আমার সঙ্গে কাতার এয়ার ওয়েজের ন্যাক্কারজনক আচরণের বিচার চাই, সবাই পাশে দাঁড়াবেন প্লিজ
আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স, মাস্টার্স শেষ করে কৃষি কাজ করছি। ২০২১ সালে সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কতৃক জাতীয় যুব পুরষ্কার লাভ করি। গত ২ বছর থেকে global GPA মেনে আম উৎপাদন করে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনছি। বাংলাদেশের পক্ষে রাষ্ট্রীয় উপহার হিসেবেও আমার আম অনেক দেশে গেছে। আমার আম রপ্তানি নিয়ে দেশের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় বহু প্রতিবেদন হয়েছে, আপনারা এগুলো দেখেছেন।
এরই স্বীকৃতি হিসেবে নেদারল্যান্ডসে আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার মেলায় আমি আমন্ত্রিত ছিলাম। নেদারল্যান্ডসে যাবার জন্য আমাকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জিও এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এলওআই দেয়া হয়। আমি নিজে ভিসার জন্য আবেদন করে সেনজেন ভিসা পাই। যথাসময়ে নিজে উপস্থিত থেকে ভিসা সংগ্রহ করি।
নেদারল্যান্ডসের মেলায় বাগানের লেট ভ্যারাইটির কিছু আমের স্যাম্পল নিয়ে যাচ্ছিলাম বিদেশি বায়ারদের জন্য। আম রপ্তানি বাড়াতে অনেকের সঙ্গে বিজনেস মিটিং ছিল। আমাদের বাগানে এখনও এক মাস লেট ভ্যারাইটির আমগুলো থাকবে। নতুন নতুন জাত দিয়ে আম রপ্তানি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে, এই সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য এক্সোতে যাওয়া আমার অন্যতম কারণ। আমি আগে কখনও বিদেশ যাইনি। এটি ছিল প্রথম বিদেশ যাত্রা।
আমি কাতার এয়ার ওয়েজে ৫ তারিখে ঢাকা-আমস্টারডাম টিকেট করি। ফ্লাইট ছিল ভোর ৪:২০টায় (ফ্লাইট নং কিউ আর ৬৪৩ ও কিউ আর ২৭৩)। ৪ তারিখ রাত ১১.৪৫ টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নং টার্মিনালে প্রবেশ করি। এরপর বোর্ডিং পাস দেয়া শুরু হলে পাসপোর্ট, টিকেট, ভ্যাকসিন কার্ডসহ প্রয়োজনীয় কাগজ দেখিয়ে বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করি এবং ল্যাগেজ জমা দিয়ে ইমিগ্রেশনে যাই। ইমিগ্রশেনে পাসপোর্ট, বোর্ডিং পাস, জিও কপিসহ সব ডকুমেন্ট জমা দিয়ে ইমিগ্রেশন সম্পূর্ণ করি। এরপর বিমানে উঠবার জন্য ৫ নং গেটে অপেক্ষা করতে থাকি। নির্দিষ্ট সময়ে লাইনে দাঁড়িয়ে গেট পার হবার সময় কাতার এয়ার ওয়েজের দায়িত্বরত স্টাফ আমার পাসপোর্ট দেখে ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ করে পাসপোর্ট, বোর্ডিং পাস রেখে দিয়ে পাশে দাঁড়াতে বলেন। আমি তাকে জিও কপি, এলওআই, রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্তির কথা বলি এবং আরও বলি আমি নিজ হাতে ভিসা পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছি, এখানে জালিয়াতির কোন সুযোগ নাই। এরপর তিনি শতশত যাত্রীর সামনে আমার সঙ্গে খারপ আচরণ করেন।
