নবগঙ্গা, চিত্রা, মধুমতি বিধৌত শ্যামল সবুজ একটি জনপদ মাগুরা। এক সময় ছিল যশোর জেলার একটি মহকুমা, বর্তমানে স্বাধীন বাংলাদেশের একটি জেলা। বাংলাদেশের দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিতে এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মাগুরাবাসীর ভূমিকা নানা কারণে অসামান্য গুরুত্ববহ। দেশ বিভাগের পর পশ্চিমাদের শাসন শোষন পাকাপোক্ত রাখার ষড়যন্ত্রে মুসলিম লীগের তথাকথিত নেতৃবৃন্দ মাগুরার সংখ্যাগরিষ্ঠ নিরক্ষর মুসলমানের মধ্যে ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’ শ্লোগানের যোশ জিইয়ে রেখে ধর্মের নামে অপপ্রচার এবং লোভ লালসার উস্কানী দিয়ে স্বাধীকার বোধকে ধামাচাপা দেয়ার অপপ্রয়াসে লিপ্ত ছিল। এ অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য, শোষন-বঞ্চনার বিরুদ্ধে ব্যাপক গণসচেতনতার দীর্ঘ সংগ্রামে লাগাতার প্রাণপাত পরিশ্রম করতে হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জনাব আবদুল খালেক, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব সোহরাব হোসেন এবং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য জনাব সৈয়দ আতর আলী ও জনাব আসাদুজ্জামান সমস্ত ভয়ভীতি ও প্রলোভনের উর্দ্ধে থেকে সংসদের ভিতরে সংগ্রাম করেছেন এবং পাশাপাশি জন্মভূমির ঋণ শোধ করতে মাগুরার আপামর গণমানুষের সুখ-দুঃখের অংশীদার হয়ে রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টিতে মহান অবদান রেখেছেন। তাই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান এবং সত্তরের নির্বাচনের পথ বেয়ে সচেতন মাগুরা দারুন আক্রোশে ফেটে পড়ে একাত্তরে পাক বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যার বিরুদ্ধে।
মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দেয়ার আগে সাবেক মন্ত্রী জনাব সোহরাব হোসেনের অনুরোধে খোন্দকার আব্দুল মাজেদ (প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক মাগুরা জেলা আওয়ামি লীগ), বাবু মধু কুন্ড সহ-সভাপতি (মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগ) বাবু নিরোদ কৃষ্ণ সরকার (প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগ) ও শৈলকুপার সার্জেন্ট কামরুজ্জামান একটি চিঠি নিয়ে ভারতে নিযুক্ত তৎকালীন পাকিস্থানের ডেপুটি হাইকমিশনার জনাব হোসেন আলী সাহেবের নিকট ভারত সরকারের সর্বশেষ সন্মতি জানার জন্য ভারত গমন করেন। জনাব হোসেন আলী ঐ সকল নেতাদের আস্বস্ত করেন যে, জনাব সোহরাব হোসেনের সাথে পূর্ব আলোচনা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে আগত নেতাদের ভারতে অবস্থান, নিরাপত্তা, যথাযোগ্য রাজনৈতিক মর্যাদা ও ভারত সরকারের অঘোষিত সহযোগিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। জনাব হোসেন আলীর বার্তা প্রেরিত টিম যথাসময়ে জনাব সোহরাব হোসেনের নিকট পৌছায়ে দেন।
