গাইবান্ধা জেলাকে উন্নত ও আধুনিক জেলা হিসেবে রূপান্তর করতে গাইবান্ধা জেলায় স্থানীয় যে কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আছে তার মধ্যে অন্যতম গণ উন্নয়ন কেন্দ্র।
গাইবান্ধায় অনেক মেধাবী বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্ম হলেও গাইবান্ধা জেলাকে উন্নত করার লক্ষ্যে কমই চিন্তা করেছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। উন্নতির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ যখন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছিল উত্তরবঙ্গের জেলা গাইবান্ধা জেলা।
দেশের দক্ষিণাঞ্চল যখন উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে গেছে তখন উত্তরবঙ্গের জেলা গাইবান্ধায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে অনেক পরে। তাও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মাধ্যমে। বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে গাইবান্ধা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এম আব্দুস সালাম। শুধু তার নামে পরিচয় নয়। বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাধারা পরিবর্তন করে গাইবান্ধা কে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে অগ্রযাত্রায় বড় ভূমিকা পালন করছেন গণ উন্নয়নের নির্বাহী পরিচালক এম আব্দুস সালাম।
গাইবান্ধা জেলাকে দেশের একটি সমৃদ্ধশালী জেলা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে গণ উন্নয়ন কেন্দ্র নামে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গড়ে তোলেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের নরশরত পুর গ্রামে। শুধু কি গণ উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। গাইবান্ধা চরের মানুষের জীবিকা উন্নয়ন ও জলবায়ুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের মাঝে আত্মবিশ্বাসের আশা জাগিয়ে স্থাপন করেন কয়েকটি স্কুল। স্বপ্ন দেখেন ও স্বপ্ন দেখান গাইবান্ধা কে উন্নত জেলায় রূপান্তর করার। সেই উন্নত জেলায় রূপরেখা দিতে গড়ে তোলেন গণ উন্নয়ন হাসপাতাল, গাইবান্ধার স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা আজকের জনগণ, গণ উন্নয়ন প্রিন্টার্স, বিশ্বমানের শিক্ষার্থী তৈরি করার লক্ষ্যে গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় গড়ে তুলেছেন জিইউকে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ।
গাইবান্ধা জেলার বর্তমান জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ। গাইবান্ধা জেলায় জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করে গাইবান্ধা জেলাকে একটি আধুনিক ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরায়ন করতে বদ্ধপরিকর ও বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে গ্রহণ করেছেন। তিনি গাইবান্ধায় যোগদান করার পরে গাইবান্ধার ঘাঘট লেকের কচুরিপানা পরিষ্কার করতে গিয়ে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ বলেন, আজ থেকে গাইবান্ধা যে অভিযান শুরু হলো সে অভিযান চলতেই থাকবে। সেইসঙ্গে গাইবান্ধা জেলার আপনারা প্রত্যেক পেশাজীবী মানুষ স্ব স্ব স্থান থেকে সহযোগিতা করলে গাইবান্ধা জেলাকে একটি আইডিয়াল জেলা হিসেবে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের এমন বক্তব্যে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে গাইবান্ধা জেলা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সহ বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। যার ফলে গাইবান্ধা জেলার মানুষের স্বস্তি ও আত্মবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। গাইবান্ধা জেলার শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্বের দ্বারপ্রান্তের নিয়ে যেতে গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক বিশ্বমানের শিক্ষার্থী তৈরির লক্ষ্য নিয়ে বেসরকারি সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) এর ব্যবস্থাপনায় স্থাপিত করেছেন জিইউকে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ। জেলা শহর সংলগ্ন গাইবান্ধা—সাঘাটা রোডে নশরৎপুর গ্রামে জমির উপর আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর দৃষ্টিনন্দন ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নানা জাতের ফুল ও ফলদ গাছপালায় সবুজায়নে সজ্জিত করা হচ্ছে ভবনটি। শিশু থেকে যেকোন বয়সী মানুষ এই ক্যাম্পাসে আসলেই মন প্রস্ফুটিত হয়ে উঠবে। পুরোপুরিভাবে কোলাহলমুক্ত ও মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশে সুবিশাল শিশু ও কিশোরদের জন্য দুটি পৃথক খেলার মাঠ তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে নিরাপদ ও মানসম্মত আবাসন ব্যবস্থা। অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য আধুনিক সুযোগ—সুবিধাসহ অডিটোরিয়াম ও পৃথক সাংস্কৃতিক চর্চা কক্ষ। ভবনের নীচ তলায় থাকছে সুবিশাল কাফেটেরিয়া। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্যই এটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে অত্যাধুনিক জিম ও সুইমিংপুল। স্কুল ভবনের সাথেই দূরের দর্শনার্থী অভিভাবকদের জন্য নির্মিত হয়েছে আবাসিক সুবিধা। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে বেশ কয়েকটি পরিবহণ সুবিধা। পাঠদানের পাশাপাশি কালচারাল ক্লাব, বিতর্ক ক্লাব, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, বিজ্ঞান, লোগো ও রোবোটিকস ক্লাবের মাধ্যমে সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম যুক্ত করা হয়েছে।
এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্লে থেকে কেজি পর্যন্ত কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল কারিকুলামে পাঠদান করা হবে। শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে তিনটি ভাষায় দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। তবে, প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কারিকুলামে পাঠদান করা হবে। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জহুরুল কাইয়ুম জানান, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্লে থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হবে। পড়ালেখার পাশাপাশি আমরা শিক্ষার্থীদের ভালো নাগরিক হিসেবে তৈরি করতে চাই। এজন্য শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মনো পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছি। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং বা প্রাইভেট পড়তে হবে না। শিক্ষার্থীরা যাতে সাবলীলভাবে বাংলা ও ইংরেজিতে কথা বলতে ও লিখতে পারে এজন্য বিশেষ পদক্ষেপ থাকবে। শ্রেণিকক্ষে সর্বোচ্চ ৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে নিবিড়ভাবে পাঠদান দেয়া হবে।
জিইউকে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস সালাম জানান, গণ উন্নয়ন কেন্দ্র তিন যুগের বেশি সময় ধরে উপানুষ্ঠানিক, প্রাক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরি শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা থেকে একটি বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছে। অভিভাবকেরা সন্তানদের ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করিয়ে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে স্বপ্ন দেখে, আর আমরা সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে অভিভাবকদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্কুল ও কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছি। বিশ্বের যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিদেশি শিক্ষক ও ভলানটিয়ার দিয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের ঐতিহাসিকও দর্শনীয় স্থানে শিক্ষা সফরের পাশাপাশি বিদেশে শিক্ষা সফরের সুযোগ থাকব্।ে এছাড়াও সামাজিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও নীতি—নৈতিকতার চর্চায় গড়ে তোলা হবে শিক্ষার্থীদের। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রধান শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে সম্পৃক্ত হয়েছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আসাদুজ্জামান সুবহানী। তিনি বাংলাদেশ আর্মি এডুকেশন কোরের পরিচালক হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিষ্ঠানের পড়ালেখার ফি ও আবাসন বিষয়ে জানান, উত্তরাঞ্চল ও দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সাধ্যের মধ্যেই রাখা হয়েছে—যাতে করে সকল অভিভাবক শ্রেণি পেশার অভিভাবক সন্তানদের ভর্তি করতে পারে। দেশের যেকোন অঞ্চল ও দেশের বাইরের শিক্ষার্থীরাও এই স্কুলে ভর্তি হতে পারবে বলে তিনি জানান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিচার্জ সেন্টার (পিপিআরসি) ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক ২) মোঃ রবিউল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গাইবান্ধা জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পদোন্নতিপ্রাপ্ত অ্যাডিশনাল ডিআইজি গাইবান্ধা জেলার পুলিশ সুপার মোঃ মোশাররফ হোসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সূচিতে থাকছে সকাল ৯ঃ৩০ মিনিটে অভ্যর্থনা। সকাল ১০ টায় অতিথিবৃন্দের আসন গ্রহণ। সকাল ১০ঃ১৫ পনের মিনিটে আলোচনা সভা। দুপুর ১২:০০ অতিথি আপ্যায়ন। দুপুর ১২ঃ৩০ মিনিটে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রমের সূচনা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :