রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় হতদরিদ্র মহিলাদের সঞ্চয়ের বিপুল পরিমাণ টাকা চেয়ারম্যান ও গ্রাম পুলিশ আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ২১ মাস যাবৎ হতদরিদ্রের সঞ্চয়ের অর্থ ব্যাংকে জমা না করে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর সরকার ও তার পিএস কাম গ্রাম পুলিশ কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের মাধ্যমে হতদরিদ্র উপকারভোগী মহিলাদের সেবায় চালু রয়েছে (ভিডব্লিউবি) ভার্নারেবল উইম্যান বেনিফিট সেবা কার্যক্রম। ওই কার্যক্রমের মাধ্যমে গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন জুড়ে ১৫৮ জন হত দরিদ্র মহিলাকে মাসিক ভিত্তিতে ৩০ কেজি করে চাউল প্রদান করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি সমাজের ওই হতদরিদ্র মহিলাদের নিকট থেকে মাসিক সঞ্চয়ের লক্ষ্যে ২০০ টাকা করে ব্যাংকে জমা রাখা হয়।
ভিডব্লিউবি সেবার ২ বছর মেয়াদ শেষে তাদের হাতে সঞ্চয়ের টাকাগুলো প্রদান করা হয়ে থাকে। হতদরিদ্র মহিলাদের সঞ্চয়ের সেই অর্থ চেয়ারম্যান আলমগীর সরকারের সহযোগিতায় ব্যাংকে জমা দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন চেয়ারম্যানেরই পিএস কাম গ্রাম পুলিশ সদস্য কামরুল হাসান। আলোকনগর কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে টাকাগুলো জমা প্রদানের কথা থাকলেও ২১ মাস ধরে একটি টাকা জমা দেয়া হয়নি। ২১ মাসের সর্বমোট টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৬শত টাকা। হত দরিদ্রের বিপুল পরিমাণ টাকা চেয়ারম্যান ও তার গ্রাম পুলিশ সদস্য আত্মসাৎ করলেও এতো দিনে তা উদঘাটন হয়নি।
গত ৫ আগস্টের পর চেয়ারম্যান আলমগীর সরকার পালিয়ে থাকার পাশাপাশি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। পরবর্তীতে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে ইউপি সদস্য বকুল সরদারকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সেই সাথে পরিবর্তন করা হয় ইউপি সচিব কেউ। চলতি মাসে ভিডব্লিউবি কার্যক্রমের আওতায় নভেম্বর মাসের চাউল বিতরণ করা হয়।
এ সময় হত দরিদ্র উপকারভোগীদের নিকট থেকে ব্যাংকে জমা দেয়ার উদ্দেশ্যে অর্থ নেয়া হলেও তা গ্রাম পুলিশ কামরুল হাসান জমা দেননি। চাউল বিতরণের পরের দিন ব্যাংকে খোঁজ নেন ইউপি সচিব আনারুজ্জামান রিপন। ওই সময় তিনি জানাতে পারেন ব্যাংকে উপকারভোগীদের কোন অর্থ জমা দেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে এই কর্মসূচীর আওতায় বিগত মাসের ব্যাংক স্ট্রেটমেন্ট তুলে দেখা যায় ২১ মাসে একটি টাকাও জমা দেয়া হয়নি। এমন ঘটনায় আতংকিত হয়ে পড়ে ইউপি সচিব।
পরে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি অবহিত করেন। এদিকে আলমগীর সরকার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরই ঘোষণা দিয়েছিলেন গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদে কোন অনিয়ম হতে দেয়া হবে না। সে সময় গ্রাম পুলিশ সহ সদস্যরা জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি প্রদান করা হয়েছিল। অথচ সেই ব্যক্তিগত গাড়ি চালক ও গ্রাম পুলিশ কামরুল হাসানকে নিয়ে জড়িয়ে পড়েন দুর্নীতিতে। ২১ মাস পরে এসে দেখা যাচ্ছে হত দরিদ্রের ব্যাংক হিসেবে সঞ্চয়ের কোন অর্থই জমা দেয়া হয়নি।
অন্যদিকে ভিডব্লিউবি দেখভালের দায়িত্বে কাজ করেন রাজশাহীর আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থা (আউস) নামের একটি বেসরকারি এনজিও। ওই এনজিওর ম্যানেজার বিপুল কুমারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হত দরিদ্রের মাঝে সুষ্ঠুভাবে চাউল বিতরণ হচ্ছে কি না সেটা আমরা দেখাশুনা করে থাকি। অর্থনৈতিক কোন লেনদেনের সাথে আমাদের এনজিও জড়িত না। টাকা দেনদেন করতেন চেয়ারমান আলমগীর সরকার। এ ঘটনায় তৎকালীন দায়িত্ব থাকা চেয়ারম্যান আলমগীর সরকারের মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও বন্ধ পাওয়া যায় তার নম্বার। তবে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে চেয়ারম্যান আলমগীর সরকারের পিএস কাম গ্রাম পুলিশ কামরুল হাসান।
এ ব্যাপারে গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান বকুল সরদার বলেন, আমি সম্প্রতি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছি। এমন ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দ্রুত তম সময়ের মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাচ্ছি।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের নিকট জানাতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বাগমারায় সদ্য বদলী হয়ে এসেছি। স্থানীয় মাধ্যমে জানতে পারি গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে ভিডব্লিউবির উপকারভোগী হতদরিদ্র মহিলাদের মাসিক সঞ্চয়ের অর্থ ব্যাংকে জমা দেয়া হয় না। কেন জমা দেয়া হয়নি বা কারা এরসাথে জড়িত তা উদঘাটন করা হবে। অর্থ আত্মসাতের কোন সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হত দরিদ্র উপকারভোগী মহিলাদের অনেক টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :