Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

গ্রিনল্যান্ড কিনতে ট্রাম্পের কেন এত আগ্রহ?


দৈনিক পরিবার | প্রবাস ডেস্ক ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫, ০১:১৩ পিএম গ্রিনল্যান্ড কিনতে ট্রাম্পের কেন এত আগ্রহ?

গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা ‘জরুরি’ হওয়া প্রসঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার অজুহাত দিলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে নির্বাচিত এ প্রেসিডেন্টের অন্যান্য উদ্দেশ্য থাকতে পারে, যেমন দ্বীপটি হলো প্রাকৃতিক সম্পদের এক ভান্ডার। এর মধ্যে পৃথিবীর বিরল কিছু ধাতুও রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গতকাল ট্রাম্পের ফ্লোরিডা রিসোর্টে এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পানামা খাল ও গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার যে চেষ্টা তিনি করছেন, সেই প্রক্রিয়ায় সফল হতে কোনো ধরনের সামরিক ও অর্থনৈতিক বল প্রয়োগ করবেন না—বিশ্বকে তিনি এমন নিশ্চয়তা দিতে পারবেন কি না।
জবাবে কোনো রাখঢাক না করে ট্রাম্প বলেন, ‘না, ওই দুটোর কোনোটির বিষয়ে আমি আপনাদের কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। তবে আমি এটা বলতে পারি, (যুক্তরাষ্ট্রের) অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় আমাদের ওই দুটিই (পানামা খাল ও গ্রিনল্যান্ড) প্রয়োজন।’
গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা ‘জরুরি’ হওয়া প্রসঙ্গে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার অজুহাত দিলেও বিশেষজ্ঞরা বলেন, এর পেছনে নির্বাচিত এই প্রেসিডেন্টের অন্যান্য উদ্দেশ্য থাকতে পারে, যেমন দ্বীপটি হলো প্রাকৃতিক সম্পদের এক ভান্ডার। এর মধ্যে পৃথিবীর বিরল কিছু ধাতুও রয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনে যেভাবে উষ্ণতা বাড়ছে, তাতে বরফ গলে গিয়ে এখান থেকে এসব সম্পদ আহরণ করা আরও সহজ হয়ে উঠতে পারে।
আগেই বলা হয়েছে, গ্রিনল্যান্ড হলো বিশ্বের সর্ববৃহৎ দ্বীপ। জনসংখ্যা ৫৬ হাজারের কিছু বেশি। ডেনমার্কের একসময়ের উপনিবেশ এ দ্বীপ এখন দেশটির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। এটির ভূরাজনৈতিক অবস্থান অনন্য। দ্বীপটি বসে আছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মাঝখানে। গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুক। শহরটি যত না ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের কাছে, তার চেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের নিকটে।
‘ড্যানিশ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক আলরিক প্রাম গাদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই গ্রিনল্যান্ডের মালিকানাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়, বিশেষ করে রাশিয়া থেকে হামলা ঠেকানোর ক্ষেত্রে। জাহাজ চলাচলের পথ ‘দ্য নর্থওয়েস্ট প্যাসেজ’ গ্রিনল্যান্ড উপকূল হয়ে গেছে। আর এ দ্বীপ কৌশলগত সামুদ্রিক এলাকা গ্রিনল্যান্ড-আইসল্যান্ড-যুক্তরাজ্যের অংশ।
গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ বৈরী মনোভাবাপন্ন কোনো বৃহৎ শক্তির হাতে না যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। কেননা, দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণ চালানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
গ্রিনল্যান্ড কেনার ধারণা প্রকাশকারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পই কিন্তু প্রথম নন। তাঁর আগে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন ১৮৬৭ সালে যখন আলাস্কা কেনেন, তখন গ্রিনল্যান্ড কেনার বিষয়ও বিবেচনা করছিলেন তিনি। আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের প্রশাসন দ্বীপটি কিনতে ডেনমার্ককে ১০ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ডেনমার্কের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এসব ধারণা বা প্রস্তাবের কোনোটি সাফল্যের মুখ দেখেনি। তবে ১৯৫১ সালে প্রতিরক্ষা চুক্তির অধীন গ্রিনল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমে একটি বিমানঘাঁটি গড়তে সক্ষম হয় যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘাঁটি বর্তমানে ‘পিটুফিক স্পেশ বেস’ নামে পরিচিত। এটি মস্কো ও নিউইয়র্কের মাঝামাঝি অবস্থিত। আর তা মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর সর্ব–উত্তরের ঘাঁটি। এটি ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কব্যবস্থা সজ্জিত।
