প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা সিলেট, ৩৬০ আউলিয়ার পূণ্যভূমি। সিলেটের মানুষের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার আগ্রহ খুব বেশি। সিলেটীরা দেশে থেকে চাকরি কিংবা ব্যবসা করার চেয়েও বিদেশে চলে যাওয়াকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
বিশেষ করে ইদানিং সিলেটে ২০-৩০ বছর বয়সের তরুণদের সংখ্যা খুব কম। রাস্তা-ঘাটে কিংবা হাটে-বাজারে তরুণ ছেলেদের খুব কম দেখা যায়। এর কারণ সিলেটী তরুনরা কেউ উচ্চ শিক্ষার জন্য স্টুডেন্ট ভিসায় কিংবা কেউ ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় নয়তো স্পাউস ভিসায় অথবা কেয়ার ভিসায় পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে কেউবা যাচ্ছে বিপদজনক সাগরপথে, সবার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কিন্তু এক উন্নত জীবনযাপনের জন্য দেশত্যাগ।
সিলেটী তরুণদের মধ্যে যে কয়েকজনকেই এখন রাস্তা ঘাটে দেখা যায় ব্যাগ কাঁধে ঘুরতে, তাদের কেউ কেউ আইইএলটিএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অথবা ইংরেজি ভাষার কোর্স করছে কিংবা কেউ আবার বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রসেসিং করছে। সবার মনের মধ্যে একটাই আশা যেকোনো মূল্যে ইউরোপ-আমেরিকার কোনো দেশে পাড়ি জমানো। তরুণদের অনেকে নিজের ভিটেমাটি বিক্রি করে হলেও চলে যেতে চায় বিদেশে।
সিলেটীদের মধ্যে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডা ও ফ্রান্স যাওয়ার প্রবণতা বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক পরিমানে লোক কানাডার ভিজিট ভিসার সুযোগে কানাডায় পাড়ি জমাচ্ছে। বিদেশ যেতে যেকোনো ধরনের সুযোগকেই হাতছাড়া করতে চান না সিলেটের লোকেরা। সিলেটিদের ধারণা দেশে থেকে পড়াশোনা করে ঠিকমতো চাকরি পাওয়া যায় না, তাছাড়া উন্নত জীবনযাপনের জন্যই সিলেটিরা চলে যেতে চান উন্নত দেশে!
সিলেটকে দ্বিতীয় লন্ডন বলা হয়। এর কারণ হলো সিলেটিরা বহু আগে থেকে বিলাত যাত্রা করে বিলাতে অভিবাসী হয়েছিল। বিলাতে সিলেটিদের অভিবাসনের ইতিহাস ৩৫০ বছরের। অর্থাৎ শুরুটা হয়েছিল ব্রিটিশ আমল থেকে। এরপর পাকিস্তান আমল, বাংলাদেশ হওয়ার পরও অভিবাসন থেমে থাকেনি। জাহাজে কাজ নিয়ে বিলেত গিয়ে পূর্বতন সিলেটিরা যে ধারার শুরু করেছিলেন পরবর্তী সময়ে তাদের উত্তর পুরুষরা নানা ধরনের ব্যবসা, চাকরি, পড়াশোনা ইত্যাদি কারণে বিলাত গমন করেছেন ও পরে তারা সিলেটে নিজেদের স্বতন্ত্র জায়গা করে নিয়েছেন। ব্রিটিশ অর্থনীতিতে সিলেটিদের ক্যাটারিং স্বীকৃত বিষয়। সব মিলিয়ে বিলাতে সিলেটি ও সিলেটি সমাজ আলাদা আলোচনার দাবি রাখে।
বর্তমানে সিলেটিদের সত্যিকার বৈশ্বিক পরিবার বলা হয়। কারণ তারা ছড়িয়ে আছেন সারা বিশ্বে!
আপনার মতামত লিখুন :