১৯৯৪ সালের ২ এপ্রিল পূর্ণিমা রাত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্তর্গত বাঞ্ছারামপুর উপজেলাধীন সোনারামপুর ইউনিয়নে মেঘনার পাড়ে চরশিবপুর নামক গ্রামে মো. রহমত উল্লাহ ও তাসলিমা বেগমের কুঁড়েঘরে চাঁদের আলো আসে, জন্ম হয় একটি সোনামুখের, কী টানা টানা চোখ, কচি কচি মুখ, খাড়া উঁচু নাক, তুলতুলে গাল আর সোনালী কপাল! মায়াবী ফুটফুটে চেহারা! মা বাবা বড় শখ করে চুমু দিয়ে তার নাম রাখে "নয়ন"।
কাঁদা মাটিতে গড়াগড়ি, হাঁস মুরগির বাচ্চার সাথে টি টি আর চু চু খেলতে খেলতে বাবার হাত ধরে স্কুলে ভর্তি হয় নয়ন। মা লুকিয়ে তার সোনাধনকে এক টাকার একটি কয়েন দিয়ে বলে "মাস্টারের কতা হুনিস, দুষ্টামি করিছ না আর পেডে ভুক লাগলে একটা আইছক্রিম খাইস।" সেখানে পেয়ে যায় অনেক বন্ধু ও সহপাঠী। লিটন, রাসেল আর সুলাইমানরা আজও ভুলে নাই নয়নের স্মৃতি মাখা শৈশব। সেদিনকার প্রধান শিক্ষক পুষ্প ম্যাডাম সহ আনোয়ারা, জাহানারা, কোহিনুর ম্যাডামদের সাথে কথা বলে তার প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়।
চরের মুক্ত জমিতে ফুটবল, গোল্লাছুট আর দারিয়াবাঁধা খেলার এক দূরন্ত শৈশব! ফড়িং, প্রজাপতি আর সারা গ্রামের পাখির ছানার হিসেব কষতে কষতে কত বিকেল পার! মেঘনা আর ঢোলভাংগা নদীর পানিতে ডুবাডুবি বা লাই খেলায় সেরা ছিল আমাদের নয়ন!
আপন ঘরেই রাজনীতির হাতেখড়ি! বাবা রহমত উল্লাহ ছিলেন বাঞ্ছারামপুরের জাতীয়তাবাদী সাবেক এমপি মরহুম এটিএম ওয়ালী আশরাফ, মরহুম শাহজাহান হাওলাদার সুজন, এম এ খালেক পিএসসি সাহেবদের একনিষ্ঠ কর্মী। বাবার মুখেই শুনেছিল স্বাধীনতার ঘোষক বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের কথা। শুনেছিল আপোষহীন নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গল্প, আগামীর দেশ নায়ক তারেক রহমানকে ভালবেসেছিল, হৃদয়ে এঁকেছিল ধানের শীষ প্রতীক! নাম লিখেছিল ছাত্রদলে! শহীদ হওয়ার আগে শেষ পরিচয় ছিল সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, সোনারামপুর ইউনিয়ন শাখা, বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ছাত্রদলের সভাপতি আনোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক লিটনের সাথে ছিল গলায় গলায় ভাব। জীবন দিয়ে প্রমাণ করল তৃণমূলের কর্মীদের একনিষ্ঠতা! বাঞ্ছারামপুরের আরেক নয়ন প্রাণ পুরুষ সাবেক সংসদ সদস্য এটিএম ওয়ালী আশরাফ এই দিনেই ইন্তেকাল করেন! কাকতালীয় ব্যাপার হলো দুজনেরই মৃত্যু বার্ষিকী ১৯ নভেম্বর! একই দিনে! হৃদয়ের টান কিনা জানিনা!
