রাংগামাটি জেলার লংগদু উপজেলার এক দেড় লাখ প্রান্তিক পর্যায়ের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর চিকিৎসার ক্ষেত্রে একমাত্র ভরসার স্থল হচ্ছে লংগদু সরকারী হাসপাতাল। প্রতিনিয়ত এসব এলাকার সাধারণ মানুষ গুলো ভীড় জমায় লংগদু সদর হাসপাতালে। কিন্তু হাজারো আশা এবং অসুস্থ শরীরে জীবন বাঁচানোর স্বপ্ন নিয়ে যখন হাসপাতাল আসে তখনি ঘটে বিপত্তি।
হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল দশটায় হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেক বেশী এবং একজন চিকিৎসক দ্বারাই চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে সম্পুর্ণ হসপিটালের। বাকি চিকিৎসক কোথায় জানতে চাইলে, হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তা শাহীন হোসেন বলেন, ডাক্তাররা লংগদুরের মত জায়গায় এসে কি বসে থাকবে। তাদের এখানে কি ফেসিলিটি আছে। অভিযোগ রয়েছে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশ্ন করা হয়, অ্যাম্বুলেন্স এর ড্রাইভার প্রায় নেশা করে বা বিভিন্ন অন্যায় করে। তিনি উত্তরে বলেন, নেশা করা এটা পাহাড়ীদের অভ্যাস। এটা আসলে বলার কিছু নাই। তাহলে কি তিনি পাহাড়ীদের ছোট করেছেন? নাকি ড্রাইভারকে নেশা করে গাড়ি চালাতে সহযোগীতা করছেন এসব বিষয়ে জনমনে জেগেছে নানান প্রশ্ন।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী জাহাঙ্গীর নামের ভদ্রলোক তিন মাসের একজন ছোট শিশুকে ইনজেকশন দিচ্ছে। অনেকেই বলছে এধরণের কার্যক্রম প্রতিনিয়ত চলে। এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান কর্মকর্তা শাহীন হোসেন বলেন, তিনি দীর্ঘদিন যাবত এই কাজের সাথে জড়িত তাই এসব কাজে তার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবে অফিসিয়ালি এধরণের নিয়ম নাই।
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে লংগদু হাসপাতালের টি এইস ও ডাক্তার শাহীন কে ইমারজেন্সি একজন গর্ভবতী বোনের জন্য জরুরি অ্যাম্বুলেন্স এর প্রয়োজনে মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কল দেওয়ার পরও তিনি ফোন রিসিভি করেনি। একই সময় হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার মামুন কে ফোন করলে তিনি ও কল ধরেনি। পরবর্তীতে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের ডাক্তার বিধান কে ফোন করলে তিনি জরুরি বিভাগে এসে যোগাযোগ করতে বলে, কিন্তু জরুরি বিভাগে এসে তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে রোগীর অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত স্পিড বোট ভাড়া করে রাঙ্গামাটি পাঠানো হয়। জনমনে প্রশ্ন এখানেও এম্বুলেন্স টির কাজ তাহলে কি?
এসব বিষয় জানতে সরাসরি হসপিটালে পৌঁছালে ডাক্তার শাহীন হোসেনকে অফিসে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে উপরোক্ত বিষয় গুলো বলা শুরু করলে তিনি প্রতিনিধিকে বলেন কাহিনী না করে মেটার বিষয় বলেন। পরবর্তীতে অ্যাম্বুলেন্স এর বিষয় বিস্তারিত বল্লে তিনি বলেন,আপনাকে যখন জরুরি বিভাগে আসতে বলছে, আপনি এসে অপেক্ষা করতেন। তখন প্রতিনিধি রোগীর অবস্থার কথা জানালে, তিনি বলেন জরুরি বিভাগে ডাক্তার সারাক্ষণ বসে থাকবেনা সে বাহিরে বা বাড়িতেও থাকতে পারে।
এ ছাড়াও মাইনী মুখ ইউনিয়নের গাঁথাছড়া গ্রামের নুর শাহিদ ও নুর কবির তারা অভিযোগ করে বলেন, গত সপ্তাহে আমার মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা রাবেতা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে লংগদু হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারকে কল দিলে তিনি বলেন গাড়িতে তেল নাই। কিন্তু মাকে বাঁচাতে আমরা তেল দিবো বল্লেও ড্রাইভার আসবে আসতেছে বলে আমাদের সময় নষ্ট করেছে। পরবর্তীতে আমার মা এখানেই মারাগেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও যথাযথ বিচার চাই।
এ সব বিষয়ে ডাক্তার শাহিনকে বল্লেও তিনি তেমন কোন পাত্তা দেয়নি। এর আগেও হাসপাতালের একজন স্টাফ এর বিরুদ্ধে দরপত্র টেন্ডার বিহীন দরজা জানালার বিক্রি অভিযোগ উঠলে তিনি নয়ছয় বলে সমাধান করেন। সব শেষে যখন প্রতিনিধি তাকে বলেন, আপনার বলা কথা গুলো রেকর্ড হয়েছে নিউজে আমি এভাবেই ধরবো,আপনাকে জানিয়ে রাখলাম। পূর্বে করা একটি নিউজের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেন এর আগেও আপনি একটি নিউজ করেছেন, নিউজ করেন।
লংগদু উপজেলার স্থানীয় সচেতন মানুষ বলছেন, হাসপাতালে গেলে কোনরকম সহযোগীতা পায়না ভুক্তভোগীরা। ডাক্তার কোনরকম দেখে বাহির থেকে ঔষুধ ক্রয় করতে বলে। কোনরকম ভালো পরীক্ষা তারা করেনা। তারা বলছেন প্রায় ২৮/২৯ বছর ধরে এক্সরে রিপোর্ট ম্যান রয়েছে, মেশিনও আছে অথচ ম্যান এবং ম্যাশিন দুটির কোনটির কোন কাজই হাসপাতালে নাই। কিন্তু এক্সরে ম্যান ঠিকই সরকারী বেতন ভাতা খেয়ে যাচ্ছেন। লংগদু উপজেলার সাধারণ মানুষের পাশে দাড়াতে প্রভাবশালী ও দায়িত্বহীন কর্তৃপক্ষর অপসারণ চায় তারা।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি সিভিল সার্জন নুয়েন খিসা বলেন, যেহেতু বিষয়টি আপনি আমাকে অবগত করেছেন খোঁজখবর নিয়ে ব্যাবস্থা নিচ্ছি।
আপনার মতামত লিখুন :