বন্ধু একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ যদি ও এই শব্দটি ছোট তবে এর ভাবার্থ এবং অর্থ অনেক বড় মাপের। অতীত ইতিহাসের পাতা ঘাটলেই বোঝা৷ তা বোঝা যায়। বর্তমান সময়ে সমাজ ব্যবস্থায় পরকীয়ার খুব প্রভাব বেড়েছে। যার ফলে কয়েকটি সন্তানের মা হওয়া সত্বেও অন্য একটি ছেলের সঙ্গে লাজ লজ্জা ত্যাগ করে বেরিয়ে যাচ্ছে অসভ্য জগতের রাস্তায়। সভ্যতার শুরুতে মানুষ পোশাক পরতে জানতো না, রান্না করতে জানতো না, সমাজ বদ্ধ হয়ে বাঁচতে জানতো না। মানুষের জীবনের কালক্রমে এলো পরিবর্তন কিন্তু পরিবর্তনের সাথে সাথে অবক্ষয় ও পরকীয়ার জেরে বর্তমান সময়ে পারিবারিক যে একটা সুসম্পর্ক বজায় থাকার কথা, সে সম্পর্ক বজায় না থেকে মানুষ মেতে উঠেছেন ছেলে ও মেয়ের বন্ধুত্ব সম্পর্কে। যার প্রভাব পড়ছে সমাজ ও পরিবারে ধ্বংসনিলায়। একটি ছেলে ও একটি মেয়ে কখনো বন্ধু হতে পারে না। শেক্সপিয়ার বলেছেন, "একটি ছেলে ও একটি মেয়ে বন্ধু হতে পারে না।কারন এখানে আছে আবেগ ও পারস্পারিক দৈহিক চাহিদা মিটানোর আকাঙ্খা।"
ওস্কার ওয়াইল্ড বলেছেন, নারী পুরুষের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকা অসম্ভব। যা থাকতে পারে তা হলো আকাঙ্খা ও একে অপরের প্রতি দুর্বলতা। ছেলে মেয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে প্রবেশ করে তা রুপান্তর করছে অবৈধ্য সম্পর্কে। এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু নয়।" এখানে আছে মিলামিশার জন্য সুযোগের অপেক্ষা এবং তা সর্বশেষে পরকিয়ায় রুপ নিবে এটি নিশ্চিত এবং সমাজে তা প্রমাণিত।
হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন, ছেলে ও মেয়ে বন্ধু হতে পারে, কিন্তু তারা অবশ্য প্রেমে পরবেই। অল্প সময় বা দেরিতে হলেও তারা প্রেমে পরবেই।শুধু মাত্র একটু সুযোগের অপেক্ষা মাত্র।
বাস্তব কথা হলো ছেলে এবং মেয়ে বন্ধুত্ব অসম্ভব এবং তা সম্পূর্ণ ভাবে প্রকৃতি বিরুদ্ধ।ছেলে মেয়ে বন্ধুত্ব হলে তা একসময়ে অবৈধ সম্পর্কের রুপ নিবে।তা শুধু মাত্র সময়ের অপেক্ষা।জিজ্ঞাসা করলে তারা মুখে বলবে আমরা ভাই বোন,আমরা কাজিন,আমার ফুপু,ভাই,বোন ইত্যাদি। কিন্তু আসল ঘটনা হলো, তারা হলো একে অপরের অবৈধ প্রেমিক প্রেমিকা।
চোরকে যতই পিটন দেন না কেনো চোর বলবে আমি চুরি করি নাই। আবার ঢুড্ডা অর্থাৎ চরিত্র হ্ীান পুরুষকে সাথের মেয়েটি কে জিজ্ঞাসা করলে ? উত্তরে বলবে, "সম্পর্কে আমার মা। " অথচ তারা রক্তের সম্পর্কের কেউ না। চরিত্র হীন লোকের কোনো লজ্জা লাজ শরম ডর নাই। তারা কথায় কথায় মিথ্যা বলে। কিন্ত তা শুনে মনে হয় সত্য।