১৯ নভেম্বর ২০২২ সালে স্বৈরাচারী সরকারের পালিত পুলিশ বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়ে শহীদ হয় নয়ন। আজ ২য় শাহাদাত বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার আন্দোলনে কুমিল্লায় অনুষ্ঠিতব্য মহাসমাবেশ উপলক্ষে বিএনপি নেতা কৃষিবিদ ইঞ্জিনিয়ার ড. সাইদুজ্জামান কামালের নেতৃত্বে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরে লিফলেট বিতরণে যোগ দিয়েছিল নয়ন। দুপুর ১২টার দিকে বিতরণকালে থানা টু মোল্লা বাড়ি ব্রীজের পূর্ব পাশে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংগীয় ফোর্সসহ বাঁধা দেয়। ওসির সাথে কামাল ভাইয়ের সাধারণ যুক্তি তর্ক চলা অবস্থায় একজন পুলিশ সদস্য শান্ত মাথায় নয়নের পেটে গুলি চালায়, বেআইনি গুলি। মূহুর্তেই তরতাজা যুবক মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ঈমান আলী, আওলাদ, জামাল সহ অন্যান্যরা আহত নয়নকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গুরুতর জখম থাকায় ঢাকা মেডিকেলে রেফার করে।
সদরে যখন এই ঘটনা চলছে, আমি ছিলাম মরহুম এটিএম ওয়ালী আশরাফ ভাইয়ের কবর জিয়ারতে। তার ২৮তম মৃত্যু বার্ষিকী স্মরণে শাহ রাহাত আলীর দরগা মসজিদে মিলাদ শেষে কবরে দোয়া করি। আমার সঙ্গে ছিলেন এটিএম ওয়ালী আশরাফ স্মৃতি সংসদের সভাপতি ফরদাবাদের আব্দুস সাত্তার সরকার ও চরলহনিয়ার আব্দুল করিম ভাই সহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতা কর্মী। আমরা ঢাকায় ফেরার পথে রাত আনুমানিক ৮টার দিকে নয়নের মৃত্যু সংবাদ পাই।
এদিকে সদরে রাতে মশাল মিছিল বা প্রতিবাদ মিছিল করার জন্য আলোচনা হয় কিন্তু রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে পুলিশের চাপে তা করা যায়নি। ভিপি মান্নান, ভিপি মজিব, স্বেচ্ছাসেবক দলের ওমর ফারুক, যুবদলের ঈমান আলী, ছাত্রদলের রাজন সূত্রধর, জাসাসের সালাম, শ্রমিকদলের মনিরসহ শত শত নেতাকর্মী মশাল মিছিল করার জন্য প্রস্তুত ছিল। ধীরে ধীরে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে আর ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে বাঞ্ছারামপুরবাসী।
সদর থেকে অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকা যাওয়ার পথে পথে কড়িকান্দি ফেরিঘাটে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় বিলম্ব হয়। আওয়ামী রাজনীতির কূটচাল এখানেও কাজ করে। অ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে যতই ঢাকার কাছে আসতে থাকে, ততই নয়নের জীবনের আলো নিভতে শুরু করে। এদিকে ঢাকা মেডিকেলে উপস্থিত ছিল স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান সুজনসহ জাতীয়তাবাদী অনেক শুভাকাঙ্খি, মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে নয়ন। ডাক্তারের চেষ্টা ছিল কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নিভে যায় তার প্রাণ। অনিবার্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নয়ন। উপস্থিত জয়নালের আফসোস ইস, গুলিটি যদি হাতে বা পায়ে লাগত হয়ত আমাদের নয়ন বেঁচে যেত!
২০ নভেম্বর আমরা লাশ নিতে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে যাই। সাবেক এমপি এম এ খালেক পিএসসি, অ্যাড. রফিক সিকদার, অ্যাড. জিয়া উদ্দিন জিয়া, মিয়া মোহাম্মদ ইলিয়াস, আমিরুল ইসলাম সাজ্জাদ সহ ঢাকাস্থ বাঞ্ছারামপুর বিএনপির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিল। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভীও সেদিন লাশ গ্রহণের সময় উপস্থিত ছিল। লাশ পেতে অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়না। দেশে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে পুলিশের সাথে কথা বলাও কঠিন ছিল। দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এএসপির সাথে কথা বলে জানতে পারলাম তারা উপরের গ্রীন সিগন্যালের অপেক্ষায়, এজন্য দেরি হচ্ছে।
যাহোক, সন্ধ্যায় লাশ নিয়ে নয়াপল্টন পার্টি অফিসের সামনে আসলাম, হাজারো জনতা জানাজায় অংশ নেয়। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলের অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এতে যোগ দেন। ড. সাইদুজ্জামান কামাল সহ বাঞ্ছারামপুরের নেতৃবৃন্দ ও হাজারো মানুষের দোয়ায় সিক্ত হয় নয়নের প্রাণ। ৮ টার দিকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও গাড়িবহর বাঞ্ছারামপুরে তার জন্মস্থানের দিকে রওনা হয়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় সেদিন বিশনন্দি ফেরিঘাটে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাশ পারাপারে বাধার সৃষ্টি করে। পরিশেষে সেখান থেকে ট্রলার যোগে লাশ আসে চরশিবপুরে।
বাংলাদেশের পতাকা জড়ানো লাশের পাশে বসে আছে ছাত্রদলের শাওন, আবীর সহ অন্যান্য সতীর্থরা। একরাশ হতাশা নিয়ে তারা ভাবছে কী জবাব দিবে নয়নের মাকে! মায়ের হাতে খোকার লাশ! পিতার কাধে সন্তান! কীভাবে সহ্য করবে তারা! নৌকা যত বাড়ির কাছে আসছে তাদের বুকে হিমালয়ের চেয়েও বেশি ওজন অনুভব করছে! তারা মনোবল শক্ত করে, ভাবে নয়নের মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলবে আমরাই তোমাদের নয়ন! নয়নের নিষ্পাপ মুখ দেখে, বাবা মা, এলাকাবাসীর মাঝে কী হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল তা কাগজে কলমে বুঝানো কঠিন। স্থানীয় জনতার উপস্থিতিতে আবারও জানাজা শেষে চরশিবপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। সতীর্থরা ভালবেসে তার সমাধিস্থলে গেড়েছে বাংলাদেশের পতাকা, শপথ নিয়েছে ন্যায়বিচারের, শপথ নিয়েছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার। ৩৬ জুলাই ২০২৪ এর ছাত্র বিপ্লবের বিজয়ে এই শপথের ভূমিকা ছিল! আজ স্বৈরাচারের পতন হয়েছে কিন্তু আমার ভাই নয়ন শুধুই স্মৃতি!
