Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

গাইবান্ধায় কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি স্কুলগুলোতে টাকাই মুখ্য বিষয়


দৈনিক পরিবার | শাহিন নুরী অক্টোবর ২১, ২০২৪, ০১:২৪ পিএম গাইবান্ধায় কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি স্কুলগুলোতে টাকাই মুখ্য বিষয়

শিশুরা তাদের পরিবার বাবা-মায়ের সহযোগিতায় প্রথম পড়তে ও লিখতে পারে। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। গাইবান্ধা জেলা শহরসহ প্রত্যেক পাড়া মহল্লায় ও গ্রামেও দেখা মিলছে ব্যাঙ্গের ছাতার মত কিন্ডারগার্ডেন ও বেসরকারি বিদ্যালয়। গাইবান্ধায় যাদের অর্থ আছে তাদের সন্তান রায় শুধু পড়তে পারে কিন্টারগার্ডেন এবং বেসরকারি বিদ্যালয়ে। এমনকি যারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী করেন তাদের সন্তান এবং ছেলেমেয়েদের ভর্তি করার কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি বিদ্যালয়ে।
কিন্ডারগার্ডেন শিশুদের প্রাক-বিদ্যালয় বা বিদ্যালয়-পূর্ব উপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ। এ শব্দটি জার্মান, যার অর্থ হচ্ছে শিশুদের বাগান। 'কিন্ডারগার্টেন' শব্দটি বিখ্যাত জার্মান শিশু-শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব ফ্রেডরিখ ফ্রোয়েবল কর্তৃক সৃষ্ট হয়েছে। তিনি ১৮৩৭ সালে ব্যাড ব্ল্যাংকেনবার্গে শিশুদেরকে বাড়ী থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত গমন এবং খেলা ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের ধারণাকে কেন্দ্র করে এ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। 
তার উদ্দেশ্য ছিল, শিশুরা উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষনের মাধ্যমে প্রতিপালিত হবে এবং 'শিশুদের বাগান' হিসেবে কিন্ডারগার্টেনে বাগিচায় রোপিত চারাগাছের ন্যায় পরিচর্যা পাবে। বিদ্যালয় হিসেবে কিন্ডারগার্টেনে সাধারণতঃ কোমলমতি শিক্ষার্থীর বয়সসীমা ৩ থেকে ৫ বছরের হয়ে থাকে। তাদের মনের মাঝে পারিবারিক পরিবেশই সর্বদা বিরাজমান থাকে। অনুকূল পরিবেশই তাদের শিক্ষাজীবনের মূল ভিত্তি। 
শিশুরা কিন্ডারগার্টেনে উপস্থিত হয়ে পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করাসহ একে-অপরের সাথে খেলাধুলা করবে এবং অন্যের সাথে স্বাচ্ছন্দ্যে উপযুক্ত কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবে।
শ্রেণীকক্ষে একজন শিক্ষক বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরণ সঙ্গে রাখবেন। অতঃপর উপকরণগুলোর বাস্তবমূখী কলা-কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে শিশুর মনোযোগ আকর্ষণ করবেন। উপযুক্ত ভাষা ও শব্দ ভাণ্ডার প্রয়োগের মাধ্যমে পড়বেন কিংবা শিক্ষার্থীকে পড়াতে উদ্বুদ্ধ করবেন। গণিত, বিজ্ঞানসহ সঙ্গীত, কলা, সামাজিক আচার-আচরণ শেখানোও তার প্রধান দায়িত্ব।
১৮১৬ সালে স্কটল্যান্ডে রবার্ট ওয়েন নামীয় একজন দার্শনিক ও শিশু শিক্ষাবিদ নিউ ল্যানার্কে 'ইনফ্যান্ট স্কুল' বা শিশু বিদ্যালয় খোলেন। আরেকটি শিশু বিদ্যালয় স্যামুয়েল ওয়াইল্ডারস্পিন কর্তৃক লন্ডনে ১৮১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
কাউন্টেস থেরেসা ব্রুন্সভিক (১৭৭৫-১৮৬১) উপরের উদাহরণগুলোয় আকৃষ্ট হয়ে বুদাপেস্ট বা বুদা'য় নিজ বাড়ীতে ২৭ মে, ১৮২৮ সালে 'এঙ্গিয়েলকার্ট' বা পরীদের বাগান খোলেন। এ ধারণাটি তৎকালীন হাঙ্গেরীয়ান রাজতন্ত্রের মধ্যবিত্ত সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং অনুসরণ করে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ দেশে বিদ্যালয়-পূর্ব শিক্ষা পদ্ধতিতে কিন্ডারগার্টেনকে শিশুর শৈশবকালীন শিক্ষার অংশ হিসেবে নেয়া হয়েছে।বিদ্যালয়-পূর্ব শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর মানসিক গঠন ও উন্নয়ন সংক্রান্ত মাপকাঠি দেশে-দেশে ভিন্নতা রয়েছে। 
সাধারণতঃ বিদ্যালয়-পূর্ব শিক্ষাপদ্ধতিতে নিম্নলিখিত বিষয়াদির মাধ্যমে শিশুর মানসিক গঠন ও মেধা বিকাশকল্পে নজর দেয়া হয়। 
ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং আবেগিক উন্নয়ন ভাষা, কথা বলায় দক্ষতা এবং শোনার মাধ্যমে পারস্পরিক যোগাযোগ বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ ও বোঝার ক্ষমতা অর্জন। সৃষ্টিশীলতা এবং সৌন্দর্য্যবোধে উন্নয়ন শিক্ষামূলক সফটওয়্যার গাণিতিক সচেতনতা। শারিরিক উন্নয়ন স্বাস্থ্য সচেতনতা খেলাধুলা দলগতভাবে কাজ করা আত্মরক্ষামূলক কলাকৌশল ও দক্ষতা অর্জন সামাজিক কলাকৌশল রপ্তকরণ। বৈজ্ঞানিক চিন্তা-চেতনাবোধ জাগ্রতকরণ। 
সৃষ্টিশীল কলাজ্ঞান সাহিত্য চর্চা প্রাথমিকভাবে বক্তৃতা প্রদানে সক্ষমতা প্রাক-
সাধারণতঃ শিশুরা তাদের অধিকাংশ সময় বাড়ীতেই অতিবাহিত করে। কিন্ডারগার্টেনে প্রবেশের পর পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের রক্ষণাবেক্ষন, প্রতিপালন, নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি যাবতীয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেন। সাহায্য-সহযোগিতার দ্বার প্রশস্ত করে পরিবেশের সাথে শিশুকে খাঁপ খাওয়ানোর মাধ্যমে পিতা-মাতা বা অভিভাবককে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে রক্ষা করার আপ্রাণ প্রয়াস চালানো কথা কর্তৃপক্ষের। খেলাধুলা এবং পারস্পরিক ক্রিয়া বা যোগাযোগের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সমজাতীয় শিশুদের মিলনক্ষেত্র হিসেবে এটি সুন্দর সুযোগ হতে পারে। 
নাম প্রকাশে কয়েকজন ইচ্ছুক অভিভাবক জানান, যে আশা ভরসা নিয়ে পরবর্তী প্রজন্মে শিশুদের আমরা কিন্টার গার্ডেন ও বেসরকারি বিদ্যালয়ে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে পড়ালেখা করাচ্ছি শুধু পুঁথিগত বিদ্যা ছাড়া আর অন্য কিছু অর্জন করছে না। কিন্টারগার্টেন ও বেসরকারি বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে তারা আসক্ত হচ্ছে নেশায়, আসক্ত হচ্ছে মোবাইলে  গেম খেলতে টিকটক করতে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। গাইবান্ধায় কতগুলো কিন্টারগার্ডেন ও বেসরকারি বিদ্যালয় আছে বলতে পারেনা কেউই। অথচ কিন্ডারগার্ডেন ও বেসরকারি স্কুলগুলো অর্থ উপার্জনই তাদের মূল লক্ষ্য। কেউ টেক্স প্রদান করে আবার অনেকেই ট্যাক্স ফাকি দিয়ে নামে মাত্র শিক্ষকদের বেতন দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে করতেছেন বাড়ি গাড়িসহ অর্থ সম্পদ। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে নৈতিক মূল্যবোধ সহ প্রকৃত শিক্ষা থেকে। কবে মিলবে এর সমাধান কেউ বলতে পারেনা। 

Side banner