এখন থেকে প্রায় ৫০ বৎসর পূর্বে ছেলে মেয়েদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল ভাই বোনের মতো।কিন্তু বর্তমানে তা এখন আর নাই । এখন ফ্রেইন্ড থেকে ইড়ু ভৎরবহফ এবং এরৎষ ভৎরবহফ এ রুপ নিয়েছে। এখন ইড়ু ভৎরবহফ এবং এরৎষ ভৎরবহফ বিবাহ পূর্ব একে অপরের দৈহিক চাহিদা পূরন করছে।বর্তমানে এভাবে প্রায় ৬০ % ছেলে মেয়ে ভাই বোন বা ফুপু খালা বা ফ্রেইন্ড পরিচয় দিয়ে একে অপরকে ভোগ করছে।এটি এখন ওপেন সিক্রেট।
ঊাড়ষঁঃরড়হ ধহফ নবযধারড়ৎ নামক জার্নাল এ প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, ছেলেরা যখন মেয়েদের সংস্পর্ষে আসে তখন ছেলেদের টেস্টোটারেন হরমোন সারা দেয় ও তা তীব্র হয়ে উঠে।ঐ সময় ছেলেদের টেস্টোস্টারেন হরমোন নিঃসৃত হয় ও তখন তার শরীর গরম হয় উঠে, হার্টের বিট বৃদ্ধি পায়, শ্বাস প্রশ্বাস এর ঘনত্ব বেড়ে যায় এবং যৌন চাহিদা মিটামোর জন্য মন ছটফট করতে থাকে। একথা গুলো বাস্তব সত্য।
একে অপরের প্রতি তীব্র আকর্ষণ হলো ভালোবাসর অনুভূতি যাকে ইংরেজিতে বলে জড়সধহপব. যৌন বিজ্ঞানীদের মতে মানুষের মস্তিস্কে সেরাটোনিন নামক উপাদান থাকার কারনে একে অপরের প্রতি শারীরিক মিলনের জন্য কামনা জাগ্রত হয়।
একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সম্পর্কে যাই হোক না কেনো একসাথে দীর্ঘ সময় বা দীর্ঘদিন ঘুড়াফিরা করলে বা একসংগে দীর্ঘক্ষন সময় কাটানের সুযোগ থাকলে তাদের মধ্যে আদিম বাসনা জাগ্রত হবে এবং সেখানে সেক্স হরমোন তথা পুরুষদের টেস্টোসটারেন হরমোন ও মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোন এর রাজত্ব কায়েম হবে এবং একে অপরের প্রতি ভালোবাসার বা অবৈধ মেলামিশার চূরান্ত বিজয় ঘটবে এবং অবৈধ দৈহিক মিলন সম্পন্ন হবে।
যৌন বিজ্ঞানীদের মতে মানুষের শরীরে সেরাটোনিন নামক উপাদান থাকার কারণে নারী পুরুষ উভয়ে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং দৈহিক মিলনের জন্য তাদের মধ্যে কামনা জাগ্রত হয়।
মানুষের শরীরে অনেক হরমোন নিঃসৃত হয় উহার মধ্যে নিম্নের চারটি হরমোন প্রধান-যথা ১)- ডোপামিন ২)-সেরাটোনিন ৩)- অ্যান্ডোস্টামিন ও ৪)- এন্ডোরফিন হরমোন। এগুলোকে ফিল গুড হরমোন বা হ্যাপি হরমোন বলে। এ হরমোন গুলো মানুষের মন ভালো রাখে বা মনে আনন্দ উল্লাসের জোয়ার সৃষ্টি করে।
ডোপামিন হরমোন নিঃসৃত হয়, মস্তিস্কের হাইপোথালমাস অঞ্চল থেকে। এ হরমোন যৌনতাকে আকর্ষণ করে ও মানুষ আনন্দ উপভোগ করে। নারী পুরষ একত্রিত হলে ও প্রেমে পরলে এ্যাড্রিয়েল গ্রন্থী থেকে ডোপামিন হরমোন নিঃসৃত হয়। এর ফলে নারীর স্পন্দন রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়,ঘনগন শ্বাস প্রশ্বাসের সৃষ্টি হয়, হাতের তালা ঘেমে যায়।
