নিয়মিত গোসল করে পুরো শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলেও আলাদা করে নাভির যত্ন কি আমরা নিই? অনেকের বেলায় উত্তরটা হয়তো ‘না’। তবে শরীরের অন্যান্য অংশের মতো এটিও পরিষ্কার রাখা জরুরি। পরিচ্ছন্নতার অভাবে নাভিতে জমা হয় ময়লা, যা থেকে সৃষ্টি হতে পারে পাথর। জেনে নিন, যেভাবে নাভির যত্ন নেবেন।
গোসলের সময় নাভি পরিষ্কার করার সবচেয়ে ভালো সময়। নিয়ম করে প্রতিদিন গোসলের সময় নাভি এবং এর আশপাশের ত্বক ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। শরীরচর্চার পর কিংবা গ্রীষ্ণে যখন শরীর খুব ঘামে, তখন পারলে বেশি করে নাভি পরিষ্কার রাখুন।
সাবান ও পানি দিয়েই নাভি পরিষ্কার রাখা যায়
নাভি পরিষ্কার করতে খুব দামি কোনো প্রসাধনীর প্রয়োজন নেই। সামান্য পরিমাণ কুসুম গরম পানি ও সাবান দিয়েই এই কাজ করা যায়। আঙুলের ডগায় বা কোনো পাতলা কাপড় গরম পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিন। এরপর তাতে সাবান মাখিয়ে আঙুল বা কাপড়টি দিয়ে নাভির ভেতর ও চারপাশ ভালো করে ঘষুন। এতে নাভির ময়লা বেশ ভালোভাবেই দূর হবে। পরে পানি দিয়ে নাভির ভেতর ও চারপাশ থেকে সাবান ধুয়ে ফেলুন। এ ক্ষেত্রে শরীরে মাখার যেকোনো সাবানই নাভি পরিষ্কার করতে যথেষ্ট। সুগন্ধযুক্ত সাবান মাখলে নাভিতে যদি প্রদাহ হয়, তাহলে সুগন্ধ নেই এমন কোনো সাবান ব্যবহার করতে পারেন।
এ ছাড়া লবণপানি দিয়েও নাভি পরিষ্কার করতে পারেন। ১ চা চামচ বা ৬ গ্রাম লবণ ১ কাপ বা ২৪০ মিলিলিটার পরিমাণ কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে নিন। এরপর একটি কাপড়ের টুকরা এই লবণপানিতে ভিজিয়ে নিয়ে নাভির ভেতর ও চারপাশ ভালো করে ঘষুন। পরে সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। লবণপানি নাভি থেকে জীবাণুমুক্ত করে, ময়লা দূর করে ও নাভিতে সাবান ব্যবহারজনিত প্রদাহ সৃষ্টি হতে দেয় না।
নাভি ভেতরে ডিপক্লিন
নাভির ভেতরে ময়লা জমে গেলে তা পরিষ্কার করা অনেক সময় বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে কাপড় বা কটন বাড, পাতলা কাপড় বা তুলা ব্যবহার করতে পারেন। কটন বাড, তুলা বা পাতলা কাপড় সাবানপানি দিয়ে নাভির ভেতরে ভালো করে ঘষে ময়লা বের করে আনুন। ময়লা বের হয়ে গেলে জায়গাটি ভালো করে ধুয়ে নিন। তবে নাভির অবতলে খুব বেশি জোরে ঘষবেন না। এতে আপনার নাভির চারপাশের চামড়া ছিঁড়ে গিয়ে জ্বালাপোড়া শুরু হতে পারে।
শুকিয়ে নিতে ভুলবেন না
ধুয়ে ফেলার পর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে নাভি ভেতরে ও এর চারপাশ বেশ ভালো করে শুকিয়ে ফেলুন। না হলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক জন্মাতে পারে। গোসলের পর জামাকাপড় পরার আগে কয়েক মিনিট ধরে বাতাসে ভালো করে জায়গাটি শুকিয়ে নিন।
তেল, ক্রিম বা লোশন একদমই নয়
নাভিতে তেল, ক্রিম বা লোশন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন, যদি চিকিৎসক আপনাকে তা ব্যবহার করতে পরামর্শ দেন। তেল, ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করলে নাভির এলাকা আর্দ্র থাকে। ফলে সেখানে অযাচিত ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা ইস্টের বংশবৃদ্ধির জন্য খুব ভালো পরিবেশ তৈরি হয়ে যায়। তবে নাভি যদি আর্দ্র রাখতেই হয়, তাহলে বেবি ওয়েল ব্যবহার করতে পারেন। তবে দুর্গন্ধ, চুলকানি বা জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন।
পরিষ্কার করার পরও নাভির দুর্গন্ধ না গেলে যা করবেন
নাভির দুর্গন্ধের সাধারণ কারণ হলো ঘাম ও ময়লা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাবানপানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই নাভির দুর্গন্ধ দূর হয়। যদি এতে কাজ না হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার নাভিতে সংক্রমণের আশঙ্কা আছে। নাভিতে সংক্রমের লক্ষণগুলো
চারপাশের চামড়ায় লাল দাগ হওয়া
নাভির চারপাশে ফোলা ভাব
নাভিতে চুলকানি হওয়া
নাভি থেকে হলুদ বা সবুজ তরল বা পুঁজ নির্গত হওয়া
জ্বর, অসুস্থ কিংবা ক্লান্ত বোধ করা
সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে যা করবেন
নাভিতে সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নাভিতে কী ধরনের সংক্রমণ হয়েছে, তা মূল্যায়ন করে তা থেকে প্রতিকারের উপায় চিকিৎসকই বলে দেবেন। নাভি ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক নাকি ইস্টের দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে এর ভিন্ন ভিন্ন চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। নিজে থেকে অনুমান করে চিকিৎসা করতে যাবেন না!
নাভির ভেতর পাথর সৃষ্টি হলে
নাভি যদি বেশ গভীর হয়, তাহলে সেখানে দীর্ঘদিন ধরে ময়লা জমে থাকতে পারে। ময়লা জমে সেখানে পাথরও সৃষ্টি হয় অনেক সময়। পাথর সৃষ্টি হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকেরা সাধারণত ফোরসেপ বা আংটা দিয়ে পাথর বের করে আনেন। নাভিতে পাথর হওয়ার আগে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না সাধারণত। তবে নিয়মিত নাভি সাবানপানি দিয়ে পরিষ্কার রাখলে পাথর সৃষ্টি হয় না।
সূত্র: উইকিহাউ
আপনার মতামত লিখুন :