Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ০৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১

‘ছাত্র রাজনীতির সংস্কার’ শীর্ষক জাবিতে জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত


দৈনিক পরিবার | জাবি প্রতিনিধি  জানুয়ারি ৬, ২০২৫, ১১:২৭ পিএম ‘ছাত্র রাজনীতির সংস্কার’ শীর্ষক জাবিতে জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সকল ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণে ‘ছাত্র রাজনীতির সংস্কার: প্রসঙ্গ ডাকসু, জাকসু, চাকসু, রাকসু’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।  
সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকাল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার জাবি সংসদ কর্তৃক আয়োজিত সংলাপটিতে সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন। 
সংলাপে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, দেশকে গণতন্ত্রের পথে ধাবিত করতে হলে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংযম রেখে ভুল জায়গাগুলোতে পরস্পরের মধ্যে বেশি বেশি আলোচনা করতে হবে। যতদিন জাকসু নেই, ততদিন ছাত্র প্রতিনিধি নেই গঠনতন্ত্র বলে। আমি জাকসুর সভাপতি। আমি কেন জাকসু দিব না তা খুঁজে পাই না। আড়াইমাস আগে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জাকসুর দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে। এই আড়াইমাস আমার নির্লিপ্ততার জন্য দুঃখিত।
জাকসু নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘জাকসু সফল করতে হবে টিম ওয়ার্কের মধ্য দিয়ে। এটা একক কোন ব্যক্তির দ্বারা সম্ভব নয়। এজন্য দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার আলেচনা হওয়া উচিত। আমরা চাই, ডিবেটের বদলে ডায়লগ চালু হোক। তবে ছাত্র সংগঠনগুলোকে চিঠি দিয়ে আলোচনায় বসানোর এখতিয়ার আমি রাখি না। কারণ এটা প্রশাসনিক বিষয় নয়, রাজনৈতিক বিষয়। জাকসু নিয়ে সবাই মিলে আমার নিকট যে আস্থা রেখেছেন তা যেন পূরণ করতে পারি সে জন্য সকলের সহযোগিতা চাই।’
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি ক্ষমতার উৎস থাকলে চাঁদাবাজি থাকবে না। জবাবদিহিতা থাকবে। এজন্য রাজনীতিবিদদের অর্থনৈতিক উৎস নিয়ে আলেচনা হওয়া উচিত। তাহলে স্বচ্ছতা ফিরবে। জাতি গঠনের শুরু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি বাদ দিতে হবে।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে জাকসু দাবি করে তিনি বলেন, ‘জাকসুর লক্ষে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রতিনিধিত্বশীল আলোচনার ব্যবস্থা করা দরকার। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরবে। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে সংঘাত হবে না। সকলকে নিয়ে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘জুলাইয়ের আন্দোলনে কোন ছাত্র দলীয় লেজুড়বৃত্তির ভিত্তিতে আন্দোলন করে নাই। ছাত্র রাজনীতির সংশোধনের কথা বললে জাতীয় রাজনীতির সংশোধনের কথা বলতে হবে। যদি ছাত্র সংসদ চালু থাকতো তাহলে ফেসিস্ট হাসিনাকে ২০১৪ সালেই প্রতিহত করা যেত। গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য ছাত্র সংসদ হলো জাতীয় নির্বাচনের সেইফগার্ড স্বরুপ। তাই জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।’
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, সব সংস্কারের আগে রাজনীতি সংস্কার দরকার ছিল। রাজনৈতিক দলগুলো গণিতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কথা বললেও দলগুলোর অভ্যন্তরণে কতটুকু গণতান্ত্রিক অবস্থা তাও দেখতে হবে। এক্ষেত্রে গণতান্ত্রিকভাবে ছাত্র সংসদগুলো চালু করলে সামনের দিনে জাতীয় রাজনীতিতে তারা ভূমিকা পালন করতে পারবে। ছাত্রদের রাজনীতিতে আই হেট পলিটিক্স প্রবণতা থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। কেননা রাষ্ট্র আগামীদিনে চালাবে ছাত্ররা।
লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি নিয়ে নুর বলেন, ‘ছাত্রশিবির বা বামপন্থি দলগুলোতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে আঙুল তোলার অপশন কম। যারা ক্ষমতাসীন ছাত্ররাজনীতি বা ক্ষমতার আশেপাশে থেকেছেন তাদের ক্ষেত্রে এ লেজুড়বৃত্তিক প্রবণতা এবং লাঠিয়াল বাহিনি তৈরির প্রবণতা বেশি। তাই ছাত্র সংসদভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি হওয়া উচিত। তাই বলতে চাই, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় রাজনীতি নয়।’
ছাত্র শিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ আলোচনায় কয়েকটি প্রস্তাব রাখেন। প্রস্তাবগুলো হলো- সরকারি ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা চাদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক সিন্ডিকেট, আধিপত্য বিস্তার প্রভূতিতে যুক্ত ছিল। সে জায়গা থেকে ফিরে এসে ছাত্র রাজনীতিকে আদর্শ জায়গায় নিয়ে আসতে হলে সরকারিভাবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিধিমালা প্রণয়ন করা ও নির্বাচনের জন্য নীতিমালা তৈরি করা; ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে আন্তঃকোন্তল দূর করে সহাবস্থান নিশ্চিতে উদ্যোগ নেওয়া; ছাত্রসংগঠনকে লেজুরবৃত্তিমুক্ত করা ও সংগঠনের অফিসগুলো হবে জ্ঞানচর্চার জায়গা হিসেবে তৈরি করে প্রিয় অভিভাবকের ছবি টানানো বাদ দেওয়া; বিরোধী মত দমন করার সংস্কৃতি বন্ধ করা; শিক্ষার্থী খুন, শিক্ষক খুনের মত ছাত্র রাজনীতির সংঘাতময় বন্ধ করে অপরাজনীতি বন্ধ করা; ছাত্র রাজনীতি পরিচালিত হবে ছাত্র সংসদকেন্দ্রীক।
আলোচনা শেষে বক্তারা প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রশ্নত্তোর পর্বে উপাচার্য পরামর্শ দিয়ে বলেন, ছাত্ররা তাদের নিজস্ব কাউন্সিল করে নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে।
এদিকে আলোচক হিসেবে অংশ নিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান আসলে তিনি আলোচনায় অংশ না নিয়ে চলে যান।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ইকবাল হোসেনের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব জাবিসাসের সাবেক সভাপতি প্লাবন তারিখ, ইয়াহিয়া জিসান প্রমুখ। 

Side banner