Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১

প্লেনের টিকিটে শুল্ক বাড়ায় ক্ষতির আশঙ্কা


দৈনিক পরিবার | নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০৫:১৪ পিএম প্লেনের টিকিটে শুল্ক বাড়ায় ক্ষতির আশঙ্কা

বিমানের টিকিটে আবগারি শুল্ক বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ভ্রমণে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। তবে যারা এনবিআরের প্রজ্ঞাপন জারির আগে টিকিট বুকিং দিয়েছেন বা অগ্রিম টিকিট কেটেছেন তারা নতুন শুল্কের আওতামুক্ত থাকছেন।
এয়ারলাইন্স সংস্থাগুলো বলছে, আবগারি শুল্ক বাড়ায় তারা বাধ্য হয়ে উড়োজাহাজের টিকিটের ভাড়া বাড়িয়েছে। এতে টিকিটের চাহিদা ক্রমেই কমবে। ট্রাভেল এজেন্টগুলোও মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জিডিপিতে। সরকারের লাভের পরিবর্তে উল্টো পরোক্ষ ক্ষতি বেশি হবে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এই আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে।
যাত্রী, ট্রাভেল এজেন্সি ও এয়ারলাইন্স সংস্থাগুলো জানায়, সাধারণত অর্থবছরের শুরুতে আবগারি শুল্ক বাড়ায় এনবিআর। কিন্তু এবার অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে বাড়ানো হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার (৮ জানুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের টিকিটে আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করেছে। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) সদস্য দেশগুলোয় যাওয়ার টিকিটের ওপর আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে এক হাজার টাকা। সার্কভুক্ত দেশগুলোর বাইরে এশিয়ার অন্য দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে শুল্ক টিকিটপ্রতি দুই হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়া ইউরোপ ও আমেরিকার টিকিটের ওপর আবগারি শুল্ক তিন হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে চার হাজার টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকার বাড়তি শুল্ক থেকে অতিরিক্ত এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের আশা করছে। এ কারণেই আবগারি শুল্ক বাড়িয়েছে। যদিও এ আবগারি শুল্ক বাড়ায় ক্রমেই এয়ারলাইন্সে যাত্রী কমবে। সরকার যে উদ্দেশ্যে আবগারি শুল্ক বাড়িয়েছে, উল্টো উড়োজাহাজে যাত্রী কমলে পর্যটন ব্যবসায় ধস নামবে। যার প্রভাব পড়বে জিডিপিতে।’
দেশের বেসরকারি কয়েকটি উড়োজাহাজ সংস্থা ও ট্রাভেল এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এতদিন অভ্যন্তরীণ পথে একটি টিকিটে সব মিলিয়ে ৯৭৫ টাকা শুল্ক-কর ছিল। সেটি বেড়ে এখন এক হাজার ১৭৫ টাকা হয়েছে। আবার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াগামী প্রতিটি টিকিটে এতদিন সাড়ে ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা শুল্ক-কর ছিল, এখন তা আরও ৫০০ টাকা বেড়েছে। অর্থাৎ চারজনের একটি পরিবার থাইল্যান্ডে যেতে চাইলে তাদের আগের চেয়ে দুই হাজার টাকা বেশি শুল্ক-কর দিতে হবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, দেশের অভ্যন্তরে কয়েকটি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করে। এর মধ্যে রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা, নভোএয়ার ও এয়ার অ্যাস্ট্রা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, রাজশাহী, যশোর, সৈয়দপুর ও বরিশাল এই আটটি রুটে তাদের প্রতিদিন শতাধিক ফ্লাইট চলাচল করে। এসব অভ্যন্তরীণ পথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক ২০০ টাকা বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। এটি অস্বাভাবিক একটা বিষয়।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ যাত্রীরা আগে থেকেই ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক, ২০০ টাকা ভ্রমণ কর, বিমানবন্দর উন্নয়নে ১০০ টাকা, যাত্রী নিরাপত্তার খরচ হিসেবে ৭০ টাকাসহ অন্য কর দেন। অভ্যন্তরীণ রুটে সব মিলিয়ে দেন ৯২৫ টাকা। সর্বশেষ আবগারি শুল্ক বাড়ানোয় এর পরিমাণ হয়েছে এক হাজার ১২৫ টাকা।
বছরের বিভিন্ন সময় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ঘুরতে যান মগবাজারের বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একজন যাত্রী ভ্রমণে আবগারি শুল্ক তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে একই সঙ্গে যখন পরিবারের চার-পাঁচজন মিলে ভ্রমণে যাবে, তখন আবগারি শুল্ক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। যাত্রীরা ভ্রমণের নিরুৎসাহিত হবেন। এটা পর্যটনের জন্য সুখবর নয়।’
নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘শুল্ক বাড়ানো হলে টিকিটের দামে বেশ প্রভাব পড়ে। অতিরিক্ত শুল্কের মাধ্যমে যে পরিমাণ রাজস্ব পাওয়া যায় তার তুলনায় সরকারের পরোক্ষ ক্ষতি বেশি। কারণ, আমরা দেখেছি, উড়োজাহাজ ভাড়া ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা বাড়লে যাত্রী চাহিদা প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যায়। অর্থাৎ, যদি এক মাসে তিন লাখ যাত্রী যাওয়া-আসা করেন, তাহলে শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ২৫ শতাংশ কমে যাওয়া মানে ৭৫ হাজার যাত্রী কমে যাওয়া।’
তিনি বলেন, ‘শুল্ক বাড়িয়ে করের পরিধি বাড়ানোর যে লক্ষ্য সরকার নিয়েছে তা উল্টো ফল দেবে বলে আমি মনে করি। এতে সরকারের রাজস্ব না বেড়ে বরং কমবে।’
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণত অর্থবছরের শুরুতে কর বা শুল্ক বাড়ানো হয়। কিন্তু এবার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত হঠাৎ করেই এসেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত যাত্রীর সংখ্যা বাড়ানোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নের আগে বিষয়টি ভালোভাবে ভাবা উচিত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘জিডিপিতে অ্যাভিয়েশন খাতের অবদান তিন শতাংশ। কিন্তু এখন আবগারি শুল্ক বাড়ায় জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে, বিশেষ করে অ্যাভিয়েশন পর্যটন শিল্পে। তাই যাত্রী সংখ্যা বাড়াতে সরকারকে উড়োজাহাজ পরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভর্তুকি দেওয়া অথবা অন্য সারচার্জ কমানোর অনুরোধ।’
তবে আবগারি শুল্ক বাড়ানোয় যাত্রীর ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। 
সংগঠনটির সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন, ‘সরকার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে যে পরিমাণ আবগারি শুল্ক বাড়িয়েছে, তা যাত্রীর ভ্রমণে কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ, ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের রুটগুলোতে ৪০ হাজার টাকার টিকিট ৮০ হাজারে বিক্রি করছে একটি সিন্ডিকেট। সেখানে সরকারের আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির হার কিছুই না। তাই সরকারের উচিত আগে টিকিট সিন্ডিকেট বন্ধ করা। সরকার এখানে অ্যাড্রেস করলে আবগারি শুল্ক নিয়ে যাত্রীদের মাথাব্যথা থাকবে না।’

Side banner