২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রান পুরুষ বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন সাহেব ভারতে যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকা থেকে ২৯ শে মার্চ ১৯৭১ মাগুরায় পায়ে হেটে আগমন করেন। জনাব তাজউদ্দিন সাহেব মাগুরাতে আসবেন এই সংবাদ পাওয়ার পর থেকে খোন্দকার আব্দুল মাজেদ সাহেব মাগুরা শহরে অবস্থান করতে থাকে। জনাব তাজউদ্দিন সাহেব মাগুরাতে পৌছালে খোন্দকার আব্দুল মাজেদ সাহেব জনাব তাজউদ্দিন সাহেব কে সঙ্গে নিয়ে তার বড় বোনের বাড়ি তথা তার ভাগ্নে বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ইউসুফ এর বাড়ি আঠারখাদা গ্রামে নিয়ে যান এবং সেখানে রাত্রি যাপন করেন। আগে থেকেই সাবেক মন্ত্রী জনাব সোহরাব হোসেন আঠারোখাদায় ঐ স্থানে অবস্থান করতে থাকেন ও জনাব তাজউদ্দিন সাহেবের সাথে দেখা করে মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র প্রদান করেন যা আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোহরাব হোসেনের কাছে রেখে দেন। পরের দিন খোন্দকার আব্দুল মাজেদ সাহেব একটি জিপ গাড়িতে জনাব তাজউদ্দিন সাহেবকে সিমান্তে পৌছে দেন। জনাব তাজউদ্দিন সাহেব স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তার ব্যবহৃত চাইনিজ পিস্তল খোন্দকার আব্দুল মাজেদ সাহেবের নিকট রেখে যান।
এ সময় সোহরাব হোসেন মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা, স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ গঠন, পরিচালনা নীতি নির্ধারণ ও উচ্চতর পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল শুক্রবার দুপুরের দিকে ঝিনাইদহ থেকে আলমখালী হয়ে এবং যশোর থেকে সীমাখালীর পথ ধরে পাক সেনারা একযোগে মাগুরার দিকে আসতে থাকে। ঝিনাইদহ থেকে আগত পাক সেনাদলের বিশাল গাড়ীর বহর মাগুরার আলমখালী বাজার সংলগ্ন রাস্তায় থামিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করতে থাকে। এসময় আলমখালী ব্রীজ ও রাস্তার লাগোয়া উত্তরের বাড়ীর বাসিন্দা কুলু সম্প্রদায়ের শ্রী সুরেন কুলু ভয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে পাক সেনারা তার আঙ্গিনায় সুরেন কুলুকে গুলি করে হত্যা করে। সাঁজোয়া গাড়ীর বহর শহরে না ঢুকে ভায়না মোড় অতিক্রম করে সোজা চলে যায় মাগুরা কামারখালী সড়কের দিকে এবং পারনান্দুয়ালী গ্রামের মধ্যে বর্তমান বাস টার্মিনাল সংলগ্ন পাকা রাস্তার উপর প্রায় আধা মাইল দীর্ঘ সারি দিয়ে সেনাবাহিনীর গাড়ী দাঁড়িয়ে থাকে। কোন প্রতিরোধ আসে কি না তা আঁচ করার জন্য। এ সময় বাগবাড়ীয়া গ্রামের ঝাকড়া চুলের সুঠাম দেহী লালু পাগলা পাগলামীর বশে হুংকার দিয়ে পাক সেনাদের গাড়ীর কাছে এগিয়ে গেলে পারনান্দুয়ালী স্কুলের সামনের রাস্তায় পাক সেনার গুলিতে লুটিয়ে পড়ে লালু পাগলের নিথর দেহ। পাক সেনাদল সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষার পর ও কোন হামলা বা প্রতিরোধের সম্মুখীন না হওয়ায় নিরাপদ বোধ করে। এদেরই একটি অংশ সন্ধ্যার দিকে মাগুরা শহরের পি,টি,আই, স্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করে। পরদিন মাগুরা শহরের ভি,টি,আই, সরকারী বালক বিদ্যালয় ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ ভবন সহ অন্যান্য স্থানে পাক ক্যাম্প স্থাপন করে। এদিন ২৪ এপ্রিল বাংলা ১০ই বৈশাখ শনিবার বিকেলে পাক সেনাদলের ৫/৬ খানা খোলা জীপ মাগুরা শহরের নতুন বাজার এলাকায় যেয়ে কয়েকটি পাটের গুদামে অগ্নিসংযোগ করে এবং আশে-পাশের লোকজনদেরকে গুদামের মালামাল লুটপাট করতে নির্দেশ দেয়। এর পরপরই সন্ধ্যার প্রাক্কালে ঐ সেনাদলটি মাগুরা থানা ও ডাকঘরের অদুরে টাউন হল ক্লাবের সামনে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জগবন্ধু দত্তের বাড়ির সামনে এসে থামে। বিশাল বাড়ীতে তখন জগবন্ধু দত্ত একা ছিলেন। সেনা সদস্যরা বাড়ির আঙ্গিনায় গুলি করে বৃদ্ধ জগবন্ধু দত্তকে হত্যা করে থলে ভর্তি স্বর্নালংকার টাকা-পয়সা নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় অস্ত্রের মুখে পথচারীদের ঐ বাড়ির মালপত্র লুট করতে প্ররোচিত করে। এভাবেই পাক সেনারা মাগুরায় হত্যা লুট ও ধ্বংস যজ্ঞে উৎসাহের সূচনা করে।
মুজিবনগরে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হওয়ার পর দেশের অভ্যন্তরে পাক সেনাদের আগ্রাসী ভূমিকা, জ্বালাও-পোড়াও অভিযান, নির্বিচারে গণহত্যা ও লুটতরাজ ব্যাপকতর হওয়ার সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেয়ার জন্য যুবক শ্রেণীসহ আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার ভারত গমণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও ট্রনিং ক্যাম্প খোলা হয়। মাগুরা, যশোর, কুষ্টিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন শিবির ও ক্যাম্পে সে সময় রাত দিন সেবা ও সাহায্যের তদারকি করতেন সোহরাব হোসেন, সৈয়দ আতর আলী, এ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান।
মাগুরার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাংগঠনিক তৎপরতায় সংগ্রাম পরিষদ গঠন। মাগুরা থানায় নেতৃত্ব দেন খোন্দকার আব্দুল মাজেদ, কাজী ইউসুফ আলী, সৈয়দ তৈয়বুর রহমান প্রমুখ। শ্রীপুর থানার নেতৃত্ব দেন জনাব আকবর হোসেন মিঞা, মোল্যা নবুওয়াৎ আলী, কাজী ফয়েজুর রহমান, মিঞা গোলাম মোস্তফা, আবু বকর, আলাউদ্দিন, শাহাদৎ হোসেন ও মোশারফ হোসেন প্রমুখ এবং মোহাম্মদপুর থানায় আব্দুর রশীদ বিশ্বাস, গোলাম ইয়াকুব (বীর প্রতীক), নজরুল ইসলাম, বাঁশী মিয়া, লুৎফর রহমান শিকদার, আইয়ুব হোসেন, সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম সহ আরো অনেকে দায়িত্ব পালন করেন।
মাগুরা’র মুক্তিযুদ্ধটাকে প্রকৃত প্রস্তাবে টিকিয়ে রেখেছিল চার থানার তিনটি স্থানীয় বাহিনী। মাগুরা সদর থানায় খোন্দকার আব্দুল মাজেদ, কাজী ইউসুফ আলী ও ভিকু মিয়া শ্রীপুরে আকবর হোসেন মিয়া ও মোল্লা নবুওয়াৎ আলী এবং মোহাম্মদপুরে গোলাম ইয়াকুব (বীর প্রতীক)নেতৃত্বদেন স্থানীয় বাহিনীর। তথাকথিত নকশাল অধ্যূষিত শালিখা থানায় বরং মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়ে ট্রেনিং নিয়ে আসা মুক্তি সেনাদের অস্ত্র-শস্ত্র ছিনিয়ে নেয়াসহ আলাদা কোন মুক্তিবাহিনী গঠিত হয়নি। এ থানার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বদ্ধ ব্যক্তিবর্গ মুক্তি বাহিনীতে যোগ দেন।
স্থানীয় বাহিনীসমূহের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সাধারণ মানুষের মনোবল চাঙ্গা রাখা এবং চোরাগুপ্ত হামলা চালিয়ে পাক সেনা ও তাদের দোসর রাজাকারদের সব সময় শঙ্কিত করে তোলা। পরবর্তী সময়ে ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে গণবাহিনী ও মুজিব বাহিনীর বিভিন্ন টীম বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় বাহিনীর সাথে যোগ দিলে এলাকার মুক্তিবাহিনী সুসংহত হয় এবং পাক সেনাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে স্বাধীনতার অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে থাকে।
যুদ্ধের শুরূতে খোন্দকার আব্দুল মাজেদ সাহেবের বাহিনী মাগুরা সদর থানা ও ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার অংশ বিশেষ যুদ্ধ তৎপরতা শুরু করে। হাজীপুর ইউনিয়নের বরইচারা গ্রামে যুদ্ধ ছাউনি স্থাপন করা হয়। বরইচারা গ্রাম থেকেই যুদ্ধ পরিচালনা করা হতো।
খোন্দকার আব্দুল মাজেদের নির্দেশে তার ভাগ্নে মাজেদ বাহিনীর সহ অধিনায়ক কাজী ইউসুফের নেতৃত্বে মাগুরা আনসার ক্যাম্প লুট করা হয়। যা বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে বিতরণ করা হয়।
আলমখালী যুদ্ধের উদ্ধার করা অস্ত্র নিয়ে খোন্দকার আব্দুল মাজেদ সাহেব ও তার অন্যতম সহযোগী ১। কাজী ইউসুফ ২। শহীদুল্লাহ ভিকুকে নিয়ে প্রথম ট্রেনিং প্রাপ্ত ব্যাচের ব্যক্তিদের নিয়ে সমন্বয় করলে এই বাহিনী একটি বিশাল বাহিনীতে পরিনিত হয়। নভেম্বর ১৯৭১ প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ১। আঃ হাই চৌধূরী ২। এস.এম আঃ রহমান ৩। কাজী এনামূল কবীর ৪। শহীদ অধীর কুমার শিকদার ৫। এ,বি,এম আকবর আলী ৬। কাজী নুরূজ্জামান ৭। শহীদ আঃ আজিজ ৮। শহীদ আঃ রউফ ৯। মোঃ জহুর-ই-আলম প্রমুখ কমান্ডার গন এবং মাগুরা সদর থানায় প্রথম ব্যাচ আসেন মুজিব বাহিনীর ডেপুটি লীডার লিয়াকত আলীর (বর্তমানের রেডিও বাংলাদেশে কর্মরত) নেতৃত্বে। তারা মাজেদ বাহিনীর সাথে যোগ দিয়ে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এরপর আসে আবুল খায়ের (সাবেক উপ-সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয়) ও খুরশীদ আনোয়ার খসরু (প্রয়াত মন্ত্রী জনাব সোহরাব হোসেনের জ্যৈষ্ঠপুত্র) নেতৃত্বে মুজিব বাহিনীর একটি দুর্র্ধষ টিম এর সদস্যদের আগমনে এই বাহিনী একটি বিশাল বাহিনীতে পরিনিত হয়। এ সময় হাজীপুর পাক সেনাদের একটি বিশাল দলের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয়। এ যুদ্ধে আবুল খায়ের সামান্য আহত হলেও রণকৌশল ও অসীম বীরত্বে লড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাপক কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পরবর্তী সময়ে আব্দুল হাই, পল্টুর ও ইসার নেতৃত্বে গণবাহিনীর একটি চৌকস দল মাজেদ বাহিনীর সাথে যোগ দেয় এবং বিভিন্ন রণাঙ্গনে সম্মিলিত মুক্তিবাহিনী বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে পাক সেনা ও রাজাকারদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে সমর্থ হয়। মাগুরা সদর