২০২৪ সালে ‘জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস’ এর প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে “জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক ব্যবসা থেকে সরকারের অংশীদারিত্ব প্রত্যাহার করা হোক”। ২০১১ সাল থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত সংগঠনগুলো এ দিবসটি পালন করে আসছে। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম শুরু হয়েছে আশির দশকে।
ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) বাংলাদেশ সরকার ১৬ জুন ২০০৩ ইং তারিখে স্বাক্ষর করে যার প্রেক্ষিতে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন, ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় ও বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫’ প্রনয়ন করে এবং ১০ মে, ২০০৪ ইং তারিখে অনুস্বাক্ষর করেছে। ২০১৩ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাস করেছে এবং ২০১৫ সালে এ আইনের বিধিমালা পাস করেছে।
কিন্তু আইন প্রণয়নের পর বাস্তবায়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে এর দুর্বল দিকগুলো ধরা পড়ে তাই সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও সংস্থায় দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত আলোচনা করে সংশোধনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে দেখা গেছে এই আইনে এফসিটিসির অনেকগুলো শর্ত পুরোপুরি পালিত হয়নি, তাই এফসিটিসির আলোকে সংশোধন করে আইনটি আরও কার্যকর করা সম্ভব।
আইন প্রণয়নের প্রায় দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। যার কারণে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম এখনও কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হয়নি আর পিলতার পেছেনে দায়ী হচ্ছে তামাক কোম্পানীতে সরকারের শেয়ার। উল্লেখ্য ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) তে বাংলাদেশ সরকারের শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ অংশীদারিত্ব বা শেয়ার রয়েছে। সামান্য শেয়ারের সুযোগ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা বিএটির বোর্ড অব ডিরেক্টরিতে যুক্ত থাকছেন। জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন, পরিবেশ ও অর্থনীতি খাতে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব ও কোম্পানির আগ্রাসী কার্যক্রম বন্ধে অনতিবিলম্বে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ বন্ধ করা জরুরী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়- বিশ্বের প্রায় ৮৭ লাখ মানুষ সরাসরি তামাক সেবনে মৃত্যুবরণ করে। ‘ইকোনমিক কস্ট অব টোব্যাকো ইউস ইন বাংলাদেশ: আ হেলথ অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণের কারণে বছরে দেশে ১ লাখ ২৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। শারীরিকভাবে পঙ্গু হয় প্রায় তিন লাখ মানুষ। গবেষণাটি করা হয় ২০১৭ ও ২০১৮ সালে। এই গবেষণায় যুক্ত ছিল আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ ও বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি।
বাংলাদেশে বর্তমানে তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে। তাদের অধিকাংশই দরিদ্র ও নারী। কিন্তু তামাক খাতের মোট রাজস্বের মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ আসে ধোঁয়াবিহীন তামাক থেকে। অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৪৮ শতাংশ তামাক ব্যবহার করে। অতি উচ্চবিত্তের মধ্যে এ হার ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারের তামাক খাত থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। আর তামাক ব্যবহারের কারণে জনগণের চিকিৎসা ব্যয় ও উৎপাদনশীলতা কমে সরকারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার।
গবেষনায় পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, তামাক ব্যবহারের কারণে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে প্রায় ১ লক্ষ ২৬ হাজার লোকের মৃত্যু ঘটেছে, যা সে বছরের মোট মৃত্যুর ১৩.৫ শতাংশ। একই বছরে প্রায় ১৫ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত রোগে ভুগছিলেন এবং প্রায় ৬১ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানের সংস্পর্শে আসার কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তামাক ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্যখাতে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিলো প্রায় ৮ হাজার ৪ শ কোটি টাকা, যার ৭৬ শতাংশের খরচ মিটিয়েছে তামাক ব্যবহারকারীর পরিবার আর ২৪ শতাংশ খরচ এসেছে জনস্বাস্থ্য খাতের বাজেট থেকে, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে সরকারী ব্যয়ের প্রায় ৯ শতাংশ।