আমি দ্রুত ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে গিয়ে ঘটনা বলি। আমার ইমিগ্রেশন করা কর্মকর্তা এসআই জনাব দেলোয়ার আমাকে নিয়ে ৫ নং গেটে গিয়ে কাতার এয়ারের কর্মকর্তার কাছ থেকে আমার পাসপোর্ট ও আমার যাবতীয় ডকুমেন্ট সঙ্গে নিয়ে বিমানবন্দরের ভিসা বিশেষজ্ঞ টিমের মাধ্যমে পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষ করে ভিসা সঠিক বলে মত দেয়। এরপর বিমান ছাড়ার আগে এসআই জনাব দেলোয়ার আমাকে সঙ্গে নিয়ে ৫ নং গেটে কাতার এয়ারের স্টাফের কাছে ভিসা সঠিক বলে জানান এবং আমার বিমানে যাত্রার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ করেন। এসআই দেলোয়ার কাতার এয়ারের কর্মকর্তাকে রাষ্ট্রীয় জিও, এলওআই, জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্তি, গণমাধ্যমে নানা প্রতিবেদনসব কিছু বলেন। এসব দেখে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কাতার এয়ার বিমান যাত্রা নাকচ করে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ইনচার্জ বরাবর প্যাসেঞ্জার অফলোডের জন্য আবেদন করেন। এরমধ্যে আমার ফ্লাইট ফ্লাই করে চলে যায়। ইমিগ্রেশন পুলিশ বহু চেষ্টা করে ব্যর্থ হবার পর কাতার এয়ারের আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি জিডি করে আমার পাসপোর্টে ইমিগ্রেশন সিল বাতিল করেন।
কাতার এয়ারের কর্মকর্তরা আপত্তিকর ও অন্যায় অভিযোগ তুলে আমাকে বিমানে উঠতে দেননি। অথচ
বোর্ডিং কার্ড এবং ইমিগ্রেশন ছাড়পত্র শেষে একজন আন্তর্জাতিক যাত্রীর সাথে এ ধরনের ঘৃণ্য আচরণ আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন।
ইমিগ্রেশন আইন, আমার রাষ্ট্রীয় পুরষ্কার, মন্ত্রণালয়ের জিও, এলওআই, গণমাধ্যমের নানা প্রতিবেদন সব কিছুকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে আমার সঙ্গে কাতার এয়ার ওয়েজের এমন জঘন্য, নিন্দনীয় কাজের জন্য আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাই। বিমানে উঠবার আগে যাত্রা বাতিল করে কাতার এয়ার ওয়েজ আমার মানসম্মান হানির পাশাপাশি বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতি, ইউরোপের অনেক বায়ারদের সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত মিটিং বাতিল হয়েছে। যা আম রপ্তানি রিলেটেট ছিল। ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ করায় এতে করে আমাদের রাষ্ট্রীয় সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। আমি কাতার এয়ার ওয়েজের নিকট ক্ষতিপূরণ সহ এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। এই বিষয়ে আমি আইনগত ব্যবস্থা নিব। পাশাপাশি এই বিষয়ে নেদারল্যান্ডস অ্যাম্বাসির কাছে অভিযোগ করব।
আমার সঙ্গে কাতার এয়ার ওয়েজের এমন ন্যাক্কারজনক আচরনের ঘটনায় বিচার দাবিতে আপনারা আমার পাশে দাঁড়াবেন প্লিজ। পোস্টটি সবাই শেয়ার করবেন। রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকারী কাতার এয়ারওয়েজের বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার হবেন।
আমার বন্ধু তালিকায় অনেক গণমাধ্যম কর্মী আছেন। আমি জানি সংবাদে সময় গুরুত্বপূর্ণ। আমার উচিত ছিল বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে এসে দ্রুততার সঙ্গে ঘটনাটি সবাইকে জানানো। কিন্তু মিথ্যা অভিযোগে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আমার মানসিক অবস্থা কেমন থাকতে পারে তা আন্তরিকভাবে বিবেচনায় নেবেন। এজন্য পোস্ট দিতে দেরি হলো, আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি চাই গণমাধ্যমে এই হয়রানি নিয়ে সংবাদ প্রচারিত হোক। যেন ভবিষ্যতে আর কারও সাথে কাতার এয়ার ওয়েজ এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায়।
সোহেল রানা
জাতীয় যুব পুরষ্কারপ্রাপ্ত কৃষি উদ্যোক্তা
সাপাহার, নওগাঁ। ০১৭১০-৪৪০৫৬৮
আপনার মতামত লিখুন :