আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় ৩ বছরে একদিনও অফিস না করে লাখ লাখ টাকা বেতন পকেটে তুলেছে সেলিম রেজা নামের এক কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইসসিপি)। শুধু তাই নয় এই কমিউনিটি ক্লিনিকের বরাদ্বকৃত ঔষধ বিক্রয় করেও লাখ লাখ টাকা কামিয়েছেন তিনি। তার বসত বাড়ির অদুরেই মহিশুরা বাজারে নিজস্ব একটি ফার্মেসী ছিল। ঔষধ বিক্রয়ের ব্যবস্থা হতো এই দোকান থেকেই। তবে উর্ধতন কর্মকর্তাদের হাত ছিল তার মাথায়। এমনকি তাদের সহযোগিতায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে সেটিও কাজে লাগিয়েছেন এই নেতা। এছাড়া স্থানীয় বেশকিছু যুবককে চাকরি দেয়ার নামে প্রায় ১ কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছে সে। এঘটনায় এই নেতাকে স্থানীয়রা আটক করে গরু বাধাঁর রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে রাখার ঘটনাও রয়েছে। ওই অঞ্চলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল সে। তবে গত ৫ আগষ্ট ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে পালিয়ে রয়েছে।
বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোপাল নগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ছিলেন সেলিম রেজা। তার অনুসারিদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন একটি সন্ত্রাস বাহিনী। নানা ধরনের অপরাধের মাষ্টারমাইন্ডার ছিল তিনি। বিভিন্ন সময় গুরুতর অপরাধাধ করলেও থানায় তার নামে মামলা করতে দেয়নি প্রভাবশালী নেতারা। এতে করে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে সে। একপর্যায়ে উর্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিগত ৩ বছর অফিস না করেও শতভাগ হাজিরা দেখিয়ে একটি প্রত্যয়ন পত্রও অর্জন করেছে। যা দিয়ে আদালতে তার একটি ব্যাক্তিগত মামলা লড়াইয়ের প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অতি সুন্দর ও চকচকেভাবে তৈরি ক্লিনিকটির বারান্দা বেশ পরিস্কার। কারন এখানে আস্তানা গেরেছে এক পাগল। কাচের জানালা দিয়ে দেখা যায় ক্লিনিকের ভেতরে চেয়ার, টেবিল আলমিরাসহ প্রয়োজনীয় সকল জিনিস পত্র ও দুই-চারটি ঔষধ। তবে দামি দামি এসব আসবাপপত্র ইতিমধ্যে নষ্ট হতে শুরু করেছে। অনুসন্ধানে যাওয়ার পর চলে আসে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক শামিম হোসেন। তিনি বলেন গত তিন বছরে ১০ দিনও খুলতে দেখিনি এই ক্লিনিক। সেলিম রেজা নামের এক ব্যক্তি এখানে দায়িত্বে আছেন। এখানে পুরাতন ক্লিনিকটি থাকতে মাসে দু-একদিন দেখা যেতো কিন্তু নতুন এই স্থাপনা হওয়ার পর একদিন এসেছিল। তার পরে আর দেখিনি। তবে দুই-তিন মাস পর পর এক ভদ্র মহিলা এখানে আসে কিন্তু ক্লিনিক খোলেননা। আমার স্কুল থেকে চেয়ার টেবিল চেয়ে নিয়ে ঘন্টাখানেক বসে থেকে চলে যায়। অর্থাৎ কোন সুবিধাই পায়না স্থানীয়রা। প্রধান শিক্ষক আরো বলেন আমার বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী কাম দপ্তরি পোষ্টে চাকরি দেয়ার কথা বলে স্থানীয় এক যুবকের কাছে থেকে কয়েক লক্ষ টাকাও নিয়েছে সেলিম রেজা নামের এই ব্যক্তি। এঘটনায় সে স্থানীয় ভাবে অপমানও হয়েছে বলে শুনেছি। এছাড়াও আরো বেশকিছু মানুষের কাছে থেকেও নাকি টাকা নিয়েছে।