এছাড়াও, বিভিন্ন তামাক ব্যবহারজনিত অসুস্থতা ও এর কারণে ঘটে যাওয়া অকালমৃত্যুর ফলে বার্ষিক উৎপাদনশীলতা হ্রাসের পরিমাণ ছিল প্রায় ২২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ফলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা (৩.৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), যা সে বছরের মোট জিডিপির ১.৪ শতাংশের সমান।
২০১৮ সালের দামের হিসেবে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপিতে তামাক খাতের মোট অবদান ছিলো ২২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা (রহ ঃবৎসং ড়ভ যড়ঁংবযড়ষফ ভরহধষ পড়হংঁসঢ়ঃরড়হ বীঢ়বহফরঃঁৎব, ঢ়ৎরাধঃব ধহফ ঢ়ঁনষরপ ফড়সবংঃরপ রহাবংঃসবহঃ ধহফ হবঃ বীঢ়ড়ৎঃ-পণ্য বিক্রি, সরকারি বেসরকারি বিনিয়োগ ও রপ্তানী অনুসারে) । যা এই খাতে অর্থনৈতিক ব্যয়, ৩০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার চেয়ে ৭ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা কম। অর্থাৎ, তামাক বাংলাদেশের ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ।
তামাক কোম্পানিগুলো নীতিতে প্রভাব বিস্তারের জন্য যেসব কৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহায়ক কৌশল সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কার্যক্রম (সিএসআর)। সিএসআর এর আড়ালে কোম্পানিগুলো সরকারের কাছে নানাভাবে নিজেদের অবস্থানকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে তামাক ব্যবসা সম্প্রসারনে সম্পৃক্ত করতে চায়। করোনা মহামারি চলাকালে এধরনের বহু দৃষ্টান্ত আমরা দেখেছি। কোম্পানিতে সরকারের প্রতিনিধিত্ব থাকার করোনাকালীন সময়ে সমস্ত উৎপাদনমুখী সেক্টরগুলো বন্ধ থাকলেও শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ অনুমোদন নিয়ে কঠোর লকডাউনের সময়েও তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদন ও বিপণন অব্যহত রেখেছিল। একইসাথে আইন লঙ্ঘণ করে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণাও চালিয়েছে তামাক কোম্পানিগুলো। করোনাকালীন সময়ে প্রেরণা ফাউন্ডেশন নামক প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে সরকারি অফিসসমূহে হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাস্ক, পিপি বিতরণ করতে দেখা গেছে। তামাক ব্যবহারকারীদের করোনায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় বেশি হলেও সে বিষয়টি নানাভাবে আড়াল করার চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়েছে। তৎকালীন সময়ে তামাক কোম্পানিগুলো মহামারির সংকটের সুযোগ নিয়ে সিএসআর এর নামে আগ্রাসীভাবে ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। নামমাত্র কিছু লোককে ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশনে সহায়তা, পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রদানসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সান্নিধ্যে এসে ভবিষ্যতে তামাক কোম্পানিগুলো তাদের হস্তক্ষেপের পথ সুগম করার চেষ্টা করেছে। বিভিন্ন স্থানে “বনায়ন” কর্মসূচীর নামে বৃক্ষরোপণ, পানির কল স্থাপনের নামে “প্রবাহ”র মত প্রতারণামূলক সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সাংবিধানিকভাবে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের জনগণের স্বাস্থ্য উন্নয়নে সরকার সর্বদা বদ্ধপরিকর। তামাক কোম্পানিতে সামান্য সরকারি শেয়ার থাকায় লাভবান হচ্ছে কোম্পানি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার ও জনগণ। ‘তামাক’ জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর পণ্য, এটি সর্বজনস্বীকৃত। গবেষণায় দেখা যায়, সিগারেটে ৭০০০ এর অধিক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। যা ক্যান্সার, হৃদ্ রোগ, স্ট্রোক, শ্বাসতন্ত্র ও ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন: হাঁপানি, এ্যাজমা, সিওপিডিসহ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের জন্য সরাসরি দায়ী। এছাড়া বিড়ি, হুক্কা এবং ধোঁয়াবিহীন বিভিন্ন তামাকজাত দ্রব্য সমানভাবে জনস্বাস্থ্যের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করে। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবেন। স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
তামাক কোম্পানির স্বার্থ মুনাফা অর্জন এবং সরকারের স্বার্থ জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন। পারস্পারিক সাংর্ঘষিক স্বার্থ নিয়ে স্বাস্থ্যহানিকর তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে সরকারের শেয়ার কোনভাবেই যৌক্তিক নয়। এফসিটিসি এর আর্টিক্যাল ৫.৩ এর গাইডলাইন ৭.