থানা এই সন্মিলিত গনবাহিনীর অধিনায়ক হিসাবে খোন্দকার আব্দুল মাজেদ সাহেব দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় হাজীপুরের বরইচারা গ্রামে যুদ্ধ ছাউনিতে থাকিয়া ইছাখাদা, গাংনালিয়া, রাউতরা, আলফাডাঙ্গা, শৈলকুপা, হাজীপুর, আরালিয়া, মির্জাপুর, দারিয়াপুর, শ্রীমন্তপুর, আলীধানী, বরইচারা সহ বহু স্থানে যুদ্ধ করিয়া পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকারদের পাকড়াও ও বহু অস্ত্র উদ্ধার করে। পরবর্তীতে আরালিয়া ও মির্জাপুরে ৫ দিন ধরে বাংকাঁর যুদ্ধ হয়। ঐ সময় গোলাবারুদের খুব সল্পতা ঘটে কাজী ইউসুফ, শহীদুল্লাহ ভিকু ও মোঃ আব্দুল হাই চৌধূরী ৭০/৮০ জন সদস্য নিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের জন্য সেক্টর ও সাব সেক্টরে চলে যায়। '৮ই নভেম্বর ১৯৭১ বাহিনীর যোদ্ধারা যুদ্ধের জন্য শ্রীপুর ও শৈলকুপার মীনগ্রামে অবস্থান গ্রহন করে। ঐ মুহুর্তে সুযোগ সন্ধানী পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরা রাজাকাররা হাজীপুর দখল নেয় এবং মোঃ শহীদুল্লাহ ভিকু ও আবু বক্কার সিদ্দিকির বাড়ি লুটপাট করে পুড়াইয়া দেয়। ঐ দিন ভোর বেলা বরইচারা গ্রামে যুদ্ধ ছাউনিতে পঞ্চমূখী আক্রমন চালাইয়া পাকবাহিনী বাহিনী প্রধান খোন্দকার আব্দুল মাজেদ সাহেবকে বিপুল অস্ত্র সহ স্থানীয় রাজাকার প্রধান মোসলেম উদ্দিনের সহযোগীতায় ধরে ফেলে। খোন্দকার আব্দুল মাজেদ সাহেবকে পাশবিক নির্যাতন চালালে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান ও জ্ঞান ফিরলে তিনি পানি খেতে চান কিন্তু তাকে পানি পান করতে দেওয়া হয়নি। পাক বাহিনী তাঁকে গুলি করিয়া মারিয়া ফেলতে গেলে তার ছোট স্ত্রী বারবার বাধা দেন এতে ক্ষিপ্ত হইয়া হানাদার বাহিনী তার ছোট স্ত্রীকে রামদার পিছন পার্শ্ব দিয়া আঘাত করিয়া গুরুতর আহত করে। ঐ সময় পাকবাহিনী বরইচারা গ্রামের যুদ্ধ ছাউনি ও স্থানীয় জেলেদের বাড়ি পুড়াইয়া দেয় এবং তাদেরকে অমানুষিক নির্যাতন করে। খোন্দকার আব্দুল মাজেদ সাহেবেকে পাকবাহিনীর ট্রাকে করে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে নিয়া যায়। দীর্ঘ ১মাস ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে আটক থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য জানার জন্য তাকে অস্ত্রের ব্যানেট শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত বিক্ষত করে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় তবুও তিনি অমানুষিক সাজা ভোগ করার পরও হানাদার বাহিনীর কাছে মুখ খোলেননি নির্যাতনের কারনে তার পবিত্র দাড়ি মোবারোকে রক্ত জমাট বেধে পোকা জন্মে যায়। পাক বাহিনী ক্যাম্পে খোন্দকার আব্দুল মাজেদ সাহেবকে ২বার গুলি করে মেরে ফেলার হুকুম হয় কিন্তু খোন্দকার আব্দুল মাজেদ সাহেব পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় বিধায় ক্যাস্প ইনচার্জ তাকে সুফি বোলে সম্মান করায় তাকে মারতে দেননি। খোন্দকার আব্দুল মাজেদ সাহেবের ভূয়া মৃত্যুর সংবাদের খবরে মাগুরাবাসী, মুক্তিযোদ্ধা, সাবসেক্টর কমান্ড, সেক্টর কমান্ড, প্রবাসী