Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১
প্রশ্ন ফাঁস কাণ্ড আবেদ আলী

কুলি থেকে কোটিপতি পিএসসির গাড়িচালক


দৈনিক পরিবার | নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৯, ২০২৪, ১১:০৮ এএম কুলি থেকে কোটিপতি পিএসসির গাড়িচালক

বিসিএস পরীক্ষাসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পিএসসি চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবনসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সরকারি কর্মকমিশনের প্রশ্ন ফাঁসের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এখন আলোচিত নাম চালক আবেদ আলী। আলোচিত এই মানুষটির আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার গল্প যেন সিনেমাকেও হার মানাবে।
সৈয়দ আবেদ আলী ৮ বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান ঢাকায়। শুরু করেন কুলির কাজ। একসময় ফুটপাতে ঘুমিয়েছেন। কষ্টের পর কষ্ট করেছেন তিনি। এরপর গাড়ি চালানো শিখে চাকরি নেন পিএসসিতে। তারপর জড়িয়ে পড়েন পিএসসির প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। অর্জন করেন বিপুল সম্পদ, সঙ্গে ক্ষমতাও। চেয়েছিলেন ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে। দীর্ঘদিন থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য প্রচার-প্রচারণাও চালিয়েছেন তিনি।
এলাকায় শিল্পপতি হিসেবে পরিচয় দিতেন সৈয়দ আবেদ আলী। স্থানীয়রা জানান, সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান মীরের ছেলে। আব্দুর রহমান মীরের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আবেদ আলী মেজ। রহমান মীরের বড় ছেলে জবেদ আলী কৃষিকাজ করেন। ছোট ছেলে সাবেদ আলী এখনও এলাকায় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের ভাই আবেদ আলী জীবন। এলাকার মানুষের কাছে তিনি পরিচয় দিতেন শিল্পপতি হিসেবে। আবেদ আলীর ছেলে সোহানুর রহমান সিয়ামও ব্যবহার করতেন দামি গাড়ি। আবেদ আলী নিজেও দামি গাড়িতে চড়তেন। অথচ এলাকার কেউ জানতেনই না তিনি গাড়িচালক। তিনি ঢাকায় রিয়েল স্টেটের ব্যবসা করতেন বলে এলাকায় প্রচার ছিল। কয়েক বছর ধরে এলাকায় ব্যাপক দান-খয়রাতও করেন প্রশ্নফাঁস চক্রের এই হোতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিত্ত-বৈভব ফুলেফেঁপে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আবেদ আলী মীর পদবি পাল্টে নামের আগে সৈয়দ পদবি ব্যবহার শুরু করেন। বাবার উত্থান নিয়ে ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামও সম্প্রতি একটি সমাবেশে বক্তব্য দেন।
বাবার উত্থানের গল্প বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার বাবা একদম ছোট থেকে বড় হয়েছেন। আমার বাবার বয়স যখন ৮ বছর, তখন পেটের দায়ে তিনি ঢাকায় চলে গেছেন। ঢাকায় গিয়ে কুলিগিরি করে ৫০ টাকা রুজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তিনি এখন একটি লিমিটেড কোম্পানির মালিক। তিনি কষ্ট করে বড় হয়েছেন।
সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে উঠে আসে আবেদ আলীর ভয়ঙ্কর তথ্য। প্রায় একযুগ আগে থেকে পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্রের সঙ্গে জড়িত এই আবেদ আলী। এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
আবেদ আলীর গ্রামের বাড়ি এসে নেমে পড়েন উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায়। রাজনীতির মাঠে-ময়দানে কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে গণসংযোগ করেন আবেদ আলী ও তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সোহানুর রহমান সিয়াম। এলাকায় বাবা ছেলে দু-হাত ভরে দান-খয়রাত করতেন। নিজ গ্রামে কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়ির পাশে করেছেন মসজিদ। এ ছাড়াও সরকারি জায়গা দখল করে তার গরুর খামার ও মার্কেট নির্মাণাধীন। উপজেলার পান্তাপাড়া ও পূর্ব বোতলা গ্রামে কিনেছেন বিপুল সম্পদ।
স্থানীয়রা জানান, ঢাকায়ও তার একাধিক বাড়ি রয়েছে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় রয়েছে তার থ্রি-স্টার মানের হোটেল। সামান্য একজন ড্রাইভার থেকে হঠাৎ করে এমন বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়ায় তার সম্পর্কে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে।
পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী। কিন্তু এলাকার মানুষ এসব কিছুই জানতেন না। গত কোরবানির ঈদে দামি গাড়িতে চড়ে ১০০ জনের মধ্যে এক কেজি করে মাংস বণ্টন করেন। সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুকে। আবেদ আলীর ছেলে সিয়াম শুধু একটি গাড়ি নয়, একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। সবই দামি, ঝকঝকে। পড়েছেন ভারতের শিলংয়ে। দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি পড়ালেখা করেন। তিনি ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। প্রভাব জাহির করার জন্য বড় বড় নেতা ও আমলাদের সঙ্গে ছবি তুলে বাবা-ছেলে ফেসবুকে বুস্ট করে ব্যাপকভাবে প্রচার করেন। আবেদ আলী নিজেই তার ফেসবুক পেজে একটি হোটেল নির্মাণের তথ্য তুলে ধরেছেন।
গত ১৮ মে এক পোস্টে তিনি লেখেন, আমাদের নতুন হোটেল এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করলাম আজ। হোটেল সান মেরিনা, কুয়াকাটা।
সম্প্রতি দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সেই অভিযুক্ত কর্মচারীদের একজন পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী।

Side banner