বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ যে কত ধরনের পেশার উপর নির্ভরশীল তা সঠিকভাবে বলা মুশকিল। এর মধ্য থেকে আবার এমন কিছু মানুষের পেশা নজরে আসে যার সম্বন্ধে আলাদা করে জানবার আগ্রহ জাগে মনে। এমনই এক ব্যতিক্রমী পেশার মানুষ আবুল হোসেন। যিনি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে সুগন্ধি বিক্রি করে, সুবাস ছড়িয়ে জীবন জীবিকায় টিকে আছেন দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে।
ফুলবাড়ী উপজেলার ছোট বড় সকলের প্রিয় আতর বিক্রেতা রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার হিজলগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন। তিনি প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফুলবাড়ীতে এসে পায়ে হেঁটে হেঁটে মানুষের কাছে আতর বিক্রি করেন। এই আবুল হোসেন জানিয়েছেন তার জীবন ও জীবিকার টিকে থাকার গল্প।
তিনি বলেন - বাবা-মা চার ভাই ও দুই বোনসহ আট সদস্যদের পরিবার ছিল তার। বাড়িভিটে টুকু ছাড়া ছিলনা আর কোন জমিজমা। বাবা হাটে বাজারে পথে ঘাটে আতর বেচে সংসারের ঘানি টানতেন। তার একার আয়ে চলতো সংসার। খুব কষ্টে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো তাদের। বাবা মা খুব কষ্ট করে ভাই বোনদের বড় করেন। এরপর দুই বোনকে বিয়ে দিয়ে দেন। বড় তিন ভাইও একে একে বিয়ে করে আলাদা সংসার পাতেন। আবুল হোসেন পরিবারে সবার ছোট হলেও বৃদ্ধ মা-বাবার দেখাশোনার দ্বায়িত্ব বর্তায় তার ঘাড়ে। পড়ালেখা করার খুব ইচ্ছা ছিল কিন্তু পারেন নি।
বইখাতা ছেড়ে সংসারের খরচ জোগাতে কাঁধে তুলে নেন বাবার আতরের ঝুড়ি। ছুটে চলেন বিভিন্ন এলাকায়। আতর বেচে সংসারের চাহিদা মেটানোর লড়াই করেন তিনি। এভাবেই কেটে যায় কয়েক বছর। বাবা-মা ধুমধাম করে তাকে বিয়ে দেয়। এরপর প্রথমে বাবা পরে মা মারা যান। বাবা-মা পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও বাবার আতর বিক্রির পেশাকে আপন করে নেন আবুল হোসেন।
বাবার পেশাকে আঁকড়ে ধরে পরিবারের সবার মুখের অন্য জোগাতে সংগ্রাম চলে তার। এদিকে একে একে ঘর আলো করে আসে তিন কণ্যা সন্তান। নিজের শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন নতুন করে দেখতে শুরু করেন। মেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার প্রবল ইচ্ছা বাসা বাধে তার মনে।
আবুল হোসেন আরও জানান, আশির দশক থেকে এই ফুলবাড়ীতে আতর বেচতে আসেন। এখানকার পথঘাট, হাট বাজার, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় আতর বিক্রি করে সংসারের ও মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগান। বড় মেয়েকে এসএসসি মেঝো মেয়েকে ইংরেজিতে অনার্স ও ছোট মেয়েকে এইচএসসি পর্যন্ত পড়িয়ে বিয়ে দিয়েছেন। প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তিনি ফুলবাড়ীতে এসে আতর বিক্রি করেন। আতর বিক্রি করে তার প্রতিদিন ৫ থেকে ৭শ টাকা রোজগার হয়। যা আয় রোজগার হয় তাতেই পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে আছেন। প্রায় ৪৫ বছর ধরে নিয়মিত তিনি ফুলবাড়ীতে আসেন আতর বেচতে। এখনকার মানুষও তাকে খুব ভালোবাসে, সহযোগিতা করেন।
তিনি আরও বলেন, নিজের পেশাকে ছোট করে না দেখে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করলে সাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করা সম্ভব।
আপনার মতামত লিখুন :