চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসণে সবগুলো খাল খনন করে জলপ্রবাহ নিশ্চিত করতে খাল খনন কর্মসূচি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্প সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিংয়ের কারণে এটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের হাতে চলে যায়। বর্তমানে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য ১৪ হাজার কোটি টাকার ৪টি প্রকল্প চলছে। সিডিএ’র প্রকল্পে আনা হয়েছে মাত্র ৩৬টি। বাকি ২১টি খালের কী হবে? খালগুলো উদ্ধার না হলে জলাবদ্ধতা আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সল্টগোলা ক্রসিং ধোপপুলস্থ তৈয়বিয়া মাদ্রাসার পাশে ৩৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে এবং বন্দর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজী হানিফ সওদাগরের সার্বিক সহযোগিতায় আয়োজিত খাল খনন কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও বন্দর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজী মো. হানিফ সওদাগরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
এসময় মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ৩৮ নং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড অফিস প্রাঙ্গণে পরিছন্ন কর্মীদের হাজিরা যাচাই করেন। পরে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে খালখনন কার্যক্রমে অংশ নেন।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে মেয়র বলেন, এই যে এক একটা অনিয়ম কিন্তু আওয়ামী লীগের সময় থেকে শুরু হয়েছে। ক্ষমতায় থেকে তারা জনগণের জন্য কোনো উন্নয়নের কাজ করেনি। এখানে রাস্তাঘাটের কোনো উন্নয়ন তারা করেনি। খাল খনন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেনি। জলাবদ্ধতার মূল সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ ছিল না। খাল খনন কর্মসূচি বাস্তবায়ন না করার ফলেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি জনগণের জন্য কাজ করে, আর আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের টাকার লুটপাট করে। এই এলাকায় অনেক উন্নয়ন হতে পারতো। কিন্তু আমরা দেখেছি, বিএনপি ক্ষমতায় না থাকার কারণে এখানে লুটপাট হয়েছে। ভোট ডাকাতির নির্বাচনে গদি দখল করা অনির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলররা এক একজন ডাকাতের সর্দার ছিল। তারা এখানে উন্নয়ন করেনি। উন্নয়নের পরিবর্তে টাকা চুরি করেছে। ডাকাতি করেছে। মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদেরকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খাল খনন কর্মসূচিতে ফিরতে হবে। এটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ ছিল। তিনি আধুনিক, সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠনের জন্য এ কর্মসূচি শুরু করেন। আমরা খালগুলো থেকে পলিথিন অপসারণের জন্য সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যবস্থা নিচ্ছি। নালায় ময়লা, প্লাস্টিক, ককশিট ফেলা বন্ধ করতে হবে। আমি নিজে মহেশখালসহ বিভিন্ন খাল পরিদর্শন করেছি। পলিথিনের স্তর আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। এজন্য সবার প্রতি অনুরোধ, খাল ও নালাগুলো পরিষ্কার রাখুন
ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খেলার মাঠ করার ঘোষণা দিয়ে মেয়র বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমানের খাল খনন কর্মসূচি পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি ৪১টি ওয়ার্ডে মাঠ তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এরই মধ্যে ছয়টি মাঠের কাজ শুরু হয়েছে। বৈষম্য দূর করতে, সমাজের ধনী গরিব সকলের জন্য খেলাধুলার সুযোগ তৈরি করছি। এভাবেই আমরা বৈষম্যহীন একটি সুন্দর চট্টগ্রাম গড়ে তুলব।আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ, নালার মধ্যে ময়লা ফেলবেন না, বিশেষ করে প্লাস্টিক, পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক বোতল, ও ককশিট। কারণ এগুলো জলাবদ্ধতার মূল কারণ। বর্তমানে পলিথিনের কারণে খালের উপর চার পাঁচ ফিট স্তর জমে গেছে, যা জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। পলিথিনের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন হতে হবে। এটার বিকল্প হিসেবে নতুন কিছু বাজারজাত করার পরিকল্পনা করছি। আমি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাচ্ছি। মশার স্প্রে কার্যক্রম সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, তা মনিটরিং করছি। ওয়ার্ড কাউন্সিলর না থাকলেও নেতাকর্মীদের একসঙ্গে কাজ করতে বলছি। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীদের সতর্ক করে মেয়র বলেন, ডোর টু ডোর প্রকল্পের দায়িত্বশীলদের সাথে বৈঠক করে নিশ্চিত করবেন, তাদের যথেষ্ট জনবল ও ময়লার গাড়ি আছে কি না। যদি না থাকে, তাদের অর্ডার বাতিল করব। জনগণ থেকে পরিচ্ছন্নতার জন্য নির্ধারিত ফি বেশি নিলে তাদের চাকরি বাতিল করা হবে। জনগণের সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।
ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্ষাকালে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা মারাত্মক আকার ধারণ করে। তাই আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে উদ্যোগ নিয়ে নিজেদের এলাকাকে পরিস্কার রাখতে হবে। জনগণ দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন না রাখলে জলাবদ্ধতার সমস্যা কোনদিনও সমাধান হবে না। জনগণকে সম্পৃক্ত করে স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে নগরীর খাল ও বড় নালাগুলো পরিষ্কার করার এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।
এতে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সাবেক স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব কামাল উদ্দিন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিম, বন্দর থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হাসান, সি. সহ সভাপতি হাসান মুরাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মো. হোসেন, ৩৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. আজম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. জাহেদ, সহ সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, মো. আলী, যুগ্ম সম্পাদক মো. হোসেন মনা, এড. মো. হাসান সহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।
আপনার মতামত লিখুন :