দেবহাটায় সাংবাদিক আবু সাঈদের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে হামলা ও প্রতিষ্ঠানের পরিচারকে তুলে নিয়ে আপহরণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে ওই সাংবাদিকের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন বলে জানা গেছে।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের নাংলা ফাতেমা রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত অনিক ফাউন্ডেশন নামের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। এসময় স্থানীয় একটি রাজনৈতিক দলের দুই শীর্ষ নেতার মদদে এবং ছাত্র সমন্বয়কও বেশ কিছু ঘটনা ঘটান। হামলাকারীরা সাংবাদিক আবু সাঈদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠান অনিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকে লুটপাট ও ভাংচুরের চেষ্টা করে। সেই সাথে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও আইন বিষয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী মেহের আলীকে তুলে নিয়ে অপহরণের চেষ্টা করা হয়। এসময় স্থানীয় ও স্বজনদের হস্তক্ষেপে ভাংচুর থেকে রক্ষা পেলেও মেহের আলীকে মারপিট করে জখম করে। পরে তাকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালাতে থাকে। এসময় সেখানে সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে হামলাকারীরা পিছু হটলেও তাদের অনুসারিরা হুমকি দিতে থাকে।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মেহের আলী জানান, প্রতিদিনের ন্যায় আমি বুধবার সকালে অফিসে আসলে কিছু মানুষ আমাদের অফিসে ঢুকে হামলা ও লুটপাটের চেষ্টা করে। সেই সাথে আমাকে তারা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করলে আমার আত্নচিৎকার করতে থাকি। এসময় তারা অতর্কিত ভাবে আমার উপর হামলা শুরু করে। আমি এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। পরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হই এবং আমার জ্ঞান ফেরে।
সাংবাদিক আবু সাঈদ জানান, তিনি সাতক্ষীরা জেলায় অনিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছি। স্বেচ্ছাসেবী কর্মকান্ডের পাশাপাশি অনিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণ ও সঞ্চয় কার্যক্রম চালু রয়েছে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে একশ্রেণির মানুষ আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করার লক্ষে নানা রকম ষড়যন্ত্র করে আসছে। এরই অংশ হিসাবে আমাদের কিছু গ্রহক ও ভাড়াটিয়া লোকজন এবং কথিত এক ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দানকারীকে উস্কানী দিয়ে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানে এমন ন্যাক্কার ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা বিগতদিন বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। বর্তমান সময়েও যদি পূর্বের মত নির্যাতনের শিকার হই। তাহলে এই স্বাধীনতার কি দরকার ছিল। আমার প্রতিষ্ঠানে হামলা ও আমার ভাইকে অপহরণের চেষ্টার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে হামলাকারীদের হুমকিতে পরিবার নিয়ে অতঙ্কে সময় পার করছি।
দেবহাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি মীর খায়রুল আলম জানান, দিন দুপুরে একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্টানে হামলা ও অপরণের চেষ্টার বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক। দেশে আইন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে কিন্তু কেউ যদি রাজনৈতিক পদ পদবী কিংবা সমন্বয়কের পরিচয়ে এ ধরণের কর্মকান্ড হাতে তুলে নেয় তাহলে মানুষের নিরাপত্তা কোথায়।
আরো বলেন, ৫ আগস্টের পর সবচেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় সাংবাদিকরা। তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ও হয়রানির মুখে ফেলা হচ্ছে। সাংবাদিক আবু সাঈদের প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অপহরণের চেষ্টার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
দেবহাটা উপজেলা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সভাপতি ডা. ওহিদুজ্জামান জানান, আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি। কিন্তু সাংবাদিকের প্রতিষ্ঠানে এ ধরণের ঘটনা সত্যি দুঃখজনক। আমরা যদি আইন নিজের হাতে তুলে নিতে থাকি তাহলে রাষ্ট্রের শান্তি নষ্ট হতে থাকবে। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
দেবহাটা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী হাফেজ মাওলানা এমদাদুল হক জানান, আমরা একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ন সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের কেউ যদি শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট হয় এমন কর্মকান্ড করার চেষ্টা করে সে বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাংবাদিকের প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় তিনি দুঃখ্য প্রকাশ করেন।
দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হযরত আলী জানান, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনকল্যাণে পুলিশ কাজ করছে। সমাজের শান্তি নষ্ট হয় এমন কর্মকান্ডে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কবে। তবে সাংবাদিকের প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় এখনো কোন অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :