পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে যোগদান করে তারপরেই দীর্ঘদিনের প্রেমিককে বিয়ে করেছেন মিতালী আনজুম। ভেবেছিলেন কিছুদিন নিজেরা সময় কাটিয়ে তারপরেই নতুন অতিথি আনবেন পরিবারে। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই দুই পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে বাচ্চা নেওয়ার তাড়া শুনতে শুনতে নিজেও বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। আসলেই কী ধীরে ধীরে সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা কমছে? সন্তান নেওয়ার উপযুক্ত বয়স আসলে কোনটা? বিষয়গুলো নিয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে কথা বলেছেন যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজের চিকিৎসক ও সহায় হেলথ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডা. তাসনিম জারা।
তাসনিম বলেন, অনেকেই হয়তো শুনে থাকবেন যে ৩০ বছর বয়সের আগে বাচ্চা নিয়ে নেওয়া উচিত। তবে মোটা দাগের এই উত্তরটি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। একটি দম্পতির জীবনের লক্ষ্য, পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, আর্থিক অবস্থা- এমন অনেকগুলো ব্যক্তিগত বিষয়ের ওপরে সন্তান নেওয়ার আদর্শ সময় নির্ভর করে। আবার তারা কয়টি সন্তান চান সেটার উপর নির্ভর করেও উপযুক্ত বয়স বদলে যেতে পারে। তবে কিছু বিষয় জানা থাকলে সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।
৩০ বছর বয়স পর্যন্ত নারীদের সন্তান ধারণের ক্ষমতা খুবই ভালো থাকে। এরপরে তা দ্রুত কমতে শুরু করে। ৩৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর এটি আরও অনেকখানি কমে যায়। পুরুষের ক্ষেত্রে ৫০ বছর বয়সের আগে প্রজনন ক্ষমতা খুব একটা কমে না। এর পেছনে কারণও রয়েছে। একটি ছেলে শিশু শরীরে শুক্রাণু নিয়ে জন্মায় না, বয়ঃসন্ধিকালে দেহে শুক্রাণু তৈরি হওয়া শুরু হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের শরীরে প্রতিদিন প্রায় ৩০ কোটি শুক্রাণু তৈরি হয়। কিন্তু মেয়ে শিশু জন্মের সময়ে নির্দিষ্টই সংখ্যক ডিম্বাণু নিয়ে জন্মে। সেটাই পরবর্তী জীবনে তার সন্তান ধারণের পুঁজি। প্রতি মাসিক চক্রে একটি করে ডিম্বাণু পরিপক্ব হয়, এর সাথে আরও কিছু ডিম্বাণু এই প্রক্রিয়ায় পরিপক্ব হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বয়সের সাথে সাথে ডিম্বাণুর সংখ্যা কমতে থাকে। জন্মগ্রহণের সময়ে একজন মেয়ে শিশুর ডিম্বাশয়ে প্রায় ১০ লাখ থেকে ২০ লাখ ডিম্বাণু থাকে, ৩৭ বছর বয়সে তা কমে মাত্র ২৫ হাজারে গিয়ে পৌঁছে।
যদি কোনও দম্পতি একটি সন্তান চান, তবে ৩২ বছর বয়সে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা শুরু করলে তাদের সফলতার সম্ভাবনা থাকে ৯০ শতাংশ। এরপর থেকে সেই সম্ভাবনা আস্তে আস্তে কমে যাবে। ৩৭ বছর বয়সে গর্ভধারণের সম্ভাবনা নেমে আসে ৭৫ শতাংশে। আর ৪১ বছর বয়সে তা ৫০ শতাংশে নেমে যায়। কেউ যদি দুইয়ের অধিক সন্তান চান, তবে তাকে চেষ্টা শুরু করতে হবে আরও আগে থেকে।
সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ সফলতার সম্ভাবনা চাইবেন, নাকি ৭৫ বা ৫০ শতাংশ-এটা একান্তই একটি দম্পতির নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কেউ কেউ সর্বোচ্চ সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দেন। কেউ আবার জীবনের বিভিন্ন অবস্থা বিবেচনা করে ৭৫ শতাংশ সম্ভাবনা থাকার সময়টাকে বেছে নেন। তবে সন্তান নেওয়ার আগে কোনও ধরনের ঝুঁকি আছে কিনা সেগুলো খতিয়ে নেওয়া জরুরি। অনিয়মিত পিরিয়ড, পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা ফাইব্রয়েডের (জরায়ুর টিউমার) মতো সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :