শীত মানেই ভ্রমণের মৌসুম। ভ্রমণ পিপাসুরা এই মৌসুমেই ঘুরতে বারবার ছুটে ছুটে যায় প্রকৃতির সান্নিধ্যে। সারদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হলে নিজেকে সুস্থ রাখাটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ঘুরতে গিয়ে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত খাওয়া দাওয়ার উপরেও। উলটো পালটা খেলে কিন্তু শরীর খারাপ হতে বাধ্য, তখন পুরো ট্যুরটাই নষ্ট।
জেনে নিন ঘুরতে গিয়ে ফিট থাকতে কী কী রাখবেন ডায়েটে:
ব্যাগ গোছানোর সময় শুকনো খাবার সঙ্গে নিতেই হবে। ড্রাই ফ্রুটস (যেমন -কাজু, কিশমিশ, পেস্তা বা আখরোট), কেক, বিস্কুট, চিঁড়ে ভাজা, মুড়ি, ছোলা ভাজা বা রোস্টেড মাখানার মতো খাবার নিতে পারেন। ট্রেকিং-এ গেলে সঙ্গে চকোলেট রাখতে পারেন। এতে এনার্জি পাওয়া যায়।
বেড়াতে গিয়ে অনেকেই সেখানকার স্ট্রিট ফুড বা স্থানীয় খাবার খেতে ভালবাসেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে পাহাড়ি মোমো বা চাউমিনের বেশ কদর রয়েছে। তবে না বুঝে উলটো পালটা জায়গা থেকে খেয়ে পেটের অবস্থা খারাপ যেন না হয়। স্থানীয় খাবার শরীরে সহ্য নাও হতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন।
বেড়াতে গিয়ে হালকা খাবার খাওয়াই ভালো। দীর্ঘক্ষণ বাস, গাড়ি কিংবা ট্রেনে থাকতে গেলে হালকা খাবার খান। এছাড়া বেড়াতে গিয়ে তেল-মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এতে পেট ফোলা, গ্যাসের সমস্যা এড়াতে পারেন। ভাজাভুজি খাবারও এড়িয়ে চলুন।
সারাদিন রাস্তায় ঘুরেও ফিট থাকতে হলে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা ভীষণ জরুরি। সঙ্গে পানির বোতল রাখতে ভুলবেন না। পানি খেতেই হবে। পানির পাশাপাশি ফলের রস খেতে পারেন, এতে এনার্জি পাবেন।
বেড়াতে গিয়ে খাবার খাওয়ার কোনও নির্দিষ্ট সময় থাকে না। অনেকে লাঞ্চ সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলেন। কিন্তু চেষ্টা করুন সঠিক সময়ে খাবার খেয়ে নেওয়ার। প্রয়োজনে ভরপেট ব্রেকফাস্ট করুন। আর সঙ্গে শুকনো খাবার রাখুন।
বেড়াতে গিয়ে ভালো থাকুন:
অনেকেরই নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়। কোনো ওষুধ রোজকার, কোনোটি সাপ্তাহিক। কোনোটি আবার প্রয়োজন হয় মাঝেমধ্যে। ট্যাবলেট, ক্যাপসুল তো বটেই, ইনহেলার বা ইনসুলিনের প্রয়োজন হয় অনেকের। এই ওষুধগুলো সঙ্গেই রাখুন। কিছু ওষুধ (যেমন ইনসুলিন) নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখতে হয়। সেটির ব্যবস্থাও করতে হবে অবশ্যই। দেশের বাইরে গেলেও ওষুধ সঙ্গে রাখা ভালো, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রও সঙ্গে নিয়ে নিন দেশের বাইরে যাওয়ার সময়।
প্রাথমিক চিকিৎসার টুকিটাকি রাখুন নিজের সঙ্গেই। সঙ্গে বাড়তি মাস্ক রাখা ভালো। জীবাণু ও ধুলাবালু থেকে সুরক্ষার জন্য মাস্ক যে কতটা প্রয়োজন, তা বোধ হয় নতুন করে আর বলার দরকার নেই। যেখানে–সেখানে মাস্ক ফেলবেন না। নিয়মমাফিক হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির আদবকেতা মেনে চলা, যেখানে–সেখানে কফ-থুতু না ফেলাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। করোনাভাইরাসের টিকার নির্দেশিত ডোজ সম্পন্ন করে ফেলুন।
খাওয়ার সময় তো মাস্ক খুলতেই হয়। অন্তত সেই সময় যাতে নিজের পরিবারের বাইরের অন্য মানুষের কাছ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বসা যায়, সেটি নিশ্চিত করুন। সম্ভব হলে হোটেলের খাবার ঘরে বসে না খেয়ে নিজেদের জন্য বরাদ্দ কক্ষে কিংবা একটু দূরে কোথাও নিয়ে গিয়ে খান। আবাসিক হোটেলের কক্ষের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন অবশ্যই। আলো-বাতাস প্রবেশ করে, এমন কক্ষ বেছে নেওয়া ভালো।
যেখানে মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব, যেমন বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণুবাহী মশা রয়েছে, সেখানে মশার কামড় থেকে বাঁচতে কিছু আলাদা ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। ফুলহাতা পোশাক মশার কামড় থেকে কিছুটা সুরক্ষা তো দেবেই। এ ছাড়া মশা প্রতিরোধী সামগ্রী ব্যবহার করুন। তবে শিশুদের এমন সামগ্রী দেওয়ার আগে জেনে নিন, সেটি শিশুর উপযোগী কি না। কিছু কিছু পণ্য তিন বছর বয়স হওয়ার আগে প্রয়োগ করাটা ঝুঁকিপূর্ণ।
শরীরের ওপর খুব চাপ সৃষ্টি করে অল্প সময়ে অনেক জায়গা ঘুরে আসার প্রবণতা ভালো নয়। ‘অমুক জায়গায় সবাই ছবি তোলে বলে আমাকেও সেখানে যেতেই হবে’—এমন ভাবনা মনে ঠাঁই দেবেন না।
অত্যন্ত দুর্গম এলাকার দুর্লভ সৌন্দর্য দেখার আশায় নিজের জীবন ও সুস্থতাকে ঝুঁকিতে ফেলবেন না। ঝোপ জঙ্গলে ঢোকার ক্ষেত্রেও সাবধান। বেড়াতে গিয়ে অবশ্যই সেখানকার স্থানীয় দিকনির্দেশনা মেনে চলুন।
বেড়াতে গিয়ে মনের যত্ন নিতে ভুলবেন না। হাসি-আনন্দে সময় কাটান। বিষণ্নতাকে জায়গা দেবেন না। ব্যস্ততাকে ছুটি দিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কম দিন, সম্ভব হলে ‘ছুটি’ নিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেও। কাছের মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান। মন ভালো থাকবে।
বেড়াতে গিয়ে আপনি কোনো জায়গা অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন রেখে আসছেন না কিংবা পরিবেশের ক্ষতি করছেন না—এগুলোও খেয়াল করুন। এটি আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দেবে।
আপনার মতামত লিখুন :