২ এ সুপারিশ করা হয়েছে চুক্তিভূক্ত দেশসমূহকে তামাক ব্যবসায় বিনিয়োগ না করার জন্য। সমগ্র বিশ্বের জন্য তামাককে উন্নয়নে অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) এ দারিদ্র্য বিমোচন, অসংক্রামক রোগের কারণে মৃত্যুর হার এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা এবং অসুস্থতার কারণে সৃষ্ট অপুষ্টির কারণে আর্থিক ক্ষতির বিপরীতে ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ নিশ্চিত করা- এর পাশাপশি তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য সরাসরি জড়িত। তামাক ব্যবহার বন্ধ করা গেলে তামাকজনিত কারণে মৃত্যু ও রোগের পরিমাণ এবং পরোক্ষ ধূমপানজনিত ক্ষতির হার ব্যাপকহারে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে, একইসাথে তা ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্যগুলো অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দেশের তরুণ তরুণীরা তামাক কোম্পানিগুলোর মূল টার্গেট। আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৯% তরুণ। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ কর্মক্ষম জনসংখ্যা হবে ৭০%। সুস্থ-সবল জনশক্তি ও নির্মল পরিবেশ জাতীয় উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আর এজন্যই আগামী প্রজন্মকে সুস্থ সবল হিসেবে গড়ে তুলতে ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তামাক নিয়ন্ত্রণ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। অতএব তামাক মুক্ত দেশ গড়তে এই ব্যবসায় সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার করা এখন সময়ের দাবি।
তামাক স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করছে সেই ‘তামাক’ ব্যবসায় অংশীদারিত্ব এবং কোম্পানিতে সরকারের প্রতিনিধি থাকায় জনস্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিগত দিনে আমরা দেখতে পেয়েছি তামাক কোম্পানিগুলোর নগ্ন হস্তক্ষেপের ফলে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক আইন ও নীতি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত এবং অপেক্ষাকৃত দূর্বল হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায় বিগত সময়ে দেশে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা প্রদাণ করে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ এর বিধিমালায় তামাক কোম্পানির পক্ষে বিধান যুক্ত করা হয়। তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানের নির্দিষ্ট সময় ১৮ মাস দীঘায়ির্ত করা হয় এবং আইনে উপরিভাগে ৫০% জায়গা জুড়ে স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মূদ্রণ করার উল্লেখ থাকলেও তা নিম্নাংশে আসে। তামাক কোম্পানির নিজস্ব তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে বিগত দিনে কোম্পানিগুলো সরকারকে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদানের মাধ্যমে আইন প্রণয়ন, আইন সংশোধন, তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি, তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান এমনকি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন ধরনের কূটকৌশল অবলম্বন করেছে। নীতিতে প্রভাব বিস্তার, রাজস্ব ফাঁকি, অনৈতিক সুবিধা আদায় এবং বিভিন্নভাবে সরকারকে চাপ প্রয়োগের ঘটনাও নতুন নয়। ২০১৭ সালে বিএটি’বি ১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকায় কর ফাঁকির ঘটনা বে-আইনী প্রক্রিয়ায় সমঝোতা করতে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার অর্থমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন।
বিভিন্ন কোম্পানিতে বাংলাদেশ সরকারের শেয়ার রয়েছে। ইউনিলিভার বাংলাদেশ, নোভারটিস, সিনজেনটা এর মতো বহুজাতিক কোম্পানিতে বিএটিবি‘র চাইতে অনেক বেশি শেয়ার থাকলেও তাদের পরিচালনা পর্ষদে বিএটিবি‘র মতো এত বেশি সংখ্যক সরকারি প্রতিনিধি সম্পৃক্ত নেই। তামাক খাতে সরকারের আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির গবেষণায় দেখা গেছে তামাকজনিত রোগে চিকিৎসা ব্যয় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, তার বিপরীতে রাজস্ব আয় ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এ রকম জনস্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর ও অলাভজনক পণ্য উৎপাদনকারী খাতে সরকারের অংশীদারিত্ব বা শেয়ার রাখা সর্ম্পূণ অযৌক্তিক।
এফসিটিসি অনুসারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে নীতি সুরক্ষায় দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার বৈশি^কভাবেও বিষয়টি আমলে নেয়া হচ্ছে। বিশে^র বিভিন্ন দেশ তামাক কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছে। ইতোমধ্যে সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরি, নিউ সাউথ ওয়েলস এবং সাউথ অস্ট্রেলিয়া, সেইসাথে মেলবোর্ন সিটি তামাক শিল্প থেকে তাদের পাবলিক বিনিয়োগ সরিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশে নতুন সরকার এসেছে। জন কল্যানে তারা নানা বিষয় সংস্কার করছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে তামাক কোম্পানিতে বাংলাদেশ সরকারের যে অংশীদারিত্ব রয়েছে তা প্রত্যাহারের পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণে কাংখিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এখন থেকেই সুনিদিষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
লেখক: বিল্লাল হোসেন জুয়েল
শিক্ষক, গবেষক ও সাংবাদিক
আপনার মতামত লিখুন :