প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান, রাজনীতিবিদ ইনাম আহমদ চৌধুরী মারা গেছেন; তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
অবসরে যাওয়ার পর নব্বই দশকের শেষে বিএনপির রাজনীতি করা ইনাম আহমদ শেষ জীবনে যোগ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগে। দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন তিনি। সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার পর ঢাকার বনানীর বাসভবনে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে তার ছেলে নাদীম চৌধুরী জানান।
তিনি বলেন, আমার বোন বিদেশে আছে। সে ফেরার পর আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাবার জানাজা হবে। আজিমপুর কবরস্থানে উনাকে দাফন করা হবে।
১৯৬০ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে চাকরিজীবন শুরু করা ইনাম আহমদ চৌধুরী স্বাধীন বাংলাদেশে সচিবের দায়িত্বও পালন করেন। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছে তার।
অবসরের পর ১৯৯৯ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় তাকে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর দলের ভাইস চেয়ারম্যানও করা হয়েছিল তাকে। জিয়াকে নিয়ে তার লেখা বইও রয়েছে। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে ১৯ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন সাবেক আমলা ইনাম আহমদ। পরে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে তাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়।
ইনাম আহমদ চৌধুরী ১৯৩৭ সালের ২৯ জুন সিলেটের গোলাপগঞ্জের বারোকোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা গিয়াসুদ্দিন আহমদ চৌধুরী ছিলেন ঢাকার কমিশনার। মায়ের নাম রফিকুন্নেছা খাতুন চৌধুরী।
১৯৫২-৫৩ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের জেনারেল সেক্রেটারি থাকাকালে শহীদ মিনার নির্মাণ ও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যুক্ত থাকায় কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। উচ্চতর শিক্ষা নেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে লন্ডনে বাংলাদেশ মিশনের ইকোনমিক মিনিস্টার ছিলেন ইনাম আহমদ। পরে ব্যাংককে জাতিসংঘের ‘এস্কাপ’ কমিশনের সেক্রেটারি, আইডিবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অবসরের আগে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বও তিনি সামলেছেন।
ইনাম আহমদরা ছিলেন চার ভাই দুই বোন। বড় ভাই প্রয়াত ফারুক আহমদ চৌধুরী একসময় ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব। আরেক ভাই সাবেক কূটনীতিবিদ ইফতেখার আহমদ চৌধুরী ২০০৭-০৮ মেয়াদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ছিলেন।
বোনদের মধ্যে নাসিম হাই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাইয়ের স্ত্রী। আর ছোট বোন নীনা আহমেদের স্বামী ফখরুদ্দীন আহমদ ছিলেন ২০০৭-০৮ মেয়াদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
আপনার মতামত লিখুন :