প্রাম গাদ সিএনএনকে বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ বৈরী মনোভাবাপন্ন কোনো বৃহৎ শক্তির হাতে না যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। কেননা, দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণ চালানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।’
রয়্যাল হলোওয়ে, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ভূরাজনীতির অধ্যাপক ক্লাউস ডডস বলেন, ট্রাম্পের কাছে গ্রিনল্যান্ড আরও আকর্ষণীয় হওয়ার কারণ হতে পারে দ্বীপটির প্রাকৃতিক সম্পদের মজুত।
এ দ্বীপের প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে তেল ও গ্যাস। আরও আছে পৃথিবীর বিরল কিছু ধাতু, যেগুলোর বৈদ্যুতিক গাড়ি ও বায়ুকলের পাশাপাশি সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনে উচ্চ চাহিদা রয়েছে।
আগেই বলা হয়েছে, গ্রিনল্যান্ড হলো বিশ্বের সর্ববৃহৎ দ্বীপ। জনসংখ্যা ৫৬ হাজারের কিছু বেশি। ডেনমার্কের একসময়ের উপনিবেশ এ দ্বীপ এখন দেশটির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। এটির ভূরাজনৈতিক অবস্থান অনন্য। দ্বীপটি বসে আছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মাঝখানে।
বিশ্বের বিরল সব ধাতু উৎপাদনে চীন এগিয়ে। দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণকে সামনে রেখে চীন সে দেশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার হুমকি দিয়েছে।
অধ্যাপক ডডস সিএনএনকে বলেন, ‘(গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের ওপর) চীনের ক্রমবর্ধমাণ প্রভাবে ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা যে খুবই উদ্বিগ্ন, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। গ্রিনল্যান্ড এসব গুরুত্বপূর্ণ খনিজের একটি সম্ভাব্য সমৃদ্ধ ভান্ডার।’
গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলছে এবং আর্কটিকের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে। এটি গ্রিনল্যান্ডকে জলবায়ু সংকটের প্রধান শিকার হওয়া দেশ ও এলাকাগুলোর সামনের সারিতে নিয়ে আসছে। কিন্তু জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে গ্রিনল্যান্ডের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন ঘটলে তাতে অর্থনৈতিক সুবিধা দেখছেন কেউ কেউ।
আর্কটিকে বরফ গলতে থাকায় সেখানে নতুন নতুন জাহাজ চলাচলের পথ উন্মুক্ত হচ্ছে। ২০২৪ সালের আগপর্যন্ত দশকজুড়ে এ অঞ্চলে জাহাজের চলাচল বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। আর্কটিক কাউন্সিলের মতে, জাহাজের চলাচল এতটা বেড়ে যাওয়ার আংশিক কারণ বরফ গলে যাওয়া।
গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের ওপর চীনের ক্রমবর্ধমাণ প্রভাবে ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা যে খুবই উদ্বিগ্ন, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। গ্রিনল্যান্ড এসব গুরুত্বপূর্ণ খনিজের একটি সম্ভাব্য সমৃদ্ধ ভান্ডার।
অধ্যাপক ডডস বলেন, ‘আমি মনে করি, ট্রাম্পের এটা জানা আছে, আর্কটিকের বরফ গলছে এবং এটি একটি সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।’
ফিলিপ স্টেইনবার্গ ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ডরহামের ভূগোলের অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘এটাও ধারণা করা হয়, বরফ গলতে থাকলে গ্রিনল্যান্ড থেকে প্রাকৃতিক সম্পদের আহরণ সহজতর হতে পারে। যদিও জলবায়ু সংকট এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে মোড় ঘোরানো কোনো সুযোগ এনে দেয়নি।’
এদিকে হোয়াইট হাউসে বসার পর ট্রাম্প তাঁর গ্রিনল্যান্ড কেনার আকাঙ্ক্ষার বাস্তব রূপের প্রতিফলন কীভাবে ঘটাবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ প্রসঙ্গে ড্যানিশ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের প্রাম গাদ বলেন, ‘এটি কি শুধুই ট্রাম্পের সাহসিকতা প্রদর্শন, কিছু পাওয়ার হুমকি, নাকি প্রকৃতই এমন কিছু, যা তিনি বাস্তবে ঘটাতে চান—কেউ জানেন না।’

Side banner