ঝিনাইদহ পৌরসভার টাকা বস্তায় ভরে ভাগাভাগি করার গল্প শুনে আসছি সেই এরশাদ জামানা থেকে। তখন নাকি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন মশা ড্রেন রাস্তার কাজ না করেই ঠিকাদারদের নিয়ে রাতে ভাগাভাগি করতেন। সেই পুরানো গল্প এখনো বাজারে, চায়ের দোকান আর আড্ডাখানায় চলে। মামলা দিয়ে নির্বাচন বন্ধ করে ১১ বছর ধরে ঝিনাইদহ পৌরসভা লুটপাট করেছেন সাইদুল করিম মিন্টু।
তিনিও নাকি ১৬ খাতের আদায় করা টাকা ফান্ডে জমা না দিয়ে পকেটে ভরে নিয়ে গেছেন। মেয়র মিন্টু চলে যাওয়ার পর ৭৮ লাখ টাকার চেক জালিয়াতি ধরা পড়ে।
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) ইয়ারুল ইসলাম পৌর প্রশাসক হিসেবে যোগদান করে ইচ্ছামতো লুটপাট করেছেন বলে পরবর্তী মেয়রের মুখে শোনা গেছে। ইয়ারুল সাহেব দুর্নীতিবাজদের না ধরে কাড়ি কাড়ি টাকা নিয়ে মনগড়া প্রতিবেদন দিয়েছেন। তার সেই প্রতিবেদনে যার বা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনিই নাকি বাদ গেছেন। হাবিব-চান সিন্ডিকেট বহাল থাকলো পৌরসভায়। তারপর আসলেন জনতার মেয়র খ্যাত কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল। তিনি এসে কর্মচারীদের সবার পেছনে টিকটিকি লাগিয়ে দিলেন। পৌরসভার চেয়ারটেবিলে জাহেদী ফাউন্ডেশন লিখলেন। টেন্ডারের সব কাজ তার শ্যালক দিয়ে করালেন। কোভিড-১৯ প্রকল্পের টেন্ডার নিম্ন দরে না করে উচ্চ দরে করেছেন। ফান্ডে টাকা না থাকলেও ১০ কোটি টাকার টেন্ডার করালেন।মিন্টু-ইয়ারুলের আমলে বহু রাস্তার কাজ হয়নি। খাতা কলমে কাজ না করেই তুলে নিলেন।
উপরের যে কথাগুলো লেখা হলো, এ সব কথার কোন সত্যতা নেই। সবই বাজারে, চায়ের দোকান আর আড্ডাখানায় উচ্চারিত কথা। কিন্তু আবার আছেও! সেটা কখন? যখন পৌরবাসি নাগরিক বিড়ম্বনায় পড়ে তখন। এই ধরুন টানা বর্ষনে ঝিনাইদহ পৌরসভার বেশির ভাগ পাড়ায় পানি উঠে গেছে। ঘরবাড়ি উঠোন সব ঢুবে গেছে। পানি বের হতে পারছে না। ময়লা আবর্জনাযুক্ত পানিতে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে, কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর বা টেকসই কোন পদ্ধতি নেই। ড্রেনগুলোর একটার সঙ্গে আরেকটার কোন সম্পর্ক নেই। নাক মুক বন্ধ করা ড্রেনগুলোর পেছনে যখন কোটি কোটি টাকা ব্যায় করা হয় তখন উপরের সব কথাগুলোই নাগরিকদের সত্য বলে ধরে নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
পৌরবাসির দুর্ভাগ্য যে তারা মেয়র আর প্রশাসক হিসেবে যাদের পাচ্ছেন তাদের বিশের ভাগই জালেম প্রকৃতির। তারা নাগরিকদের কাছ থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স, পানির বিল, বাড়ির প্লান পাশ, নবায়ন ফি’সহ ১৬ খাতের টাকা আদায়ে যতটা যত্নবান নাগরিক সেবার ব্যাপারে ততটাই ঢনঢনানি। শোনা যাচ্ছে ৫ আগষ্ট থেকে ১৬ খাতের এই টাকা আবার লুটপাট করা হেচ্ছে। ৫৪টি সরকারী অফিসের ট্যাক্স আদায়ের জন্য এখনো কোন চিঠি দেওয়া হয়নি। বাজারে, চায়ের দোকান আর আড্ডাখানায় চলা এই কথাগুলো যদি সত্য হয় তবে ৬৬ বছরে যেমন ড্রেনেজ সমস্যার সমাধান হয়নি ভবিষ্যাতে আরে হবেও না। কারণ লুটপাটের এই ধারাবাহিকতা ছিন্ন করার মতো হিম্মত এখনো কেউ দেখাতে পারেনি।
আপনার মতামত লিখুন :