সরকারের মাননীয় মন্ত্রিপরিষদ গায়েবানা জানাযা করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোল্যা নবুয়ত আলীর নেত্বেতে শ্রীপুর উপজেলার দারিয়াপুর হাসপাতাল প্রাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিপুল লোকজনের উপস্থতিতে গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরর্বতীতে জানা যায় তিনি মুত্যু বরন করেন নাই এবং তিনি পাকবাহিনীর ক্যাম্পে থেকে পালিয়ে আসেন। স্বাধীন হবার কিছু দিন পূর্বে পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকারা খোন্দকার আব্দুল মাজেদ সাহেবের গ্রামের বাড়ি শিবরামপুরে লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ করে।
সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা ঘটে কামান্নার যুদ্ধে। পাক বাহিনীর একটি বড় দল গোপন খবরের ভিত্তিতে অতর্কিতে মুক্তিবাহিনীকে আক্রমণ করেলে মাজেদ বাহিনীর ২৭ জন বীর যোদ্ধা শহীদ হয় যার মধ্যে ছিল মাজেদ বাহিনী প্রধান আব্দুল মাজেদ খোন্দকারের প্রথম পুত্র খোন্দকার রাশেদ আলী। কামান্না অংশের দলটি কমান্ডার ছিল সুবেদার মেজর মোঃ শমসের আলী।
জনাব আকবর হোসেন মিয়া, অধিনায়ক শ্রীপুর বাহিনী, তাঁর বিশাল বাহিনী নিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মাগুরা জেলার বিভিন্ন এলাকাসহ ফরিদপুরের রাজবাড়ী, রামদিয়া, ঝিনাইদহের শৈলকূপা থানাসহ আলফাপুরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের বিরুদ্ধে সফল সশস্ত্র য্দ্ধু পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাস তাঁর বাহিনী শ্রীপুর থানাকে সম্পুর্ণ শত্রুমুক্ত রাখেন। “মুক্তিযুদ্ধে আমি ও আমার বাহিনী” নামক গ্রন্থে জনাব আকবর হোসেন উল্লেখ করেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, “শ্রীপুর বাহিনী” কর্তৃক শ্রীপুর থানা বারবার আক্রমণ করে থানার সমস্ত পুলিশ ও ভারপ্রাপ্ত অফিসারকে আত্মসমর্পন করিয়ে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় জনাব আকবর সাহেবের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো শ্রীপুর থানায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষের বেসামরিক প্রশাসন চালু করা।
সামসুল ইসলাম ও মিঞা গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে মুজিব বাহিনীসহ শ্রীপুর বাহিনী আলফাপুর, আবাইপুর, নাকোল, নোহাটা, কামারখালী, খামারপাড়া বাজার, রাজবাড়ী, কামান্না, গাংনালিয়াসহ সম্মুখ যুদ্ধে বীর বিক্রমে য্দ্ধু করে সফলতা আনেন। প্রাথমিক পর্যায়ে মাজেদ বাহিনীর কাজী ইউসুফের মাধ্যমে কিছু অস্ত্র সাহায্যে সংগঠিত হয় আকবর বাহিনী। এ বাহিনীর সাথে যোগ দেয় আতাউর-আকুর নেতৃত্বে মুজিব বাহিনীর অত্যন্ত বেপরোয়া দুর্র্ধষ টিম। মুক্তিবাহিনীর এ সম্মিলিত দলটি অসংখ্য অতর্কিত হামলা ছাড়াও গাংগালিয়া, নাকোল ও কামান্নায় অসীম সাহসিকতায় সম্মুখ যুদ্ধে পাক সেনাদের মোকাবিলা করে। গাংনালিয়ার যুদ্ধে শৈলকূপার সার্জেন্ট কামরুজ্জামান এ বাহিনীর সহযোগিতায় এগিয়ে আসে এবং বীর বিক্রমে য্দ্ধু করে। এ যুদ্ধে বেশ কিছু পাক সেনা এবং ২৮ জন রাজাকার নিহত হয়। নাকোলের যুদ্ধে সম্মিলিত বাহিনীর আক্রমণে পাক সেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং অনেক রাজাকার মারা যায়।
