Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

দৌলতপুরে হিসনা নদী দখল মুক্ত করতে চাই


দৈনিক পরিবার | মো. শিমুল হক সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪, ০৭:০৭ পিএম দৌলতপুরে হিসনা নদী দখল মুক্ত করতে চাই

কুষ্টিয়া দৌলতপুর। নদ-নদী আমাদের বৈচিত্র্যময় সম্পদের এক অফুরান ভাণ্ডার। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। অসংখ্য ছোট বড় নদ-নদী দেশের চিরায়ত সৌন্দর্যকে দিয়েছে রূপময়তা। নদী হলো বাংলাদেশের প্রাণ। বাংলাদেশের প্রাণের স্পন্দন ধরে রাখতে হলে নদীগুলোকে রক্ষা করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে বেশির ভাগ নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়। কিছুসংখ্যক পরিবেশ ও সভ্যতাবিরোধী মানুষের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেশের নদীগুলো গ্রাস করছে। তারা নদী গ্রাস করেই ক্ষান্ত হচ্ছে এমন না। নদীর মধ্যে বর্জ্য ফেলে মানুষের জীবনকেই হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
হিসনা নদী সম্পর্কে
হিসনা নদীটি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন এলাকায় প্রবহমান পদ্মা নদী হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। পদ্মা থেকে উৎপত্তি হিসনা নদী দৌলতপুর উপজেলা হয়ে ভেড়ামারার বুক দিয়ে বয়ে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার মাথাভাঙ্গা নদীতে পতিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। হিসনা নদীর মোট দৈর্ঘ্যের ২৭ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে দৌলতপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ ম ল জানান, আমরা দেখেছি এক সময় হিসনা নদী ছিল খুবই প্রাণবন্ত। নদীতে নিয়মিত নৌকা চলত। নৌকাযোগে লোকজন চলাচল করত।
এক সময় যে নদী দিয়ে চলত পালতোলা নৌকাসহ বড় মালবাহী কার্গো জাহাজ। সে নদী এখন পরিণত হয়েছে মরা খালে।
বর্তমানে হিসনা নদীতে বিরাজমান সমস্যা গুলো...
১। বিভিন্ন এলাকায় মাছ চাষের জন্য লিজ নিয়ে বাঁধ তৈরির মাধ্যমে নদী দখল করে নদীটিকে পুকুরে পরিণত করা হয়েছে।
২। বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ দিয়ে পরিবর্তন করা হয়েছে নদীর গতিপথও।
৩। অনেকে নদীর বুকে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করছেন।
৪। শিল্প কারখানার বর্জ্য ফেলা হয় নদীতে।
৫। বাজার ও পশু হাটের বর্জ্য ফেলা হয় নদীতে দুর্গন্ধ অতিষ্ঠ হয় নদী পাড়ের মানুষ।
৬। অনেকে নদী ভরাট করে সেখানে গড়ে তুলছেন বসত বাড়ি।
দৌলতপুরে যেসব জায়গায় বাদ ও বানা দিয়ে নদী দখল করা হয়েছে।
১। মহিষকুন্ডি বাধবাজার।
২। মথুরাপুর বাজার।
৩। হোসেনাবাদ হিসনার পাড়।
৪। তারাগুনিয়া বাজার।
৫। দৌলতপুর থানার মোড়ের পাশে।
৬। কল্যানপুর জয়রামপুর।
৭। কল্যানপুর চরদিড়ার।
৮। আল্লার দর্গা শ্মশানঘাট।
৯। ইদ্রিস আলী বিশ্বাস ইসলামিয়া মাদ্রাসার পিছনে।
১০। আল্লার দর্গা বাজার ।
১১। আল্লার দর্গা মিরপুর।
১২। আল্লার দর্গা পাটোয়াকান্দি।
১৩। আল্লার দর্গা তাজপুর।
১৪। ভেড়ামারা নলুয়া।
১৬। ভেড়ামারা ধরমপুর।
১৭। ভেড়ামারা কাঠের পুল।
হিসনা নদী দখলমুক্ত হলে কি কি উপকার হবে।
১। হিসনা নদীকে খনন করে নদীর গতিপথ ফেরানো হোক।
২। নদীর দুই পাড়ে পরিকল্পিতভাবে সবুজ বনায়ন করা।
৩। বর্ষা মৌসুমের পানি সংরক্ষণ করে শুকনো মৌসুমী ব্যবহার করা।
৪। নদীর পানি কৃষিকাজে ব্যবহার করা  বাড়বে ফসলের উৎপাদন।
৫। নদীর পাড়ে বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন।
৬। যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্বিতীয় একটা দিক উন্মোচন হবে এবং রাস্তাঘাটের ওপর চাপ কম পড়বে পড়বে।
৬। নদী থাকবে উন্মুক্ত দৌলতপুর উপজেলার সবাই নদী ব্যবহার করবে।
৭। প্রতিবছর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে পোনা মাছ ছাড়ার ব্যবস্থা করা হবে।  
হিসনা নদী দখল মুক্ত করতে সরকারের পদক্ষেপ
১। ২০২২ সালে মহিষকুন্ডি থেকে তারাগুনিয়া ফারাকপুর পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার হিসনা নদী প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা হয়।
২। হিসনা নদী খনন কাজের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলেই কাজ শুরু করা হবে। ৪২ কিলোমিটার হিসনা নদী খনন করা হবে এবং তাতে করে হিসনা নদী পুনঃ জীবন ফিরে পাবে।
পরবর্তীতে যেসব পদক্ষেপ নদী রক্ষার জন্য গ্রহণ করা জরুরী
১। নদী ধ্বংসের কারণগুলো শনাক্ত করা জরুরি।
২। নদীর নাব্যতা রক্ষার জন্য ড্রেজিং এবং পুনঃখনন জরুরি।
 ৩। খাল খনন কর্মসূচি চালু করা যেতে পারে।
৪। মজে যাওয়া খাল, ছোট ছোট শাখা নদী খনন করা হলে  দেশের প্রধান নদী প্রণালীতে এর প্রভাব পড়বে নিঃসন্দেহে।
৫। শুকিয়ে যাওয়া নদী এবং নদীর পাড় দখল করা থেকে মুক্ত করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৬। বর্জ্য পদার্থ নদীতে ফেলা বন্ধ করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৭। নদীর তীরে সুইচ গেট এবং নদীর সাথে সংযুক্ত খাল খনন করা যেতে পারে।
 ৮। নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা দেখা দিলে মানুষকে সচেতন করার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়।
৯। বর্ষা মওসুমে নদীতে যে অতিরিক্ত পানি আসে সে পানি কিভাবে নদী তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষের কাজে লাগানো যায় দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার মাধ্যমে সে বিষয়ে জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
১০। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) ও পরিবেশ বিধিমালা ১৯৯৭-এর কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে।

Side banner