চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ সুষম খাদ্যাভ্যাস প্রয়োজন। যেসব খাবারে ভিটামিন এ, সি, ই, এবং খনিজ উপাদান যেমন- জিংক, পাশাপাশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যেমন- লুটেইন, জিয়াক্সানথিন এবং ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে- এমন খাবার খাওয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। এসব খাদ্য উপাদান চোখের দৃষ্টি এবং বয়সজনিত চোখের রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
ভিটামিন এ
অল্প আলোতে চোখের দৃষ্টির জন্য ভিটামিন-এ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চোখের রেটিনার অল্প আলোতে দেখার জন্য ‘রড’ কোষের বেড়ে ওঠার জন্য ভিটামিন-এ প্রয়োজন। এই ভিটামিনের অভাবে ‘নাইট ব্লাইন্ডনেস’ বা রাতকানা রোগ হতে পারে। এছাড়াও চোখের বাইরের যে স্বচ্ছ স্তর আছে, যার নাম ‘কর্নিয়া’ এবং চোখের সাদা অংশের উপরিভাগে এক ধরনের আধা-স্বচ্ছ স্তর, যার নাম ‘কনজাঙ্কটিভা’ গঠনেও ভূমিকা রাখে। ভিটামন-এ চোখ ছাড়াও ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান হিসেবেও কাজ করে এই ভিটামিন; যা শরীরের কোষ সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে।
যেসব খাবারে পাওয়া যায়: গাজর, মিষ্টি আলু, কুমড়া, ব্রকলি, টমেটো, লাল মরিচ, সবুজ শাক সবজি, ডিম, মাছ বিশিষ করে ছোট মাছ, মাছের তেল, দুধ-জাতীয় খাবার এবং কলিজাতে।
ভিটামিন সি
এই ভিটামিন অনেকটা চোখের সানস্ক্রিনের মতো কাজ করে। ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চোখকে সুরক্ষা দেয়, চোখের ছানি রোগ প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে। ভিটামিন-সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। তাই বয়স-জনিত চোখের রোগ প্রতিরোধেও কাজ করে। চোখ ছাড়াও কোষের ভেতরকার নিউক্লিয়াস, ত্বক ও হাড়ের কোলাজেনকে সুরক্ষা দেয়। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। অর্থাৎ মস্তিষ্কের ‘নিউরোট্রান্সমিটার’য়ের চলাচল ও তথ্য আদান-প্রদানে এটি ভূমিকা রাখে। রক্তের হিমোগ্লোবিন-এর লৌহ শোষণে ভিটামিন-সি’র ভূমিকা রয়েছে। রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমায়। ফলে ‘গাউট’ রোগের ঝুঁকি কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে- এই ভিটামিন ক্যান্সার প্রতিরোধ ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে। আর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ভূমিকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
যেসব খাবারে পাওয়া যায়: ভিটামিন সি’র প্রধান উৎস লেবুজাতীয় ফল। যেমন- কাগজি লেবু, বাতাবি লেবু, কমলা। এছাড়া পেয়ারা, পেঁপে, আঙুর, আনারস, তরমুজ, জাম ও আমলকীতেও প্রচুর ভিটামিন সি’র রয়েছে। শাক-সবজি, টমেটো, পালংশাক, বাঁধাকপি, আলুর খোসা, কাচা মরিচ, পুদিনা পাতাতেও ভিটামিন সি পাওয়া যায়। দুধেও খুবই সামান্য পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।
ভিটামিন ই
চোখের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। চোখের ‘ফ্রি র্যাডিক্যাল’য়ের ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে। চোখের ছানি রোগ প্রতিরোধে এবং বয়স-জনিত চোখের রেটিনার রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রেটিনার রোগের জন্য দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে অন্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এই ভিটামিন শুধু চোখের নয় সারা শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক ও চোখের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
যেসব খাবারে পাওয়া যায়: বাদাম ও বীজ-ধর্মী খাবার, অ্যাভোকাডো, শাক, উদ্ভিজ্জ তেল যেমন- সূর্যমুখী জলপাই, ক্যানোলা তেল এবং সয়াবিন তেল। সবুজ শাকসবজি, যেমন- পালংশাক, সরিষা শাক, ব্রকলি এবং অন্যান্য সবুজ শাকসবজিতে ভিটামিন ই থাকে। ডিমের কুসুম অল্প পরিমাণে থাকে। আর ফলের মধ্যে পেঁপে, কিউই এবং আম থেকেও মিলবে এই ভিটামিন।
জিংক
লিভার বা যকৃত থেকে চোখের রেটিনায় ভিটামিন-এ’র অণু পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই খনিজ। এতে রেটিনা সুস্থ থাকে এবং দৃষ্টিশক্তিও ভালো থাকে। এছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে, আঘাত ও অপারেশনের পর শরীরের কোষ মেরামত, ত্বকের রোগ প্রতিরোধ, চুল পড়া রোধ, শারীরিক বৃদ্ধি এবং প্রজনন স্বাস্থ্যেও ভূমিকা রাখে।
যেসব খাবারে পাওয়া যায়: দুগ্ধজাত খাবার, যেমন- দুধ ও পনির, ডিম, মুরগির মাংস, কলিজা, লাল মাংস, মিষ্টিকুমড়ার দানা, পালংশাক, মাশরুম, কলা, ছোলা, বাদাম এবং ডার্ক চকোলেট।
লুটেইন এবং জিয়াক্সানথিন
এগুলো হল ক্যারোটিনয়েড পরিবারের অন্তর্ভূক্ত একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট; যা চোখের রেটিনায় পাওয়া যায়। এই উপাদানগুলো চোখের বয়স-জনিত রেটিনা বা ‘ম্যাকুলার ডিজেনেরেইশন’ রোগ প্রতিরোধে ও চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ। লুটেইন এবং জিয়াক্সানথিন, ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে আসা সম্ভাব্য ক্ষতিকর নীল রশ্মিকে ‘ফিল্টার’ করে চোখের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে।
যেসব খাবারে পাওয়া যায়: গাজর, পালংশাক, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, ভুট্টা, আঙুর, পেস্তা, কুমড়া, মটরশুঁটি, পেঁপে, টমেটো এবং ডিমের কুসুম।
ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড
এটা হল এক ধরনের ‘পলিআনস্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ যা ডায়াবেটিস জনিত চোখের রেটিনার অসুখ, ‘ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি’ প্রতিরোধে কাজ করে। চোখের শুষ্কতা জনিত রোগ (উৎু ঊুব) আক্রান্ত চোখে আরও অশ্রু বা চোখের পানি তৈরি করতে সাহায্য করে।
যেসব খাবারে পাওয়া যায়: সামুদ্রিক শ্যাওলা এবং ফাইটোপ্ল্যাংটন হল ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রধান উৎস।
এছাড়া সামুদ্রিক মাছ এবং মাছের তেল, বীজ ধরনের খাবার যেমন- তিসি ও চিয়া বীজ, সয়া, বাদাম, আখরোট, উদ্ভিজ্জ তেল এবং জলপাই তেল থেকে মিলবে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এসব কারণে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্য গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা চোখের স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় কাজ করবে।
আপনার মতামত লিখুন :