লালমনিরহাটে শীতের প্রকোপের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠান্ডাজনিত রোগ। গত কয়েক দিনে শহরের ক্লিনিক ও লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে বয়স্ক ও শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে চিন্তিত অভিভাবকরাও। ঠান্ডাজনিত রোগের কারণে গত কয়েক দিনের মধ্যে লালমনিরহাট সদরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ৩০০ জনেরও বেশি শিশু ও বয়স্ক রোগীকেকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এতে সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে জায়গা সংকট দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, লালমনিরহাটের হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলোতে আসনের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। শিশু ওয়ার্ডের ২টি ইউনিটে ৪০ শয্যার বিপরীতে চিকিৎসা নিচ্ছেন দ্বিগুণেরও বেশি রোগী। অন্যদিকে চাপ রয়েছে হাসপাতালের বহির্বিভাগেও। বেড না পেয়ে এই তীব্র শীতে অনেকেই ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীর স্বজনেরা জানান, শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগ। জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত নানান রোগে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, শীতের প্রকোপের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠান্ডাজনিত রোগ। তাই নিউমোনিয়া, জ্বর,সর্দি-কাশি, ও শীতকালীন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বেড়েছে। আক্রান্ত হওয়া শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন তাদের বাবা-মায়েরা। এদিকে শিশুদের পাশাপাশি নানা বয়সী নারী-পুরুষরাও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে হাসপাতালটিতে প্রতিদিন বাড়ছে ঠান্ডায় আক্রান্ত রোগীর চাপ। তাদের কারো কারো পরিস্থিতি যথেষ্ট জটিল।সচেতনতার অভাবে প্রতিবছরই এমন চিত্র দেখা যায়। এসব রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই।
লালমনিরহাট সদরের মোগলহাট ইউনিয়নের রুবিনা আক্তার (৩৬) বলেন, আমার ২ বছরের ছেলেকে দুই দিন হলো হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। বেড না পাওয়ায় বারান্দার মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি । ঠান্ডার কারণে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, মনে হচ্ছে হাসপাতালে ওষুধের সংকট আর তাই বেশি দাম দিয়ে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে।
লালমনিরহাট শহরের বালাটারী এলাকার মজিবর মিয়া (৩৫) জানান, হঠাৎ করে ঠান্ডা বেশি পড়ায় তার ছেলে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হয়। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এখন আগের থেকে কিছুটা সুস্থ মনে হচ্ছে।
হাসপাতালে শিশু সন্তানকে নিয়ে আসা অভিভাবক তাসলিমা পারভীন (৪২) জানান, ঠান্ডার কারণে তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ডাক্তার বলেছেন নিউমোনিয়া হয়েছে সেজন্য ভর্তি করেছি। মনে হচ্ছে দু-একদিনের মধ্যে সুস্থ্য হয়ে উঠবে।
হাসপাতালে নবজাতক ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তপন কুমার রায়ের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শীতের কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ করে বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। যেসব রোগীর অবস্থা আশংকাজনক আমরা শুধু তাদেরকেই ভর্তি করি। এখানে যারা ভর্তি রয়েছেন তাদের বেশির ভাগই সর্দি-জ্বর, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী। এছাড়াও অনেকের শ্বাসকষ্ট,হাঁপানি ও খিচুনি রয়েছে। ঠান্ডার এই সময়ে বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের রক্ষা করতে হলে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এই ঠান্ডায় যথাসম্ভব গরম পানি পান করাতে হবে। আর অসুস্থ হলে তাজা ফলমূলের রস, শাকসবজি ও পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি করে খাওয়াতে হবে।
লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোঃ আব্দুল মোকাদ্দেম এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা প্রতিবছরই এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা সার্বক্ষণিক চিকিৎসা প্রদান করে চলেছেন।
এই সময়টাতে ধুলাবালি বেশি থাকায় যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তারা দ্রুত রোগাক্রান্ত হয়। বর্তমানে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি রয়েছে। রোগে প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে। শিশুদের কোনভাবেই ঠান্ডা লাগানো যাবে না। সেই সাথে শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি ভিটামিন জাতীয় খাবার খাওনোর পরামর্শ দেন। শিশু ও বয়স্কদের বিশেষ যত্ন নেয়ার পরামর্শ দেন।
আপনার মতামত লিখুন :