উচ্চ শিক্ষার জন্য আমরা উন্নত দেশে পাড়ি জমাই। এরমধ্যে কেউ কেউ পড়া শেষ করে প্রিয় স্বদেশে ফিরে যান। অনেকেই আবার স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যারা অস্ট্রেলিয়াতে স্থায়ীভাবে থাকতে চাইছেন তাদের পড়া শেষ করে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যে বিষয়ে অস্ট্রেলিয়াতে পড়েছেন ওই সম্পর্কিত চাকরি করতে হয়।
বাংলাদেশে যেমন চাকরির ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে পড়াশোনা করলে দ্রুত চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তেমনি অস্ট্রেলিয়াতেও কিছু বিষয়ের চাহিদা রয়েছে।
এই বিষয়ে ব্যাচেলর বা মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর চাকরি যেমন দ্রুত পাওয়া যায় আবার তেমনি স্থায়ী হতে বা ‘পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি (পিআর)’ পেতেও সুবিধা হয়। তাই যারা স্থায়ীভাবে অস্ট্রেলিয়াতে থাকতে চান তাদের জন্য দেশ থেকে আসার আগে সময় নিয়ে বিষয় নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কীভাবে জানবেন অস্ট্রেলিয়াতে কোন বিষয়ের চাহিদা রয়েছে? এ সম্পর্কে জানাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ‘অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা: কমপ্লিট গাইড’ বইয়ের লেখক জসীম উদ্দিন রাসেল।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে কতগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। সবার আগে নিজের পছন্দের বিষয় নির্ধারণ নির্ভর করে। যাই হোক, অস্ট্রেলিয়াতে কী কারণে পড়তে আসতে চাইছেন তার ওপর বিষয় নির্ধারণ অনেকটাই নির্ভর করবে।
যদি পড়া শেষ করে বাংলাদেশে চলে যেতে চান তাহলে পছন্দের বিষয় এবং বাংলাদেশে এই বিষয় পড়ে যা করতে চাইছেন তা মিলে গেলে ওই বিষয়ে আসতে পারেন।
আর যদি উদ্দেশ্য থাকে পড়া শেষ করে অস্ট্রেলিয়াতে স্থায়ীভাবে থেকে যাবেন তাহলে যে বিষয়ে পড়লে ‘পিআর’ পাওয়া সহজ হবে সেই বিষয়ে পড়তে যেতে হবে।
সেক্ষেত্রে নিজের পছন্দের চেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় কোনো ‘ফিল্ডে’ এখন চাহিদা আছে বা ভবিষ্যতে চাহিদা থাকতে পারে সেসব প্রাধান্য পাবে। কারণ পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়লেন কিন্তু পড়া শেষ করে দেখলেন ওই সম্পর্কিত চাকরি বা কাজ খুবই কম এবং ‘পিআর’ পাওয়াও অনিশ্চিত।
কোনো রকমে ভিসা পেয়ে আগে অস্ট্রেলিয়া যাই, তারপর বুঝেশুনে একটি উপায় বের করা যাবে- এই চিন্তা করাটা ঠিক না।
এতে করে হয়তো ঠিকই অস্ট্রেলিয়াতে আসতে পারলেন, কিন্তু পরে কথা বলে জানতে পারলেন এই সম্পর্কিত বিষয়ে ‘পিআর’ পাওয়া অনেক কঠিন।
অস্ট্রেলিয়াতে আসার পর সবার সঙ্গে কথা বলা শুরু হলে এবং ‘কমিউনিটি’র সঙ্গে মেশা শুরু হলে আস্তে আস্তে সব জানা হয়ে যায়। তখনই মাথায় চলে আসে কীভাবে এখানে ‘পিআর’ পাওয়া যাবে এবং তখন থেকেই চিন্তা শুরু হয়।
অনেকে বাংলাদেশ থেকে যে বিষয়ে ভর্তি হয়ে এসেছিলেন পরে এখানে এসে বিষয় পরিবর্তন করেছেন। কারণ ‘পিআর’ পাওয়া সহজ হবে। আবার এমনও হয়েছে, সাত/আট বছর হয়ে গেছে কিন্তু ‘পিআর’ পাচ্ছেন না। এদিকে ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এমন অবস্থায় হয়তো দেশে চলে যেতে হবে নয়তো নতুন কোনো বিষয়ে আবার ভর্তি হয়ে ‘স্টুডেন্ট’ ভিসায় পরিবর্তন করতে হবে।
এত বছর অপেক্ষা করে ‘পিআর’ না পেয়ে আবার নতুন করে পড়ালেখা করা এবং ‘পিআর’য়ের জন্য চেষ্টা করা অনেকটাই ধৈর্য্যের বিষয়। কারণ সব সময় সব বয়সে সবকিছু করা সম্ভব হয় না।
এদিকে পিআর না হলে খরচের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। সবক্ষেত্রেই বেশি বেশি খরচ হয়। ভিসা এক্সটেনশন করার সময় বড় অংকের ফি লাগে, ছেলেমেয়ে থাকলে তাদের ভর্তুকি পাওয়া যায় না, ভাড়া বাসায় থাকতে হয় ইত্যাদি নানা জটিলতা থাকে।
আর যারা আগে থেকেই ভালো বিষয় নির্ধারণ করে পড়তে এসেছেন তারা এক বছর অস্ট্রেলিয়াতে চাকরি করার পর-ই ‘পিআর’ পেয়ে যান। ফলে নিজেদের দ্রুত গুছিয়ে ফেলতে পারেন।
তবে যারা বুঝেশুনে একটু দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তারা এসেই যদি দেখেন এই বিষয়ে পিআর পাওয়া কঠিন তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বিষয় পরিবর্তন করে ফেলেন। এতে করে কয়েক বছর পর আর অসুবিধায় পড়তে হয় না।
তবে এক্ষেত্রে কিছুটা আর্থিক ক্ষতি হয়। যেমন- দেশ থেকে আসার সময় প্রথম সেমিস্টারের টাকা দিয়ে এসেছেন বা বেশিরভাগ টাকাই দেওয়া হয়ে গেছে, এবং আপনি বিষয় পরিবর্তন করলেও এক সেমিস্টারের টাকা দিতেই হয়। কারণ, আরেক সেমিস্টারের সময় না হলে তো নতুন বিষয়ে ভর্তি হতে পারবেন না।
তাই প্রথম সেমিস্টারের টাকা একদিকে ক্ষতি হল। আরেকদিকে ছয় মাস সময় নষ্ট হল। দুদিক থেকেই ক্ষতি।
এতক্ষণ কোন বিষয়ে পড়লে ভালো হবে, সহজে পিআর পাওয়া যাবে তা হয়তো জানার জন্য অপেক্ষা করছেন। এখানে মনে করিয়ে দিচ্ছি, সময়ের সঙ্গে চাহিদা পরিবর্তন হয়।
এখন যে বিষয়টার খুবই চাহিদা আছে সেটা দুই বছর পর নাও থাকতে পারে। তখন নতুন কোনো বিষয়ে চাহিদা তৈরি হতে পারে। তাই অবশ্যই আসার আগে কোন বিষয়ে চাহিদা চলছে সেটা দেখে নিতে হবে।
যে বিষয়ে পড়বেন সেটা ‘পিআর’ লিস্টে আছে কি-না তা ‘অস্ট্রেলিয়ান ইমিগ্রেইশন ওয়েবসাইট’ (যঃঃঢ়ং://রসসর.যড়সবধভভধরৎং.মড়া.ধঁ/) থেকে সবার আগে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।
এটা নিশ্চিত হওয়ার পর কোন বিষয় অস্ট্রেলিয়ার চাকরির বাজারে কেমন চাহিদা এবং ‘পিআর’ পাওয়ার ক্ষেত্রে কতটা সহজ সেগুলো ধরে পর্যালোচনা করতে হবে। রিসার্চ করুন।
পাশাপাশি যঃঃঢ়ং://িি.িংঃঁফুধঁংঃৎধষরধ.মড়া.ধঁ/ এই লিংক থেকেও বিস্তারিত জানা যাবে। এই ওয়েবসাইট অস্ট্রেলিয়ান সরকার ব্যবস্থাপনা করে থাকে, তাই আশা করা যায় নির্ভরযোগ্য তথ্য এখান থেকে পাওয়া যাবে।
পাশাপাশি অন্যান্য ওয়েবসাইট, অস্ট্রেলিয়াতে পরিচিতজন যদি থাকে তাহলে তাদের কাছ থেকেও দরকারী তথ্য পেতে পারেন।
আপনার মতামত লিখুন :