শ্রীপুরের আর এক বীর মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন ক্যাপ্টেন আব্দুল ওয়াহাব (সাবেক মেজর জেনারেল) যিনি আরেক সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং মিত্র বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন রণাঙ্গণে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে অমিত বিক্রমে যুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং যুদ্ধ শেষে মাগুরা মিলিশিয়া ক্যাম্পের কমান্ডার হিসেবে তিনি ও খোন্দকার আব্দুল মাজেদ অস্ত্র জমা নেন ও মুক্তিযুদ্ধের সনদ বিতরণ করেন।
মোহাম্মদপুর-শালিখা থানার মুক্তিযুদ্ধের কেন্দ্রস্থল নোহাটা থেকে যুদ্ধের সার্বিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় গোলাম ইয়াকুব (বীর প্রতীক) এর অপরিমেয় সাহসিক নেতৃত্বে। পাক সেনারা বার বার আঘাত হানে নোহাটার উপর। এলাকার বিখ্যাত ব্যবসায় কেন্দ্র নোহাটা বাজার পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে দেয় এবং নির্বিচারে গণহত্যায় মেতে ওঠে। গ্রামে গ্রামে গিয়ে নিরীহ সাধারণ নারী-পুরুষ-শিশুকে একজনের হাতের শিরা কেটে অন্যজনের শিরায় গিঠ দিয়ে বাজারে নদীর পাড়ে এনে গুলি করে মারতে থাকে। গণবাহিনীর প্রথম দল আতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে নোহাটায় আসে এবং এর অব্যবহিত পরেই পুরো যুদ্ধের দায়িত্ব নেয় গোলাম ইয়াকুব (বীর প্রতীক) এর শক্তিশালী বাহিনী। তার কিছুদিন পর দলের শক্তি বৃদ্ধি হয় প্রয়াত এ্যাডভোকেট আবুল খায়েরের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনীর একটি দলের যোগদানে। এ সময় থেকে গান বোটে এবং মাগুরা থেকে স্থল পথে পাক সেনাদের এক বিশাল কনভয়ের ছত্রছায়ায় নোহাটায় রাজাকারদের ঘাঁটি স্থাপিত হয়। একদিন অতর্কিত আক্রমণের গুজব ছড়িয়ে পড়লে রাজাকাররা দুটো গরুর সদ্য রান্না করা মাংস আর খাবার-দাবার, গোলা-বারুদ ফেলে রেখে বন বাঁদাড় ভেঙে পালিয়ে যায় যা সম্মিলিত বাহিনীর বড় ভোজে রূপান্তরিত হয়। মুক্তিবাহিনীর এ অংশের নেতৃত্বে অসংখ্য লোমহর্ষক হামলাসহ নোহাটা, জয়রামপুর, বিনোদনপুর, মোহাম্মদপুরে সম্মুখ যুদ্ধ পরিচালিত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে আহাম্মদ মোহাম্মদ ভ্রাতৃদ্বয় এবং আবির নামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নোহাটা মডেল স্কুলের যুদ্ধক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩৩ জন পাক সেনা এবং অসংখ্য রাজাকার নিহত হয়। এর প্রতিশোধ নিতে কয়েকদিন পরে ভারী কামান ও অস্ত্র-শস্ত্রের বিরাট বহন নিয়ে নোহাটা বাজার পুড়িয়ে ছারখার করে এবং মেতে ওঠে নির্বিচারে গণ হত্যায়।
যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে কমল সিদ্দিকী (বীর বিক্রম) তার সুশিক্ষিত বাহিনী নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। ওয়ারলেসে খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে নড়াইলে যুদ্ধরত মুক্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন এবং পাক সেনাদের গুলিতে চিরকালের মত একটি চোখ হারান।
