বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) থেকে ইউজিসি ও পিএসসিতে সদস্য নিয়োগ না দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে আইসিটি সেন্টারের অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, "রাবি থেকে পূর্বে ইউজিসি এবং পিএসসিতে নিয়োগ রাখা হতো। কিন্তু এই বছর ২৪-এর গণবিপ্লবের পর সরকার এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত ইউজিসি এবং পিএসসিতে একজনকেও নিয়োগ দেয়নি। এই বিষয়টি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য খুবই অবমাননাকর। ইউজিসির ভূমিকা শিক্ষার মান এবং শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেখানে একজনও রাবি থেকে নিয়োগ নেওয়া হয়নি। পিএসসিতেও বিসিএসসহ বিভিন্ন ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া কর্মকর্তারাও ঢাকা-কেন্দ্রিক থাকার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে।"
ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইয়ামিন হোসেন বলেন, "আমরা জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে চেয়েছি বাংলাদেশের সমস্ত বৈষম্য দূর হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে গবেষকদের তালিকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। যোগ্য ব্যক্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজ পর্যন্ত ইউজিসি বা পিএসসিতে কোনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এটা আমাদের সাথে বৈষম্য।
এসময় রাবি স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজিব বলেন, "আমরা যে আন্দোলনে দাঁড়িয়েছি, এটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও জনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, কিন্তু ঢাকা কেন্দ্রিক বৈষম্য আমাদের সেই স্বপ্নে বাধা সৃষ্টি করছে। ইউজিসি ও পিএসসিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রতিনিধি নেই। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও বৈষম্যমূলক। আমরা দাবি জানাই, ইউজিসিতে অন্তত ১ জন এবং পিএসসিতে অন্তত ২ জন প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগ দিতে হবে।"
মানববন্ধনের সমাপনী বক্তব্যে স্টুডেন্ট রাইটস এসোসিয়েশনের ট্রেজারার অনিক আহমেদ বলেন, "বাংলাদেশের প্রতিটা আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অসামান্য অবদান রেখেছে। ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে জোহা স্যার দেখিয়ে দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কতটুকু অগ্রগামী। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে কখনো যথাযথ সম্মান জানানো হয়নি। বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ইউজিসি ও পিএসসিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো সদস্য নেওয়া হয়নি। যা অত্যন্ত বৈষম্যমূলক আচরণ।"
তিনি আরো বলেন, "২৪ এর গণআন্দোলনের পর বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকার একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সারা বাংলাদেশের প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়কে মাইনাস করে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাদেশের স্টেক হোল্ডার হবে, বাংলাদেশের সাথে অন্যতম বৈষম্য। এই বৈষম্য নিরসনে আমাদেরকে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।"
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় দাবি পূরণ না হলে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধে হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
আপনার মতামত লিখুন :