২০ নভেম্বর পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৮০/১০০ জনের নামে। এফআইআরে উল্লেখ করা হয় রফিক, সাইদুর, ডঃ সাইদুজ্জামান কামাল, ঈমান আলী, ওমর ফারুক, সালাম সরকার, জিসান সরকার, মীর মোশাররফ, ভিপি মজিব, রুবেল মোল্লা, সাইফুল ইসলাম, রোমান আহমেদ, রেজাউল হক রাব্বি, মতিউর রহমান জালু, আনোয়ার হোসেন, মনিরুল ইসলাম ও জাকির হোসেনের নাম। এলাকায় চিরুনি অভিযান চালায় পুলিশ, ভয়ংকর থমথমে পরিস্থিতি। শিবপুরের রফিক আর সলিমাবাদের সাঈদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রায় ৬ মাস পর হাইকোর্ট থেকে তাদের জামিন ব্যবস্থা করি। আইনের নির্মম পরিহাস, গুলি করল পুলিশ, মামলা খেল বিএনপি নেতাকর্মীরা। উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও অন্যান্য অভিযুক্তদের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন ব্যবস্থা করি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আরিফুল হক মাসুদ অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে মামলা পরিচালনা করেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কোর্ট জামিনের ক্ষেত্রে কঠোর ছিল। সাহস যোগাতে ১৫ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জজ কোর্টে যাই। ১১ জন আত্মসমর্পণ করে জামিন পায়। সাবেক পৌর সভাপতি মতিউর রহমান জালু ভাই অসুস্থ হয়ে যায়, মুজিব ভাই কিছুটা টেনশনে, আত্মসমর্পণ করতে ভয় পায় ও নার্ভাস হয়ে যায়। তারা পরেরদিন জামিন নেয়। মামলাটি এখনও চলমান আছে, অভিযুক্তরা নিয়মিত হাজিরা দেয়। গত জুলাই বিপ্লবের পর এই মামলাতে নয়নের বাবা বাদী হয়ে প্রকৃত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ করলে পুলিশ তা জিডি আকারে রেকর্ড করে যা তদন্তের অপেক্ষায় আছে। তৎকালীন স্বৈরাচারী এমপি ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলামকেও এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সেদিন পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে গেলে থানা মামলা নেয়নি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট মামলা খারিজ করে দেয়। কেন্দ্রীয় অফিস থেকে পাঠানো টিমে আমাদের অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিন জিয়া ভাই ছিলেন। এখন অপেক্ষা বিচারে বিএনপি নেতাকর্মীরা মুক্তি পাক আর পুলিশ সহ গুলির হুকুমদাতাদের যথাযথ শাস্তি হোক।
২২ নভেম্বর স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা শিবপুরে আসেন। কেন্দ্রীয় নেতা রফিক সিকদার, জিয়া উদ্দিন জিয়া সহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপি নেতা হাফিজুর রহমান কচি মোল্লা, ভিপি জহির, বাঞ্ছারামপুর বিএনপির আহ্বায়ক মো. লিয়াকত আলী ফরিদ, সদস্য সচিব একেএম ভিপি মূসাসহ হাজারো নেতা কর্মী উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্রীয় কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান পলাশ নয়নের পরিবারকে তাৎক্ষণিক কিছু নগদ অর্থ সহায়তা করেন, প্রবাসী বিএনপি'র শুভাকাঙ্খিরা কিছু নগদ অর্থ প্রদান করে এবং অন্যান্যরা নয়নের পরিবারে পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। সেদিন বাঞ্ছারামপুর থেকে ঢাকায় ফেরার পথে ছাত্রদল সভাপতি শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক জুয়েলের উপর আড়াইহাজার উপজেলার ছাত্রলীগ আক্রমণ করেছিল, যা নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রেস ব্রিফিংও করা হয়েছিল।