নারী ও পুরুষ একত্রে সময় কাটালে তারা প্রেমে পরবেই তা কিছুটা দেরিতে হলেও।তা হরমোন জনিত কারন ও তা প্রাকৃতিক ভাবে ঘটে থাকে। তাই ছেলে মেয়েদেরকে দুরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। সভ্যতার আধুনিক যুগে এসে মানুষ যখন আধুনিক সভ্যতায় ব্যস্ত। সভ্যতার করাল গ্রাসে হারাচ্ছে মানুষ সুখের সংসার। যারা কষ্ট করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে পরিবারের সুখের জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। তারা এসে বর্তমানে তাদের পরিবারে শান্তির ছোঁয়া খুঁজে পাচ্ছেন না। যাদের জন্য এত পরিশ্রম করা সে অন্য পরকীয়া ব্যস্ত হয়ে পড়ে এই ব্যবস্থাপনায়।এভাবে চলতে থাকলে এক সময় বন্ধুত্ব নামক সম্পর্ক টিতে ভাটা পড়বে বন্ধুত্ব সম্পর্ক টি হবে কলঙ্কময়।
ছেলে মেয়ে মিশতে পারবে কিন্তু বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে তাদের জৈবিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে অনেক মেয়ে হয়ে যায় অন্তঃসত্ত্বা। সমাজ ব্যবস্থাপনায় এই অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটি সমাজের কাছে হয়ে যায় কলঙ্কিনী। আমরা এ সমাজ ব্যবস্থাপনা দেখতে চাই সংস্কারের বাংলাদেশ। সভ্যসমাজ একটি আধুনিক ব্যবস্থাপনার সমাজ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। নৈতিক মূল্যবোধ পারিবারিক মূল্যবোধের শিক্ষা দিয়ে। লালন দীর্ঘ বছর আগে বলে গিয়েছেন তার গান জাত গেল জাত গেল বলে গোপনে যে খারাপ মানুষের ভাত খায় তাতে ধর্মে কি জাত এসে যায়। প্রত্যেক ধর্মেই বিবাহকে হালাল করা হয়েছে। যাদের উপযুক্ত বয়স হবে তাদেরকে সমাজ ব্যবস্থায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেই সমাজ থেকে দূর হবে হবে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্ক। আর প্রত্যেকটা মানুষের ভিতরে সৃষ্টিকর্তার ভয় থাকতে হবে। সৃষ্টিকর্তার ভয় থাকলে সমাজ ব্যবস্থার যত খারাপ কর্ম আছে, পরকীয়া, অবৈধ সম্পর্ক, সুদ, ঘুষ, জেনা, ব্যভিচার, দুর্নীতি সব দূরীভূত হবে। আর এই খারাপ সম্পর্ক গুলো দূরীভূত হলে তবেই মিলবে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কের আসল রূপরেখা। সমাজ ও রাষ্ট্রে ফিরবে শান্তির বার্তা। ছেলে মেয়ের বন্ধুত্বের সম্পর্ক মম ও আগুনের মত। আগুনের কাছে মম রাখলে বা মম জ্বালালে ধীরে ধীরে যেমন গলে যায় তেমনি সমাজে যদি ছেলে মেয়ের বন্ধুত্ব বাড়তে থাকে বন্ধুত্বের সম্পর্কটি তো নষ্ট হবেই, একই সঙ্গে সংস্পর্শে থাকার কারণে মম ও আগুনের মতো আগুনের ছোঁয়ায় গলতে থাকবে।
সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা, ভদ্রতা, পরিবাররে শৃংখলে ফিরাতে অবশ্যই নারী পুরুষের সম্পর্ক বন্ধুত্বের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে পারিবারিক সম্পর্কে রূপ নিতে হবে। পরবর্তী প্রজন্মের এই সমাজকে একটি শান্তিপূর্ণ সভ্য সমাজে রূপান্তরণ করার চেষ্টা করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :