সময়ের স্রোতে এখন সবচেয়ে জরুরী বিষয় নিজের স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে প্রতিনিয়ত মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বললে বিষয়টির মীমাংসা হয়না। কারণ স্বাস্থ্য-সচেতনতা বা সুস্বাস্থ্যের অভাবে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবার ভয়ে ভীত। ফলশ্রুতিতে সকলের একই প্রশ্ন, স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্যে কি করা যায়?
অনেকে ভাবেন খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরী, কেউ কেউ জিমে শরীরচর্চার উপর নির্ভর করতে চান, আবার অনেকে দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিকতায় কিছু পরিবর্তন করতে বলেন। কোনো পদ্ধতিকেই একেবারে বাদ দিয়ে দেয়া যায়না। তবে শুধু খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, কিংবা শরীরচর্চাই একমাত্র পদ্ধতি না। আপনাকে সবকিছুর সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা অবশ্য স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্যে অভ্যাসকেই গুরুত্ব দিবো। অভ্যাস আপনাকে অভ্যস্ততার ভেতর রাখে বলে সহজে ক্লান্ত হবেন না। আবার অভ্যাসের বশে আপনি কাজগুলোও করবেন। তাই স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্যে আপনি নিজের দৈনন্দিন জীবনে সামান্য কিছু পরিবর্তন আনতে শুরু করুন। এতে আপনারই আখেরে মঙ্গল হবে। এই বারটি পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি নিজের স্বাস্থ্য সহজেই সুস্থ রাখতে পারবেন।
ধীরে খাবার গ্রহণ করুন:
খাবার গ্রহণের সময় মোটেও তাড়াহুড়ো করা যাবেনা। নিজের খাবার সময়টুকুকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে। তাড়াহুড়ো করে খাওয়ার সময় আমরা কতটুকু খাচ্ছি তা বোঝা যায়না। খাবার শেষ করার দিকেই সকল মনোযোগ থাকে। ফলে আপনার ক্ষুধা মিটে গেলেও মস্তিষ্ক দ্রুত সিগন্যাল জানাতে পারেনা। এতে অনেক সময় বেশি খাওয়া হয়ে যায়। ফলে আপনার শরীরে মেদ জমা বা ওজন বাড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। তাই আস্তে ধীরে খাবার খান।
নিজেকে সামাজিক করে তুলুন:
না, আমরা বলছিনা আপনি প্রচুর মানুষের সাথে মেলামেশা শুরু করে দিন। বরং চেষ্টা করুন আপনার আশেপাশের মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখার। এতে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য সুন্দর থাকবে। তাছাড়া মানুষের সাথে মেলামেশার ফলে ঘুরাঘুরি বা অন্যান্য কাজের ফলে আপনি ব্যস্ত থাকবেনা। এতে বিভিন্ন মানসিক ব্যাধি, বিষণ্ণতা কিংবা স্ট্রেস হরমোন নির্গত হওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
ফলের জুস না, ফল খান:
অনেকেই ভাবেন ফলের জুস খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কিন্তু একবারও ভেবে দেখেছেন কি? ফলের জুসে চিনি আছে। অনেকে বাজারে বিভিন্ন ফলের জুস কিনে খান। সেই জুসে ফলের ফোঁটামাত্রও পাওয়া যাবেনা। তাই ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন। আর বাড়িতে ফলের জুস করলেও তাতে চিনি বা স্বাদবর্ধক কিছু মেশাবেন না। ফলে এমনিতেই শর্করা বা অন্যান্য উপাদান থাকে। তবে ফল খাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো কাজ। ফল খেলে ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ফাইবার, ফলিক এসিড পাওয়া যাবে যা দেহের জন্যে উপকারী।
মাঝেমধ্যে ট্যুর দিন:
বন্ধু কিংবা পরিবারকে সবসময়ই সঙ্গ দিতে হয়। কিন্তু যখনই সবকিছু বিরক্তিকর হয়ে ওঠে তখন একটা ট্যুর দেয়া উচিত। এতে সকলকে সময় দেয়ার এবং একসাথে উপভোগ করার উপলক্ষ সৃষ্টি হয়। ট্যুরের মাধ্যমে আপনার দৈহিক এবং মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব। বিশেষত এতে বেশ ছুটোছুটির আমেজ থাকে বলে আপনার হৃদরোগের আশঙ্কাও যায় কমে।
চর্বিযুক্ত খাবার ও ফাস্টফুড ত্যাগ করুন:
আজকাল ঘরের বাইরে বের হলেই ভাজাপোড়া আর চর্বিযুক্ত খাবারের হিড়িক। আর মুখরোচক বলে সবাই এসবই খেতে ভালবাসেন। এই ফাস্টফুড আর ভাজাপোড়া দেহে যেমন অতিরিক্ত মেদ জমায় তেমনই হৃদরোগের ঝুঁকিও বৃদ্ধি করে। তাই যতই প্রিয় হোক এসকল চর্বিযুক্ত খাবার প্রিয় তালিকা থেকে সরিয়ে ফেলাই উত্তম।
