গ্রিসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা রহমান সুমনা। তিনি বাংলাদেশ ও গ্রিসের দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন। তিনি জানান, গ্রিস এবং বাংলাদেশের মাঝে বাণিজ্য এখন পর্যন্ত ‘মডেস্ট’, তবে বাণিজ্য বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে সামগ্রিক বাণিজ্য ৬০-৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাণিজ্যের ভারসাম্য বাংলাদেশের পক্ষে, কারণ আমরা বেশি পণ্য গ্রিসে রপ্তানি করছি। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, কাপড় এবং পোশাক শিল্পের সঙ্গে সংযুক্ত পণ্য গ্রিসে রপ্তানি করা হয়। তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ। এছাড়া কৃষি পণ্য—পাটজাত শিল্প, কাঁচা চামড়া এবং প্রস্তুত করা খাদ্য পণ্য গ্রিসে আসে। গ্রিস থেকে বাংলাদেশে মেশিনারি, যন্ত্রাংশ, জলপাই তেল, তৈরি খাদ্য এবং ঔষধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করা হয়। বাণিজ্য প্রবাহ সীমিত কারণ সরাসরি সমুদ্র বা আকাশ পথে পরিবহন করা যায় না, শুল্ক বিষয়ক জটিলতা রয়েছে , ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্য আছে এবং গ্রিসের অর্থনীতির আয়তন তেমন বড় নয়। বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি বাড়াতে আমি এথেন্স চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি এবং তার সহকর্মীরা আমাদের রাজশাহী সিল্ক, ওষুধ এবং চামড়াজাত পণ্যের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন। গ্রিস ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য, যে কারণে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি করা সহজ হবে না। এ সত্ত্বেও আমি চেষ্টা করছি গ্রিসের বিভিন্ন চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে আলোচনা করে বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে গ্রিসে প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি আইনসম্মতভাবে অবস্থান করছেন। আমি গর্বের সঙ্গে জানাচ্ছি যে তাদের অনেকেই এখানে ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি ব্যবসা সফলতার সঙ্গে করছেন। পোশাক শিল্প, মুদি দোকান, রেস্তোরাঁ এবং বাংলাদেশি নারী উদ্যোক্তার পোশাকের দোকান রয়েছে এখানে। তবে সিংহভাগ বাংলাদেশি কাজ করেন কৃষি খামারে এবং গ্রিসের বিভিন্ন দ্বীপে পর্যটন সংক্রান্ত কাজে জড়িত তারা। গ্রিসে কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে এবং এ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের যে সমঝোতা স্মারক রয়েছে, সেটির অধীনে প্রতি বছর চার হাজার বাংলাদেশি কৃষি শ্রমিক গ্রিসে আসতে পারেন। আমি কাজ করছি যেন দক্ষ বাংলাদেশি কর্মীরা (তথ্য প্রযুক্তি, চিকিৎসকের সহায়ক, মেশিন অপারেটর ইত্যাদি) গ্রিসে আসতে পারেন।
ভিসা সংক্রান্ত ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি গত ৪ সেপ্টেম্বর এই দূতাবাসে যোগদান করবার পর থেকেই ভিসা সহজীকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক ও আলোচনা করছি। বাংলাদেশে গ্রিস দূতাবাস নেই। আমরা গ্রিসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বাংলাদেশে দূতাবাস স্থাপন করার উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেছি। বাংলাদেশ এবং গ্রিসের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক আছে। আমরা কাজ করছি সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানোর। পর্যটনের ক্ষেত্রেও আমরা কাজ করছি। গ্রিসের অর্থনীতি পর্যটনশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। তবে গ্রিকরা পর্যটনে তেমন আগ্রহী নয়, তারা নিজেদের দেশে অভ্যন্তরীণ পর্যটন অথবা নিকটবর্তী দেশ সমূহে ভ্রমণ করেন। সম্প্রতি গ্রিসের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি মাধ্যমে আন্ডারগ্রাজুয়েট কোর্স চালু করেছে, বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা অবশ্যই এ সুযোগটি নিতে পারেন। আমার পরামর্শ আইনসঙ্গতভাবে গ্রিসে আসা শ্রেয়। আমাদের দূতাবাসে শ্রম উইং আছে, আমরা গ্রিসে আসার জন্য যে কোনো সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
আপনার মতামত লিখুন :