সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো করে বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল ২.০, অর্থাৎ দ্বিতীয় বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিলেন।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহী নগরের সাহেববাজার বড় মসজিদ চত্বরে এক গণসংলাপে বক্তব্য দিতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ৭৫ সালের বাকশাল ছিল ৭২-এর সংবিধানের ক্ষমতার কাঠামোর ধারাবাহিকতা। যেমনটা শেখ হাসিনা বাকশাল ২.০ তৈরি করতে গিয়েছিলেন ওই একই সংবিধানে। তিনি ভেবেছিলেন, গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল চলবে। সেটাই তিনি কায়েম করতে চেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে যে সংবিধান করা হয়েছে, সেখানে ৭১ সালের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা তাকে অস্বীকার করা হয়েছে। ওই সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী সংবিধানেরও ঊর্ধ্বে। সমস্ত রাষ্ট্র তিনি তার পকেটের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলতে পারেন। অনেকে বলে, ’৭২-এর সংবিধান ঠিক আছে, ’৭৫-এর বাকশালটা করা ঠিক হয় নাই। কোনো কোনো বামপন্থীরাও এই কথা বলে। আমরা বলি, এই সংবিধান আমরা চাই না, যা কোনো শাসককে স্বৈরশাসককে পরিণত করে।
সংবিধান সংশোধনের তাগিদ দিয়ে সাকি বলেন, আগামী সংবিধান হতে হবে এই দেশের সমস্ত নাগরিককে সমান মর্যাদা দিয়ে। সেই নাগরিকের ধর্মীয় পরিচয় যাই হোক না কেন। ধর্মীয় পরিচয় কিংবা জাতিগত মর্যাদা দিয়ে নাগরিকের মর্যাদা ঠিক হবে না। নাগরিকের মর্যাদা দিয়েই তার মর্যাদা ঠিক হবে। কোনো লিঙ্গ পরিচয় কিংবা অন্য কোনো কিছু দিয়ে নাগরিকের অধিকার হরণ করা যাবে না। নারী-পুরুষ প্রত্যেকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সংসদের ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে হবে। রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে হবে। তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, নতুন সংবিধানে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে। বিচার বিভাগকে আলাদা করতে হবে নির্বাহী বিভাগ থেকে। সরকার যেন বিচার বিভাগের ওপর কোনোরকম খবরদারি করতে না পারে। গণমাধ্যম স্বাধীন করতে হবে এমনভাবে, যাতে করে আদালতের মতোই জনগণের আশ্রয় হয়ে উঠতে পারে গণমাধ্যম।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান এরপর বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করতে হবে। আইনের সংস্কার করতে হবে। আর তার ভিত্তিতে এমন নির্বাচন ব্যবস্থা আয়োজন করতে হবে, যাতে বাংলাদেশে আর কেউ মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে। নতুন নির্বাচন কমিশন হয়েছে। আপনারা (নির্বাচন কমিশন) এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন, যাতে আর কেউ নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র যদি পেতে হয়, তাহলে আমাদের একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে হবে। তার ভিত্তি হবে গণতান্ত্রিক সংবিধান। এই ফ্যাসিস্ট সংবিধান নয়, হতে হবে একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান।
সরকারি কর্মকর্তাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছেন। পুলিশ, বিজিবি এমনকি সেনাবাহিনীকেও তারা ব্যবহার করেছেন। প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান জেনারেল আজিজ সম্পত্তি কীভাবে বানিয়েছেন! ওই বেনজির আহমেদ কীভাবে সম্পদ গড়েছেন! এরা এইভাবে লোভ-লালসা ও লুটের ভাগ-বাটোয়ারা দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেসব কর্মকর্তারা কলুষিত করেছেন, তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রত্যেকের কাছে বার্তা থাকা দরকার। কোনো সরকারি কর্মকর্তা যদি কোনো অবৈধ সরকারের পা চেটে বাংলাদেশকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যায়, তাহলে তার শাস্তি কী হবে, সেটা সবার জেনে রাখা দরকার।
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ একটা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায় করেছে। তারা নতুন রাজনৈতিক শক্তি দেখতে চায়। কিন্তু আমাদের সেই রাজনৈতিক শক্তি আছে? আমরা কি ছাত্র-জনতাকে এখনও ঐক্যবদ্ধ করে রাখতে পেরেছি? এই অভ্যুত্থান দাবি করে, বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে উঠুক। কাজেই আগামী নির্বাচনের আগেই আমাদেরকে জনগণের রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :