Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

ক্রিকেট বোর্ডকে গিলে খেয়েছে ডাক্তার ইসমাইল হায়দার মল্লিক গং


দৈনিক পরিবার | ক্রীড়া প্রতিবেদক আগস্ট ২২, ২০২৪, ০৯:১২ পিএম ক্রিকেট বোর্ডকে গিলে খেয়েছে ডাক্তার ইসমাইল হায়দার মল্লিক গং

ডাক্তার মো. ইসমাইল হায়দার মল্লিক বেক্সিমকো ফার্মার একজন কর্মচারি। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি নাজমুল হাছান পাপনের ব্যক্তিগত লোক হিসেবে পরিচিত। তার মাধ্যমেই পাপন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নিয়ন্ত্রিত করেছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে যা আয় হতো তার একটি অংশ নিজে রেখে বাকি সবই পাপনকে দেয়া হতো।
সাবেক বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কর্মচারী হওয়ার সুবাদে হায়দার মল্লিক ছোট বড় সবার সাথে খুবই খারাপ ব্যবহার করতেন। এমনকি খেলোয়ারদের সাথেও বাজে আচরণ করতেন তিনি। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হতো না।
অভিযোগ রয়েছে মাহাবুব আনাম, ডাঃ ইসমাইল হায়দার মল্লিক, আকরাম খান, আ জ ম নাসির উদ্দিন, শেখ সোহেল, খালেদ মাহমুদ সুজন, নাজমুল হাসান পাপন ও হিসাবরক্ষক মান্নান মিলেই সিন্ডিকেট তৈরি করেছিল। বোর্ড সভাপতি ডাঃ ইসমাইল হায়দার মল্লিককে দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (৩২টি) ঢাকার সবগুলো ক্লাব নিয়ন্ত্রিত করতেন। ক্রিকেট বোর্ডের এমন কোন শাখা নেই যা থেকে মল্লিক টাকা তুলেনি। বিসিবির হিসাবরক্ষক মান্নান ভূইয়া মল্লিক গংকে অবৈধ টাকা তুলতে সহযোগিতা করেছিল। বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার তদন্ত করলে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।
মল্লিক এই ক্রিকেট বোর্ড এর চাঁদার টাকায় মহাখালি ডিওএইচ, লেক রোডে ডোম-ইনো, রিয়েল এষ্টেটের কাছ থেকে ৫ হাজার স্কয়ার ফিটের টপ ফ্লোরে এপার্টমেন্ট কিনেছে, যার মূল্য প্রায় ২৫-৩০ কোটি টাকা। ধানমন্ডির এপার্টমেন্ট ভাড়া দিয়ে মহাখালি ডিওএইচ বাসায় থাকত (তার পরিবার থাকে) কিন্তু বর্তমানে সে পাপনের সাথে দুবাইয়ে পালিয়ে আছে বলে একটি সূত্র থেকে জানা যায়। সেখানে রেসিডেন্ট ভিসা নিয়েছে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিযোগ করেছে বলেও একটি সূত্র থেকে জানা যায়। বিসিবির অর্থ কেলেংকারী খতিয়ে দেখলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। একইসাথে ডা. ইসমাইল হায়দার মল্লিক ও তার সিন্ডিকেটের সব অপকর্ম দৃশ্যমান হবে।
বিসিবির আরেক পরিচালক হলেন শেখ সোহেল। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপন চাচাত ভাই। তার নামে নানা অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মার্কেটিং এবং কর্মাশিয়াল কমিটি এবং বিপিএল গভার্নিং কাউন্সিল উভয় কমিটির চেয়ারপারসন এবং ডা. ইসমাইল হায়দার মল্লিকও উভয় কমিটির ভাইস চেয়ারপারসন। গুরুত্বপূর্ণ এই দুই কমিটি ছাড়াও ইসমাইল হায়দার মল্লিক বিসিবির ফাইনান্স কমিটির চেয়ারপারসন ছিলেন। খেলার টিকেট প্রিন্টিং, বিজ্ঞাপন সংগ্রহ, লোকাল ক্রিকেট ক্লাবের জন্য চাঁদা তোলা, যত সব টাকার খেলা এমন কি বিসিবির হেড কোচ হাতুরাসিংহ নিয়োগ থেকে ঘুষ বাণিজ্য ও হাতুরাসিংকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী বেতন দেওয়া হয়। প্রতি মাসে হেড কোচ হাতুরাসিংহ ও অন্য শ্রীলঙ্কান কোচ এর বেতন থেকে কমিশন নিয়েছে মল্লিক গং। দুই শ্রীলঙ্কান কোচকে বিদায় দেওয়ার পূর্বে জিজ্ঞাসাবাদ করে জবানবন্দি রেকর্র্ড করে নেয়া প্রয়োজন এবং মল্লিক ও তার গ্রুপ দুবাই ভিত্তিক ইলিগেল ক্রিকেট ব্যাটিং সাইট চালিয়ে প্রচুর টাকা বানিয়েছে। শেখ সোহেলকে সামনে রেখে ডা. ইসমাইল হায়দার মল্লিক কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
ডা. ইসমাইল হায়দার মল্লিক বোর্ড সভাপতির ছত্রছায়ায় পুরো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নিয়ন্ত্রিত করেছিলেন। তখন তার ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারেনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দারোয়ান থেকে ক্রিকেট বোর্ডের সিইও নাজিম চৌধুরী সুজনও কথা বলতে পারেনি। সঠিক তদন্ত করে এই সুবিধাবাদি ডা. ইসমাইল হায়দার মল্লিককে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান অনেকে।
বিসিবির আরেক বোর্ড পরিচালক মাহাবুব আনাম। বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে আছেন তিনি। ডা. ইসমাইল হায়দার মল্লিক মাহাবুব আনাম এর কাছ থেকে প্রচুর চাঁদা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। মাহাবুব আনাম বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গ্রাউন্ডস এর চেয়ারম্যান। তার অধিনে পূর্বাচলে শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম হওয়ার কথা ছিল। মাহাবুব আনাম, ডা. ইসমাইল হায়দার মল্লিক,  আ জ ম নাসির উদ্দিন, নাজমুল হাসান পাপন একই সিন্ডিকেটভুক্ত। পূর্বাচলে শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম এর স্থপতি কনসালটেন্সির পরামর্শদাতা। পপুলারস হোল্ডিং ইন্টারন্যাশনাল ব্রিসবন অস্ট্রেলিয়াকে ১২০ কোটি টাকার মাধ্যমে কাজ পাইয়ে দেয়। ওই টাকা থেকে সিন্ডিকেট চক্র ২০ কোটি টাকা কমিশন পেয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
মাহাবুব আনামের বিরুদ্ধে দুদকে মামলাও হয়েছে। দেশত্যাগ করাও নিষেধ ছিল। মল্লিক টাকা খেয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান এর সাথে আঁতাত করে দুদকের মামলা থেকে রেহাই দিয়েছে। মাহবুব আনাম সবসময় সরকারি দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন।
বিসিবির আরেক বোর্ড ডাইরেক্টর স্বপন চৌধুরী। তার বাড়ি পাবনা। সেখানে তিনি গরুর খামার দিয়েছেন। প্রতি বছর ঈদে ফ্রি কুরবানীর গরু দেয় মল্লিক ও পাপনকে। স্বপন চৌধুরীর কাছ থেকে প্রচুর টাকা চাদাঁ নেয় মল্লিক গং তাকে বিসিবির বোর্ডে রাখার জন্য।  
বিসিবির আরেক বোর্ড পরিচালক আকরাম খান। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে প্রচুর টাকা ইনকাম করেন তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রামে এলইডি ষ্ট্রিট লাইট এর কাজ করেছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার। ডা. ইসমাইল হায়দার মল্লিক ও আকরাম খাঁন লাইটিং ব্যবসায় জড়িত ছিলেন।  
ডা. ইসমাইল হায়দার মল্লিকের সহযোগী বেক্সিমকোর আজিজুর রহমান, হাছান ও তার দুই বন্ধু জিকরুল আকাশ এবং ওমর হোসেন রতন। তাদেরকে দিয়ে সব ক্লাব বাণিজ্য চালাতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আজিজ ও হাছান উভয়ে বেক্সিমকো ফার্মায় কর্মরত কিন্তু মল্লিক ও পাপনের জন্য বিসিবিতে ক্লাব বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকতেন। তারা অবৈধভাবে গাড়ি বাড়ির মালিক হয়েছেন।
বেক্সিমকো ফার্মায় ডা. ইসমাইল হায়দার মল্লিক এর একক আধিপত্য। তার ভয়ে কেউ টু শব্দটি করতে পারে না। এই ক্ষমতার পিছনে রয়েছেন নাজমুল হাছান পাপন। এই সুবাদে ডা. ইসমাইল হায়দার মল্লিক বেক্সিমকো ফার্মা থেকে অনিয়ম করে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নাজমুল হাছান পাপনের আস্থাভাজন হওয়াতে বেক্সিমকো ফার্মায় পরপর প্রমোশন দিয়ে মল্লিককে নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এদের হাত থেকে বেক্সিমকো ফার্মাও রেহাই পায়নি। বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার এসব ব্যক্তিদের ব্যাপারে সঠিক তদন্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনবে এমনটাই আশা করছেন ক্রিকেট অঙ্গনের মানুষ সহ দেশবাসী।  

Side banner