ওই শিক্ষকের সাথে কথা বলতেই বেশ কিছু যুবক ও মুরুব্বীরা চলে আসে। এসময় স্থানীয় বুলবুলি খাতুন নামের এক নারী বলেন কয়েক বছর আগে থেকে এখানে কেউ আসেনা। অন্যান্য গ্রামের মানুষ ওখানকার ক্লিনিক থেকে ঔষধ পায় কিন্তু আমাদের এখানেতো খোলেইনা। তাহলে এইটা দিয়ে লাভ কি। তুলে নিয়ে যাইতে কন। সন্তোষ আলী শেখ নামের এক বৃদ্ধ বলেন। খোলেইনা ঔষধ দিবে কনে থেকে। হামোগেরে মাথাব্যাথা, জ্বর, পেট ব্যথা হয় ঔষধতো আর পাইনে। এক বৃদ্ধ বলেন সেলিম রেজা একজন চিটার এহানকার কতো লোকের থেকে টাকা নিছে তা ওই জানে। এর আগে তাকে ধরে দিনভর বেঁধে রেখেছিল। মারধোর খেয়ে চলে গেছে তার পর আর আসেইনি।
স্থানীয় কয়েকজন যুবক ও কিশোররা বলে আমরা ঔষধ নিতে আসলে দুর-দুর করে তারিয়ে দিত। কোন সময় দুই চারটি ঔষধ দিলেও সেগলো ছিল ডেড ওভার। এক যুবক বলে ২৪ সালে একবার অফিস খুলছিল, ওইসময় আমার জ্বর হইছিল, আমি আইছিলাম কয়েকটা বড়ি দিছিল খেয়ে জ্বর আরো বেশি হইছিল। পরে এক ডাক্তার দেখে কইছিল এগুলোতো ডেডওভার।
এসব বিষয়ে জানতে সেলিম রেজার মুটোফোনে একধিকবার যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে মহিশুড়া গ্রামে তার নিজ বাড়িতে পৌঁছে কাউকেই পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কথা হয় ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাজ্জাদ কাদিরের সাথে। তিনি বলেন, সিএসসিপিদেরকে আমরাও চাপ দিতে পাচ্ছিনা। কারন গত জুন মাস থেকে তাদের বেতন নেই। ঔষধ দেয়া হয় কিনা এবং বিগত দিনে বেতন পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন। বিগত দিনে বেতন পেয়েছে। ঢাকা থেকে ঔষধের বক্স এসে তাদের কাছে চলে যায় আমরা ওসব দেখিইনা। এই কর্মকর্তার রুমে বসে থাকা মনির হোসেন নামের এক মেডিকেল অফিসার বলেন কমিউনিটি ক্লিনিকের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। তাদের একটি স্থানীয় কমিটি আছে তারাই ওইসব নিয়ন্ত্রন করেন। ওই এলাকার ওয়ার্ড মেম্বরই এটার সর্বেসর্বা। আমরা ওসব দেখিওনা, জানিওনা।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আহসান হাবীবের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমাদের সাথে কমিউনিটি ক্লিনিকের কোন সম্পর্ক নেই। এটি দেখাশুনা করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। এটা তাদের নিয়ন্ত্রণে। পরিবার পরিকল্পনার পক্ষ থেকে একজন এফ ডব্লিউ এ দেয়া থাকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, থাকে কিন্তু এ বিষয়ে আমি জানিনা। এসময় এই কক্ষে উপস্থিত পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ বগুড়ার সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যদি কোন দোকান খোলা না থাকে তাহলে সেখানে কাষ্টমার যাবে কিভাবে। অর্থাৎ আমাদের এফ ডব্লিউ এ হলো কাষ্টোমার আর দোকানদার হলো কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার।
আপনার মতামত লিখুন :