আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে উদ্ধার করা বাংলাদেশিসহ ৪৯ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে তাদের আশ্রয়ের আবেদন যাচাই বাছাইয়ের জন্য আলবেনিয়ায় নিয়ে গেছে ইতালির নৌবাহিনী। ইতালির আশ্রয়প্রার্থীদের আলবেনিয়া নিয়ে যাওয়ার তৃতীয় চেষ্টা এটি। বিতর্কিত এই কার্যক্রম নিয়ে আইনি লড়াই চলছে।
ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিস্তারিত পরিচয় জানায়নি। তবে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নতুন যাদের আলবেনিয়া পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিশর, আইভরি কোস্ট এবং গাম্বিয়ার নাগরিকরা রয়েছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আরও জানিয়েছে, অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং ‘দুর্বল’ হওয়ার কারণে পাঁচজন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ইতালিতে ফেরত নিয়ে যাওয়া হবে। এদের মধ্যে দুইজন বাংলাদেশি, দুইজন গাম্বিয়ার এবং একজন আইভরি কোস্টের নাগরিক।
ইতালিতে আশ্রয় চাওয়া আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আলবেনিয়ার বিশেষ কেন্দ্রে পাঠানোর উদ্যোগ এর আগে গত অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসেও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইতালির সঙ্গে এক চুক্তির আওতায় আলবেনিয়াতে তৈরি আশ্রয়কেন্দ্রে তাদের আটক রাখতে অনুমোদন দেয়নি ইতালিয়ান আদালত। আদালত জানিয়েছিলেন, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্মভূমি তাদের জন্য নিরাপদ না হওয়ায় আলবেনিয়ার কেন্দ্র থেকে তাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না।
সেই মামলা শেষমেষ ইউরোপের বিচার আদালতে গড়িয়েছে। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলাটির শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি অবশ্য আলবেনিয়ার কেন্দ্র দুটো আদালতের আপত্তি সত্ত্বেও চালু রাখতে বদ্ধপরিকর। তার এই অবস্থানকে কিছুটা সমর্থন দিয়েছে রোমের সর্বোচ্চ আদালতও। আদালত জানিয়েছেন, ইতালির বিচারকরা কোন দেশ আশ্রয় বাতিল হওয়া আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নিরাপদ এবং কোন দেশ নিরাপদ নয় তা নির্ধারণের সরকারি নীতির বিকল্প হতে পারবেন না। তবে সুনির্দিষ্ট ঘটনার ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতের বিচারকরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
২০২৩ সালের নভেম্বরে ইতালি ও আলবেনিয়ার মধ্যে করা চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিমাসে তিন হাজারের মতো আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তাদের আলবেনিয়ায় পাঠাতে পারবে ইতালি। এদের মধ্যে যাদের আবেদন গ্রহণ করা হবে তাদের ইতালিতে আশ্রয় দেওয়া হবে। যাদের আবেদন বাতিল হবে তাদের আলবেনিয়া থেকেই নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত একটি দেশের আশ্রয়প্রার্থীদের অঞ্চলটির বাইরের একটি দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার এই উদ্যোগকে আরও কিছু দেশ সমর্থন জানিয়েছে। তবে মানবাধিকার কর্মীরা এই উদ্যোগের সমালোচনা করে বলেছেন, এটি এক ভয়াবহ নজির তৈরি করেছে।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৭০৪ জন আশ্রয়প্রার্থী অনিয়মিত পথে ইতালিতে প্রবেশ করেছেন। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সংখ্যাটি দ্বিগুণ। গত বছর মোট ৬৬ হাজার ৩১৭ জন আশ্রয়প্রার্থী ইতালিতে পৌঁছান, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকাংশই বাংলাদেশ, সিরিয়া, তিউনিশিয়া এবং মিশরের নাগরিক।
আপনার মতামত লিখুন :