স্ট্রেস কমান:
নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত? বা কাজের চাপে দম ফেলবার ফুরসত মিলেনা। সেক্ষেত্রে আপনার স্ট্রেস হওয়াটাই স্বাভাবিক। স্ট্রেস বাড়লে ওজন বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও থাকে। তাই কিভাবে স্ট্রেস কমানো যায় সেদিকে মনোযোগ দিন। প্রয়োজনে পরিবারের সাথে অবসরে কাটান সুন্দর সময়। এতেও আপনার স্ট্রেস কমে যাবে। নাহলে নানান কাজের চাপে উদ্বেগে স্বাস্থ্য ভালো রাখাটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
মিষ্টি বা চিনি খাওয়া কমান:
মিষ্টি বা চিনি স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর। বিশেষত সাদা চিনি একেবারেই বাজে। সাদা চিনির বদলে লাল চিনি খাওয়া ভালো। তবে চারদিকের সকল খাবারে সাদা চিনির দৌরাত্ম দেখার মতো। চিনি বা মিষ্টি আপনার দেহের জন্যে ক্ষতিকর। ক্যান্সার, মেদ বৃদ্ধি, হৃদরোগ সহ বিভিন্ন বাজে রোগের কারণ মিষ্টি বা চিনি। তাই মিষ্টিলোভীদের অবশ্যই নিজেদের মিষ্টিপ্রীতিতে লাগাম টেনে ধরতে হবে। নাহলে নিজের সুস্বাস্থ্য টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। মিষ্টি আপনার পছন্দ হলে বিভিন্ন ফল বা মধুজাতীয় খাবার খেতে পারেন। তবে মিষ্টিকে না বলতে শিখুন।
জীবনে বৈচিত্র্য আনুন:
নিজের কাজে বা দৈনন্দিন জীবনে বৈচিত্র্য আনুন। ঘুরতে বের হন, খেলাধুলো করুন বা নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। নিজের ঘর গোছানো, ঘরের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমেও নিজেকে ব্যস্ত রাখা সম্ভব। প্রয়োজনে কিছু সহজ ব্যায়াম শিখে নিন। মোট কথা, নিজেকে সবসময় সচল রাখতে শিখুন। এতে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য এবং শারীরিক অবস্থা - দুয়েরই উন্নতি হবে। সবসময় যে দৈহিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে জিমে যাওয়া প্রয়োজন তা কিন্তু না। অফিসে গেলেও কাজের ফাঁকে হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস করুন। নিজেকে কখনো ঝিমুতে দিবেন না। প্রয়োজনে বিশ্রাম নিন কিন্তু ঝিমিয়ে পড়বেন না। তাতেই আলস্য ভর করবে।
খাদ্যতালিকায় সবজি যোগ করুন:
খাদ্যতালিকায় শর্করা কমিয়ে সবজি বাড়ান। প্রয়োজনে দিনে তিন চারবার করে খাবার গ্রহণ করুন। এতে আপনার পেট ভরা লাগবে। সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। ঋতুভেদে সবজি তালিকায় পরিবর্তন আনা সম্ভব। তাছাড়া সবজি দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন খাবার রান্না করা সম্ভব। তাই খাদ্যতালিকায় সবজি বাড়ান।
নিয়ম করে খান:
প্রতিদিন বিভিন্ন সময়ে খাবার গ্রহণ না করে নিয়ম করে খাবার খান। আপনি যে সময়ে খাবেন সেই সময়েই যেন খাবার খেতে পারেন তা নিশ্চিত করুন। বিশেষত ঘুমোতে যাওয়ার দুই ঘণ্টা আগে খাবার খেয়ে নিন। এতে আপনার দেহের বিপাকক্রিয়া সচল থাকবে। আর নিয়ম করে খেলে আপনার শরীরও অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। ফলে দেহের বিপাক প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা হবেনা।
নিয়ম করে ঘুমান:
প্রতিদিন যে সময়ে ঘুমোতে যাবেন বা যে সময়ে ঘুম থেকে উঠবেন - তা যেন পরিবর্তন না হয়। হ্যাঁ ছুটির দিন আপনি একটু বেশি ঘুমোতে পারেন। তবে সেটাও যেন একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হয়। নিজের শরীরকে নিয়ম মাফিক ঘুমানোর অভ্যাস করান। বিশেষত রোজ অন্তত ৮ ঘণ্টা এবং খুব বেশি সমস্যা হলে অন্তত ৬ ঘণ্টার ঘুম নিশ্চিত করুন। ঘুমানোর সময় আশেপাশে কোনো বিরক্তিকর জিনিস যেমন ফোন বা মিডিয়া প্লেয়ার বাজানো থেকে সকলকে বিরত রাখুন।
মোবাইল ফোন কম ব্যবহার করুন:
প্রযুক্তিকে কখনই বাদ দিয়ে দেয়া সম্ভব না। কিন্তু ফোনে আসক্তি অনেক সময় আমাদের বিভিন্ন ভুল করতে বাধ্য করে। যেমন আপনি কোনোদিন বেশি খেয়ে ফেলতে পারেন আনমনে, অথবা রাতের পর রাত জেগে সময় নষ্ট করতে পারেন। তাই মোবাইল ফোন ব্যবহারে সতর্ক হোন। নিজের ব্যস্ততার সাথে সঙ্গতি রেখে অভ্যাসটুকু পরিবর্তন করে নিন।
আপনার মতামত লিখুন :