স্থূলতা বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যগত উদ্বেগের বিষয়, যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করছে। এটি কেবল শারীরিক আকৃতিতেই প্রভাব ফেলে না বরং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ সহ বেশ কয়েকটি দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকিও বাড়ায়। স্থূলতা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর উপায়ের মধ্যে একটি হলো সুষম খাদ্যাভ্যাস। কী খাবেন এবং কী এড়িয়ে চলবেন তা জানা থাকলে ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। স্থূলতা নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সমন্বয় প্রয়োজন।
আপনার ওজন বেশি বা স্থূল কি না তা কীভাবে বুঝবেন?
বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) হলো একজন ব্যক্তির ওজন বেশি কি না তা নির্ধারণের জন্য একটি সাধারণ পরিমাপ। অতিরিক্ত ওজনকে ২৫ বা তার বেশি বিএমআই হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যেখানে স্থূলতাকে ৩০ বা তার বেশি বিএমআই হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। যদি আপনার বিএমআই অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার সীমার মধ্যে পড়ে, তাহলে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন কার্যকরভাবে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমানোর জন্য এই ৫ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে-
১. চিনিযুক্ত খাবার
চিনিযুক্ত মিষ্টি এবং প্রক্রিয়াজাত মিষ্টি স্থূলতার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এ ধরনের খাবার অতিরিক্ত খেলে চিনি শরীরে চর্বি হিসেবে জমা হয়, যার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়। উচ্চ ফ্রুক্টোজ গ্রহণ ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণও হয়, যা ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা আরও চর্বি জমাতে সাহায্য করে। মিষ্টি, ক্যান্ডি এবং মিষ্টান্ন খাওয়া কমানো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
২. ট্রান্স ফ্যাট এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার
বার্গার, ফ্রাই এবং পিজ্জার মতো ফাস্ট ফুডে ট্রান্স ফ্যাট থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এসব খাবারে খালি ক্যালোরি এবং অস্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরল থাকে যা ওজন বৃদ্ধি করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ইনস্ট্যান্ট নুডলস, পাস্তা এবং প্যাকেজজাত খাবারের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবারে অস্বাস্থ্যকর চর্বি এবং পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে বাধা দেয়। তাই এসব খাবারের বদলে টাটকা উপাদান দিয়ে ঘরে তৈরি খাবার বেছে নিন।
৩. পরিশোধিত শস্য
সাদা ভাত, সাদা রুটি এবং পাস্তার মতো পরিশোধিত শস্য প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থেকে বঞ্চিত হয়, ফলে সরল কার্বোহাইড্রেট থেকে যায় যা রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং চর্বি সঞ্চয় বৃদ্ধি করে। তাই এর পরিবর্তে লাল চাল, কুইনোয়া এবং গমের রুটির মতো হোল গ্রেইন বেছে নিন। যা ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ ধরে রাখে। এগুলো উন্নত হজম এবং দীর্ঘস্থায়ী শক্তি বৃদ্ধি করে। এ ধরনের খাবার অপ্রয়োজনীয় খাওয়া কমাতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৪. লাল মাংস
খাসির মাংস, ভেড়ার মাংস এবং গরুর মাংস সহ লাল মাংসে কোলেস্টেরল এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে, যা ওজন বৃদ্ধি এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ওজন কমানোর জন্য প্রোটিন অপরিহার্য তাই মুরগি, টার্কি, মাছ (যেমন স্যামন), টোফু এবং শিমের মতো চর্বিহীন প্রোটিন উৎস বেছে নেওয়া যুক্তিযুক্ত। এগুলো অস্বাস্থ্যকর চর্বি ছাড়াই উচ্চমানের প্রোটিন সরবরাহ করে।
৫. চিনি এবং বায়ুযুক্ত পানীয়
অনেকে তরল ক্যালোরি উপেক্ষা করে কেবল শক্ত খাবার গ্রহণের উপর মনোযোগ দেন। সোডা, আইসড টি, প্যাকেটজাত জুস এবং এনার্জি ড্রিংকসের মতো চিনিযুক্ত পানীয়তে লুকানো চিনি এবং খালি ক্যালোরি থাকে যা ওজন বৃদ্ধি করে। এই পানীয়গুলো পেট ভরায় না, যার ফলে অতিরিক্ত সেবনের প্রবণতা তৈরি হয়। পরিবর্তে, ডাবের পানি, লেবুপানি, ভেষজ চায়ের মতো স্বাস্থ্যকর পানীয় বেছে নিন। এই পানীয়গুলি আপনাকে হাইড্রেটেড রাখবে এবং বিপাক এবং হজমে সহায়তা করবে।
আপনার মতামত লিখুন :