Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
ক্যাপ্টেন তাজকে আহত করেছিলেন হেকিম

বিএনপির সেই আব্দুল হাকিম এখন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান


দৈনিক পরিবার | মনিরুজ্জামান পামেন জুন ২৬, ২০২৪, ১১:১৫ এএম বিএনপির সেই আব্দুল হাকিম এখন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম ওরফে আব্দুল হেকিম। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ০৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনের বর্তমান এমপি ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলামকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে মারাত্মকভাবে আহত করেছিলেন তিনি। ভোটের দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রূপসদী দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যান ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম। ওই সময় আব্দুল হাকিমের নের্তৃত্বে জামাল চাঁন, আব্দুল হাকিম সরকার, রূপসদী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান সভাপতি ওসমান মাঝি (হেকিমের ভাগিনা) সহ বিএনপির একটি গ্রুপ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলামের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। কেন্দ্রের ২শত গজ উত্তর পাশে নুরুল ইসলাম মেম্বারের বাড়ির সামনে রাস্তার উপর ফেলে তাজ সাহেবের মাথা ফাটিয়ে দেন আব্দুল হাকিম।
এসময় তাজ সাহেবকে বাঁচাতে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন করিম মেম্বার ও সুন্দর আলী। সেদিন প্রাণ ভয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা তাজ সাহেবকে রেখে পালিয়ে যান। মারাত্মক আহত অবস্থায় ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলামের ভাতিজা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম তুষার তাকে মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে নিয়ে আসে। অন্যদিকে করিম মেম্বারকে ধরাধরি করে লোকজন বাড়িতে পৌঁছে দেয়। রক্তাক্ত সুন্দর আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নৌকা যোগে বাঞ্ছারামপুর সদর হাসপাতালে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। আর তখনই রূপসদী জামিদা মনসুর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালিন প্রধান শিক্ষক আবুল বাসার ওই নৌকা ডুবিয়ে দেয়। পরে সুন্দর আলীকে হাসপাতালে নেয়া যায়নি। বাড়িতেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এতে করে সুন্দর আলীর আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হলে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। পরে সুন্দর আলীর ছেলে আব্দুল আজিজ দেশ বিদেশে তাকে চিকিৎসা করেও বাঁচাতে পারেননি। একবুক কষ্ট নিয়ে বছর ছয়েক পূর্বে সুন্দর আলী মারা যান।  
আজ করিম মেম্বার নেই, সুন্দর আলীও নেই। অথচ আব্দুল হাকিম বেশ ভালই আছেন। জীবনে কোনদিন নৌকায় ভোট দেননি আব্দুল হাকিম। সারাজীবনই ধানের শীষে ভোট দিয়েছেন। একাধিকবার ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। এমনকি বিএনপির আমলেও তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। অথচ সেই আব্দুল হাকিম আওয়ামী লীগের আমলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান হয়েছেন।
আব্দুল হাকিমের পিতা কেনু মিয়া। রূপসদী গ্রামের মুকসুদ আলী বাড়ির তথা মোশকার বাড়ির সন্তান আব্দুল হাকিম সারাজীবন বিএনপির রাজনীতি করেছেন। সারাজীবনই তিনি নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছিলেন। আব্দুল হাকিম চেয়ারম্যান গোষ্ঠির মোজাম্মেলদের পরিবার ছাড়া বাকি সবাই সরাসরি বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। হেকিম চেয়ারম্যানের আত্মীয় স্বজন পর্যন্ত বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত।
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বলতে গেলে ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত রূপসদী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিলেন আব্দুল হাকিম। ১/১১ এর পর সুচতুর আব্দুল হাকিম রাতারাতি বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি রূপসদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং বাঞ্ছারামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
আব্দুল হাকিম চেয়ারম্যান হওয়ার পর রূপসদী ইউনিয়নে উল্লেখ করার মতো কোন উন্নয়ন করতে পারেননি। তিনি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। ওই এলাকায় যত উন্নয়ন হয়েছে তা শুধুমাত্র ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলামের একক প্রচেষ্টা এবং আন্তরিকতার কারণেই হয়েছে। নানাভাবে বিতর্কিত চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিমের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভের শেষ নেই। তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা নিজের আত্মীয় স্বজন এবং বিএনপি ঘরানার মানুষদের দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া অনেকেই রূপসদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভেদ ও গ্রুপিং সৃষ্টির জন্য আব্দুল হাকিমকেই দায়ি করছেন। আর সেই কারণেই অনেকে বলাবলি করছে, হেকিম চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হলেও অন্তরে এখনও ধানের শীষই লালন করছেন।
এলাকাবাসী আব্দুল হাকিম চেয়ারম্যানের মতো হাইব্রীড নেতাদের ব্যাপারে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তথ্য নিয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। একই সাথে আব্দুল হাকিম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে অদ্যাবধি রূপসদী ইউনিয়ন পরিষদের সার্বিক কর্মকাণ্ডের খোঁজখবর নেয়ার জন্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক মন্ত্রণালয় সহ বিভিন্ন সংস্থা এবং দপ্তরেরও সুদৃষ্টি কামনা করেন।   

Side banner