Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

সৈয়দপুরে বিশ্বের একমাত্র ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি অবশেষে বন্ধ


দৈনিক পরিবার | মো. মারুফ হোসেন লিয়ন জুন ৩০, ২০২৪, ০৮:৫৩ পিএম সৈয়দপুরে বিশ্বের একমাত্র ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি অবশেষে বন্ধ

নীলফামারীর সৈয়দপুরে দাবি করা হয় বিশ্বের একমাত্র ফাইলেরিয়া হাসপাতাল। আসলে এ হাসপাতালটি বিশ্বের একমাত্র কি না তা রহস্য ঘেরা। তবে অনেক চিন্তা ভাবনার পর এ হাসপাতালটি তৈরি করেন প্রফেসর ডাঃ মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি সৈয়দপুর শহরের ধলাগাছ কামারপুকুর এলাকায় এটি নির্মাণ করেন। ওই সময় তিনি নিজে কিছু জমি ক্রয় করেন এবং বাকি জমি ওই এলাকার সমাজসেবক মরহুম কবির সরদার হাসপাতালকে দান করেন। এরপর শুরু হয় ভবন নির্মাণ কাজ। সে সময় সৈয়দপুরবাসি আনন্দে ছিল আত্মহারা। কারণ গোদ রোগ সবচেয়ে বেশি উত্তর অঞ্চলে। যার কারণে হাসপাতালটি সৈয়দপুরে করা।হাসপাতাল ভবন নির্মাণ হল। নিয়োগ করা হল লোকবল। অত্যন্ত সুন্দর ভাবে চলতে থাকলো চিকিৎসা সেবা। অল্প খরচে চালু হল বেশ কয়েকটি অপারেশন।হঠাৎ করে ওই এলাকার কিছু লোক যারা হাসপাতালে নিয়োগ পেয়ে শুরু করে অনিয়ম।
অপারেশনে বাড়তি টাকা গ্রহণ। গাসপাতালের ওষুধ চুরি। এ্যাম্বুলেন্স ভাড়ায় খেটে তার টাকা জমা না করণ। এমনি বিভিন্ন অনিয়মের বেড়াজালে বন্দী হয়ে পড়ে পরিচালক। এক পর্যায় মামলা পাল্টা মামলা হয়। এরইমধ্যে অনেকে বেতন ভাতা না পাওয়ায় চাকুরী ছেড়ে চলে যান।
এভাবে হাসপাতালটি পরিণত হয় গোচারণ ভূমিতে।
তারপরও কয়েক দফায় হাসপাতালটি চালুর উদ্যোগ নেয় এলাকার লোকজন। কিন্তু মুল পরিচালক প্রফেসর ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন মনোক্ষুন্ন হয়ে ঢাকায় অবস্থান করেন। তিনি হাসপাতাল নিয়ে আর কোন কথা বলেন না। তবে তিনি নতুন করে আর একটি ফাইলেরিয়া হাসপাতাল নির্মাণ করেন ঢাকা সাভারে। তারপর থেকে সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া হাসপাতাল পড়ে থাকে।
দীর্ঘ কয়েক বছর এভাবে পড়ে থাকার পড় ওই হাসপাতালটি মুল পরিচালকের সাথে চুক্তি করে রংপুর পীরগঞ্জের রাকিবুল হাসান তুহিন নামে এক ব্যক্তি। তিনি চুক্তিতে নেয়ার পর প্রথমে হাসপাতালটির নাম পরিবর্তন করে রাখেন সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ল্যাব। এরপর দেন বিভিন্ন পদে নিয়োগ। সে সময় নিয়োগে অর্থ বাণিজ্যের কথা ওঠেছিল। আকর্ষণীয় বেতনে নিয়োগ দেয়া হলেও পরে তাদের বেতন নিয়ে ছিল তালবাহানা। এরইমধ্যে আবার শুরু হয় গন্ডোগোল। হয় মামলা মোকদ্দমা।
এভাবে আবার হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে যায়। তারপর হঠাৎ করে চুক্তিকারী ব্যক্তি রাকিবুল হাসান তুহিন নতুন করে আবার লোকবল নিয়োগ দেন। পত্রিকার ওই নিয়োগের ফটোকপি প্রচার করেন সৈয়দপুরসহ নীলফামারী জেলার বিভিন্ন হাটে বাজারে।
এ বিষয়টি নজরে আসে স্বাস্থ্য বিভাগের। তাই তদন্তে এসে অনুমোদন না থাকায় সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ল্যাবটি সিলগালা করে দেয় নীলফামারী জেলা সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল।
উল্লেখ্য ২০০২ সালে জাপান সরকারের অর্থায়নে জেলার সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ এলাকায় যাত্রা শুরু করে হাসপাতালটি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইম্যুনোলজি (আইএসিআইবি) হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে ছিল। হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন ওই সময় স্থানীয়ভাবে ১৮ দেশি-বিদেশি চিকিৎসককে নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে সুফলতা বয়ে আনেন।
এ ছাড়াও জাপান, কানাডা ও বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় দুটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। কানাডা ও জাপানসহ অন্যান্য দেশ থেকেও গবেষণাকর্মীরা আসেন এখানে। তবে ২০১২ সালে হাসপাতালটিকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে সংকট ও সমস্যার সৃষ্টি করা হয়। হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির বিবাদে ভেঙে পড়ে সেবা কার্যক্রম। এ কারণে মুখ ফিরিয়ে নেয় দাতা সংস্থাগুলো। দেশের একমাত্র এই ফাইলেরিয়া হাসপাতালের কার্যক্রম মুখ থুবরে পড়ে।
পরে ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে নামমাত্র টোকেন মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার প্রত্যয়ে হাসপাতাল অ্যান্ড ল্যাব নামে নতুন করে যাত্রা শুরু করে।
বাংলাদেশ প্যারামেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান আইএসিআইবি-এর সঙ্গে ভুয়া চুক্তিনামা দেখিয়ে এর কার্যক্রম চালিয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন জেলা থেকে নতুন করে ১০১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তখন চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে ফেরতযোগ্য জামানতের কথা বলে নেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত। একপর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্তরা বেতন-ভাতা না পেয়ে চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। কিন্তু গত ২৬ মে প্রতিষ্ঠানটি পত্রিকায় আবারও ২৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় প্রতারণার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে।
ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আমরা জানতে পারি, এই ফাইলেরিয়া হাসপাতাল অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ল্যাবের কোনো অনুমোদন নেই। এ ছাড়াও হাসপাতালে নিয়মিত কোনো চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীসহ যেসব সুবিধা থাকা দরকার সেগুলোর কিছুই নেই। তাই হাসপাতালটি ১২ জুন সিলগালা করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাশার, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডা. আতিয়ার রহমান শেখ, সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. আলতাফ হোসেন প্রমুখ।

Side banner