মিত্র বাহিনী ও মুক্তি বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে যশোর সেনানিবাসের পতন হলে পাকসেনারা পিছু হটতে হটতে মাগুরা আসে এবং একটি বড় অংশ নৌহাটর অপর পাড়ে পৌঁছালে মুক্তিবাহিনী তাদের গতিরোধ এবং ভয়াবহ প্রতিরোধের সম্মুখীন করে তোলে। ফলে আবার তারা মাগুরার দিকে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। অপর দিকে মিত্র বাহিনীর বিমান হামলা শুরু হয়ে যায় মাগুরা শহরের শত্রুদের বিভিন্ন ক্যাম্পে। একদিকে বিমান হামলা অপর দিকে মাগুরা সদর থানা সম্মিলিত গণবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা শহরের উত্তর পশ্চিমে নতুন বাজার এলাকায় ঢুকে পড়ে। এ অবস্থায় পাকসেনারা সব ফেলে এবং কোন কোন ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দিয়ে কামারখালীর দিকে পালাতে থাকে। এরা পারনান্দুয়ালী, বেলনগর, কছুন্দি, লক্ষীকান্দর, রামনগর, মাঝাইল গ্রামে অবস্থান নিয়ে কভারিং দিয়ে অন্যদের মধুমতি নদী পার হয়ে যেতে সহায়তা করে। ৬ই ডিসেম্বর সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে অবশিষ্ট পাকসেনারা শহর ত্যাগ করে পূর্ববর্তী সঙ্গীদের অনুসরণ করে।
৭ই ডিসেম্বর সকালে মুক্তিবাহিনী গগনবিদারী স্লোগানে প্রকম্পিত করে মাগুরা শহরে প্রবেশ করে এবং পাক সেনাদের ক্যাম্প দখলে নিয়ে পারনান্দুয়ালী গ্রামের পার্শ্বে মাগুরা কামারখালী সড়কের সুইজ গেটে সশস্ত্র প্রতিরোধ ব্যুহ তৈরী করে অবস্থান করে।
মাগুরা সদর থানা সম্মিলিত গণবাহিনী অধিনায়ক খোন্দকার আব্দুল মাজেদ ও সহ অধিনায়ক কাজী ইউসূফ মাগুরা থানা দখল নিয়ে পাক বাহিনীর ইছাদখাদা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন ক্যাম্প ও মাগুরা থানায় বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে মাগুরার নিয়ন্ত্রণ করেন।
৭ই ডিসেম্বর মাগুরা হানাদার মুক্ত উপলক্ষে নোমানী ময়দানে মুক্তিযোদ্ধা ও মাগুরাবাসীর উপস্থিতিতে খোন্দকার আব্দুল মাজেদ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
৭ই ডিসেম্বর চারদিক থেকে আত্মহারা সাধারণ মানুষ ও দলে দলে মুক্তিযোদ্ধারা মাগুরা শহরে আসতে শুরু করে। বিকাল ৫টার দিকে ট্যাংক বহরসহ মিত্রবাহিনীর মেজর চক্রবর্তী মাগুরায় পৌছায়।
বক্ষ্যমান নিবন্ধে শুধু বাহিনী প্রধানদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এদের সাথে ছিল অকুতোভয়, দুর্র্ধষ মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, বুদ্ধিদীপ্ত সংগঠকবৃন্দ এবং সর্বপ্রকার সাহায্য সহযোগিতায় আপামোর জনসাধারণ সবার নাম এই স্বল্প পরিসরে উল্লেখ করা সম্ভব হল না। সকলের সম্মিলিত ত্যাগ ও সাহসিকতায় দেশ মাতৃকার মুক্তি ত্বরান্বিত হতে পেরেছিল বলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের ইতিহাসে মাগুরার নাম স্বর্নাক্ষরে লেখা থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন :