Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১
অধ্যাদেশ জারি

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ হবে কাউন্সিলের মাধ্যমে


দৈনিক পরিবার | নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২১, ২০২৫, ১০:২০ পিএম সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ হবে কাউন্সিলের মাধ্যমে

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক নিয়োগের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করবে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে স্বতন্ত্র এই কাউন্সিল যোগ্য ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রপতি বরাবর সুপারিশ করবে। এমন বিধান রেখে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ জারি করেছে অন্তর্বতী সরকার। এ দিন বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই অধ্যাদেশের বিষয়বস্তুসহ অন্যান্য সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগের কথা জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। 
তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় এবং স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তমত প্রকাশ-সংক্রান্ত মামলা ও ‘গায়েবি’ মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিচারক নিয়োগের জন্য আইন দিয়ে যোগ্যতা নির্ধারণে ব্যবস্থার কথা সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও কার্যকর ফলাফল দেখা যায়নি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়েও সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করে সুপারিশের জন্য ২০০৮ সালের ১৬ মার্চ ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন অধ্যাদেশ’ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সংসদে এটি আইন হিসেবে পাস হয়নি। সর্বোচ্চ আদালতে দলীয় বিবেচনায় বিচারক নিয়োগের অভিযোগ অনেক দিনের। বিভিন্ন সময় নীতিমালা বা আইন প্রণয়ন করে বিচারক নিয়োগের দাবি উঠেছে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিগত সরকারের আমলে যে অনাচার হতো, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন হতো, মানুষকে যে দমন-নিপীড়ন করা হতো, তার একটি বড় প্ল্যাটফর্ম ছিল উচ্চ আদালত। সেখানে মানুষ প্রতিকার পেত না। এর কারণ ছিল রাজনৈতিক সরকারগুলো উচ্চ আদালতে সম্পূর্ণভাবে দলীয় বিবেচনায়, অনেক ক্ষেত্রে অদক্ষ লোকদের বিচারক নিয়োগ দিত। উচ্চ আদালতের নিয়োগ নিয়ে একজন সাবেক বিচারপতি ‘প্রলয় ঘটে গেছে’ ধরনের মন্তব্য করেছিলেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, উচ্চ আদালতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞ, দক্ষ ও দলনিরপেক্ষ এবং প্রকৃত যোগ্য ব্যক্তিরা বিচারক হিসেবে নিয়োগ হবেন—এমন একটি চাহিদা সমাজে বহু বছর ধরে ছিল। এখন এ বিষয়ে আইন হয়েছে। একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারকেরা নিয়োগ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কাউন্সিল থাকবে। কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে থাকবেন আপিল বিভাগের একজন প্রবীণতম বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগের দুজন প্রবীণতম বিচারক, আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং একজন আইনের অধ্যাপক বা আইনবিশেষজ্ঞ। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এবং একজন আইনের অধ্যাপক বা আইনবিশেষজ্ঞকে মনোনীত করবেন কাউন্সিলের প্রধান। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।
এই কাউন্সিল নিজ উদ্যোগে উপযুক্ত প্রার্থীদের নাম সংগ্রহ করবে। পাশাপাশি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেও আবেদন আহ্বান করবে। কাউন্সিল প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করার পর প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেবে। এরপর কাউন্সিলের সুপারিশ প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। তাতে সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। পরামর্শ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি সুপারিশ করা ব্যক্তিদের মধ্য থেকে বিচারক নিয়োগ দেবেন।
এই অধ্যাদেশ বিদ্যমান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কি না সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, হবে না। এ সংক্রান্ত বিষয়ে ইতোমধ্যে মামলা ও এর পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের মতামতের কথা তুলে ধরেন তিনি।
পৃথক সচিবালয় হচ্ছে:
আইন উপদেষ্টা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দাবি দীর্ঘদিন ধরে আছে। এটির উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। একটু সময় লাগছে খুঁটিনাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। এর আগে গত মাসে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকল্পে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের বাস্তবায়নে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় আইনি ও কাঠামোগত সংস্কার আনতে পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ:
স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুর উদ্যোগের কথা জানান আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, অভিযোগ আছে, সরকারি কৌঁসুলিরা যেহেতু দলীয়ভাবে নিয়োগ পান, সে জন্য তাঁরা অনেক সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেন না। রাষ্ট্রের পক্ষে ভূমিকা পালন না করে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ভূমিকা পালন করেন। এর সমাধান হচ্ছে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্যে আইন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এক মাসের মধ্যে এটি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

Side banner