ডিসেম্বরের শুরুতে ড. কামাল, অ্যাডভোকেট ডাবলুসহ কবর জিয়ারত ও মিলাদে যাওয়ার পথে সোনারামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শাহিনের নেতৃত্বে তাদের উপর হামলা হয়। ক্ষমতাসীনদের ইশারায় আবারও ২টি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়। চরশিবপুর গ্রাম ও সদরের অনেককে আসামি করে দিনরাত পুলিশী অত্যাচার চালানো হয়। অভিযুক্তদের জন্য হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন ব্যবস্থা করি। ফেব্রুয়ারী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জজ কোর্টে স্থানীয় আইনজীবীকে সহযোগিতা করতে যাই। সবাই আত্ম সমর্পণ করে জামিন পায়। চরশিবপুর গ্রামের কালাচান মেম্বার আমাকে জড়িয়ে ধরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
দিন গড়িয়ে যায়, আমরা ভুলতে থাকি নয়নকে। শহীদ নয়নের স্ত্রী, শিশু সন্তান আলিফ, মা, বাবা, ছোট ভাই সহ পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করি। প্রবাসী বিএনপির ভাইদের আর্থিক অবদান চির স্মরণীয়, বিশেষ করে আইয়ুবপুর ও সোনারামপুর ইউনিয়ন প্রবাসী বিএনপি'র নেতৃবৃন্দকে। আলিফের নামে ১ লক্ষ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করা হয়েছে। স্ত্রী ও বাবার হাতে কিছু নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে। গত কোরবানির ঈদে আমি স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ তাদেরকে দেখে এসেছি। তাদের প্রতি আমাদের জাতীয়তাবাদী আদর্শিক ভাইদের অনেক দায় রয়েছে, তা এই ২য় শাহাদাত বার্ষিকীতে আবারো স্মরণ করি।
নয়ন নামটি আজ ইতিহাসের অংশ। নয়নের প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে গঠন করা দরকার 'শহীদ নয়ন স্মৃতি সংসদ'। আরো অনেক কিছু করা যায়। ওই এলাকার উন্মুক্ত চরে গড়ে উঠা নতুন বসতির নাম হতে পারে 'নয়নপুর', ঐ গ্রামে বা কবরস্থানের পাশে হতে পারে 'শহীদ নয়ন স্মৃতি মসজিদ' শিবপুর বাজারে হতে পারে 'শহীদ নয়ন স্মৃতি লাইব্রেরী', আয়োজন হতে পারে শহীদ নয়ন স্মৃতি টুর্নামেন্ট, চালু হতে পারে শহীদ নয়ন বৃত্তি, শিবপুর-আইয়ূবপুর ব্রীজের নাম হতে পারে শহীদ নয়ন ব্রীজ, বাঞ্ছারামপুর থানার পশ্চিম পাশে মোল্লা বাড়ির ব্রীজের পূর্ব পাশে হতে পারে শহীদ নয়ন ভাস্কর্য বা ম্যূরাল, এই মোড়ের নাম হতে পারে "শহীদ নয়ন চত্ত্বর" যেখানে নয়নকে গুলি করা হয়েছিল। সর্বোপরি প্রতি বছর ১৯ নভেম্বর আমরা স্থানীয়ভাবে পালন করতে পারি "শহীদ নয়ন দিবস"।
দোয়া করি! শহীদ নয়নের ছেলে "আলিফ" একদিন আইনজীবী হোক! উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করুক! পিতৃহত্যার বিচার করতে পারুক! হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি যুদ্ধে দুঃসাহসিক ভূমিকাসহ ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করুক।
পরিশেষে সরকারের কাছে শহীদ নয়ন হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানাই। নয়ন হত্যার ন্যায়বিচার চাই। নয়ন হত্যার বিচার হলে আদর্শিক ভাইয়েরা মিথ্যা মামলা থেকে খালাস পাবে, তার পরিবার খুশি হবে, ওপারে নয়নের আত্মা শান্তি পাবে। শহীদ নয়ন থাকবে জাতীয়তাবাদীদের নয়নে নয়নে, হৃদয়ের মনিকোঠায়, ছাত্রদলের অনুপ্রেরণায়। প্রতি ফাল্গুনে সে আসবে দিগুন হয়ে, মিছিল করবে বহুগুণে, উড়াবে পতাকা শত শত নয়ন হয়ে!
ধৈর্য সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। শহীদ নয়ন অমর হোক, শহীদ নয়ন জিন্দাবাদ। জাতীয়তাবাদ-জিন্দাবাদ, স্মৃতি সংসদ-জিন্দাবাদ, বাংলাদেশ-জিন্দাবাদ।
লেখক: অ্যাডভোকেট মীর আব্দুল হালিম
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য।
আপনার মতামত লিখুন :