সড়ক দূর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা দিতে ঢাকার ধামরাইয়ে ১২ বছর বা এক যুগ আগে তিন তলা বিশিষ্ট্র ট্রমা সেন্টারের ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। কিন্তু আজও ওই সেন্টারটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের কাছে। দীর্ঘদিন অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থেকে ভবনের দেয়ালের বিভিন্ন অংশের পলেস্তারা খসে পরছে। সেই সাথে জানালা ও লোহার কেচিগেট গুলোতে ধরেছে মরিচা। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের ট্রমা সেন্টার ভবনটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধামরাই পৌরশহরের ইসলামপুর এলাকায় উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরেই নির্মিত হয়েছে ট্রমা সেন্টারটি। ভবনটির মূল ফটকে ঝুলছে তালা। ফটকের সামনে কয়েকটি ভাঙা চেয়ার ও একটি টেবিল নোংরা অবস্থায় পরে আছে। সামনে জমে আছে ময়লা আবর্জনার স্তূপ। লোহার কেঁচি গেটে মরচে পড়েছে। ভবনটির ভেতরের বিভিন্ন অংশে দেখা যাচ্ছে ধুলোবালির পুরো আস্তরণ। ভবনের ভেতর ও বাইরের দেয়ালে লতা পাতা গজিয়ে গেছে। ছাঁদে বেড়ে উঠেছে ছোট আকৃতির গাছ। ভবনটির দ্বিতীয় তলার কার্ণিশে ৫টি এসির বাইরের অংশে জমে আছে ধুলোবালি। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো সন্ধ্যা নামতে না নামতেই ভবনের পেছনে মাদক সেবীদের আড্ডা বসে বলে জানান স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। দেখভালের লোক না থাকায় প্রায় ২ কোটি টাকার ট্রমা সেন্টারের ভবন এখন নিজেই রোগী হয়ে বসে আছে। আজও কি ভবনটি চালু হবে কি না, দূর্ঘটনায় আহতরা চিকিৎসা সেবা পাবে, না সবই শুভঙ্করের ফাঁকি। অপরদিকে ভবনের ভিতর এসি, ইলেকট্রিক্যালের তাড়সহ সব কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে।
জানা যায়, ২০০৮ সালের মার্চে প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা নির্মাণ ব্যয়ে ৩ তলা বিশিষ্ট ট্রমা সেন্টারটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১২ সালে। কিন্তু ওই সময় ট্রমা সেন্টারে সোলার প্লান্ট স্থাপন করা হয়নি, বৈদুতিক সংযোগ ও নিরাপত্তা বাতি নেই, লিংক করিডোরের কাজ রয়েছে অসমাপ্ত, অ্যাপ্রোচ সড়কে কার্পেটিং করা হয়নি। সেই অবস্থায় ভবনটি বুঝে নেওয়ার জন্য ওই সময়ের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে জানান গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাজ সমাপ্ত করে হস্তান্তরের জন্য অনুরোধ জানান। ওই সময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে গণপূর্ত বিভাগকে একাধিক বার অসম্পন্ন কাজ শেষ করে ভবনটি হস্তান্তরের অনুরোধ জানানো হলেও এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয় নি গণপূর্ত বিভাগ।
অপরদিকে ট্রমা সেন্টারটি প্রায় ১২ বছর আগেই বিদ্যুৎ সংযোগ দিলেও মিটারের কোন বিদ্যুৎ বিলের কপি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পায় নি। অথচ বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেই বিল এসেছে প্রায় ১২ লক্ষ টাকার মতো। একদিকে ট্রমা সেন্টারটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বুঝে পায় নি অপরদিকে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে বিদ্যুৎ বিলের মোটা অঙ্কের টাকা রয়েছে বকেয়া।
ট্রমা সেন্টারটি ঢাকা আরিচা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। প্রায় ১২ বছর ধরে ট্রমা সেন্টারটি চালু না থাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তাদেরকে সাভার অথবা ঢাকায় চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা হয়। সড়ক দূর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
পায়ে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা আনিসুর রহমান স্বপন নামে এক ব্যক্তি বলেন, মহাসড়কের পাশেই ট্রমা সেন্টারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দির্ঘ্য সময় ধরে নির্মিত ভবনটি পরে আছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রয়োজনীয় মালামাল। অতিদ্রুত ট্রমা সেন্টারটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দিলে দূর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিতে পারবেন।
হাসপাতালের পাশে বসবাস করেন জসিম নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ১০/১২ বছর ধরে ট্রমা সেন্টারটি নির্মাণ করে ফেলে রেখেছে। সমস্যা কি আমরা জানি না। সন্ধ্যা হলেই মাদকসেবিদের আড্ডা বসে।কিছু তেই এ সব থামানো যাবে না। যদি ট্রমা সেন্টারটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয় তাহলে দূর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের আর ঢাকায় যেতে হবে না। এখানেই চিকিৎসা নিতে পারবে অল্প সময়ের ভিতরে।
ইমরান হোসেন নামে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ট্রমা সেন্টার ভবনটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কি নাগাদ চালু হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তবে সন্ধ্যার পর হতেই মাদকসেবিদের আড্ডার জায়গায় পরিনত হয়ে থাকে। কোটি টাকার ভবনটি অতিদ্রুত চালু করা দরকার।
এ ছাড়াও জানা যায় সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার নূর রিফফাত আরা ট্রমা সেন্টারটি বুঝে পেতে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে একাধিক বার প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগকে জানাবেন এভাবেই কেটে যায় দির্ঘ্য সময়। ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও গণপূর্ত বিভাগের চিঠি চালাচালি করতেই প্রায় ১২ বছর বা একযুগ সময় পার হয়ে গেছে। কিন্তু সূরাহর কোন পথই বের হয় নি।
বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফারসিম তারান্নুম হক বলেন, বর্তমানে আমাদের ২০ শয্যা বিশিষ্ট ট্রমা সেন্টারটি চালু করতে বিদ্যুৎ বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের একত্রে কাজ করতে হবে। ট্রমা সেন্টারের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করছি। স্বাস্থ্য বিভাগের উর্র্ধধতন কর্মকর্তারা ট্রমা সেন্টারটি চালু করার জন্য চিন্তিত। তবে অতিদ্রুত এই ট্রমা সেন্টারটি চালু করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আপনার মতামত লিখুন :