওয়া, খুশকি ইত্যাদি হলে স্যালনে গিয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শে বা তাঁর হাতেই স্ক্রাব করাতে হবে। তবে চুলের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন শুষ্কতা, রুক্ষতা, চুল ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা ইত্যাদি হলে মাসে এক দিন বাড়িতে বসে নিজেই স্ক্যাল্প স্ক্রাব করলে ক্ষতি নেই। যাঁদের মাথায় অল্প খুশকি রয়েছে, তাঁরা সপ্তাহে একবার; অর্থাৎ মাসে চারবার বাড়িতে স্ক্রাব করতে পারেন।
যেভাবে ব্যবহার
একবারে কুসুম গরম পানি দিয়ে মাথার ত্বক ভেজান। মাথার ত্বকে স্ক্রাব লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে নিন। ৫ থেকে ১০ মিনিট রেখে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। তারপর চুলে স্টিম নিতে পারেন। এ জন্য গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে নিংড়ে মাথায় ১৫ মিনিট জড়িয়ে রাখলেই হবে। এরপর শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
মনে রাখা জরুরি
১। বিশেষ অসুস্থতা বা রোগের কারণে স্ক্যাল্প ও চুলে সমস্যা আছে কি না, তা জেনে নিয়ে স্ক্রাব করা ভালো।
২। ভালো ফল পেতে ঘন ঘন স্ক্রাব করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞকে মাথার ত্বক দেখিয়ে তাঁর পরামর্শে স্ক্যাল্প স্ক্রাব করা নিরাপদ।
তৈরি করা যায় বাড়িতেই
১। বাজার চলতি স্ক্রাবে যদি ভরসা করতে না পারেন, তাহলে বাড়িতে বসেই এটি বানিয়ে নিতে পারেন।
২। কফিগুঁড়া ও চিনি একসঙ্গে মিশিয়ে ভেজা মাথার ত্বকে লাগিয়ে হালকা হাতে ম্যাসাজ করে নিন। এরপর শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
৩। নারকেল তেল ও চিনিতেও স্ক্যাল্প স্ক্রাব করা যায়।
৪। আপেল সিডার ভিনেগার ও মধু মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর হেয়ারব্রাশ দিয়ে চুল আঁচড়ে নিন। তারপর শ্যাম্পু করে নিলেই মাথার ত্বক ও চুল পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠবে।
৫। এক চা-চামচ আপেলবাটা, এক চা-চামচ চিনি ও সমপরিমাণ লবণ মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। হালকা ম্যাসাজ করার পর আগের নিয়মে চুল ধুয়ে নিন।
৬। মেথির গুঁড়া খুব ভালো স্ক্রাব। এর সঙ্গে এক চা-চামচ মধু বা নারকেল তেল মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর এই মিশ্রণ দিয়ে মাথার ত্বক স্ক্রাব করে নিন।
আপনার মতামত লিখুন :