গাইবান্ধা সদর উপজেলা দৃষ্টিনন্দন বিদ্যাপীঠ বেনাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। “বিদ্যালয়, মোদের বিদ্যালয়, এখানে সভ্যতারই ফুল ফোটানো হয়।” এখানে সত্যিই সভ্যতার ফুল ফোটানো হয়। যেখানে রয়েছে প্রকৃতির কাছ থেকে বিদ্যা লাভের সুযোগ। যেখানে ব্যতিক্রম পরিবেশে করা হয় শিক্ষাদান। ব্যতিক্রম সেই বিদ্যাপিঠের নাম ‘বেড়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের আধুনিক সৃজনশীল পদ্ধতিতে করা হয় পাঠদান।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের নিভৃত পল্লী বেড়াডাঙ্গা গ্রাম। এই গ্রামের সুন্দরগঞ্জ-গাইবান্ধা সড়কের কোল ঘেষে ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যাপিঠটি। বর্তমানে ৬ জন শিক্ষক দিয়ে ২৬০ জন শিক্ষার্থীর চলছে পাঠদান। গাছ-গাছালি আর পাখপাখালির কলতানে গ্রামীণ পরিবেশের ছোঁয়া যেন হৃদয় কেড়ে নেয় শহর ছেড়ে গ্রামের কারুকার্য অঙ্কিত, দৃষ্টিনন্দন এই বিদ্যাপীঠ। যেখানে সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে এই বিদ্যাপীঠ অঙ্গন।
প্রকৃতির কাছে, গ্রামীণ পরিবেশের বিদ্যালয়টি নান্দনিকতায় যেন নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে। আপন মনে শিশুরা খেলা করছে। লেখাপড়া করছে মনের আনন্দে।
বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নান্দনিকতায় তৈরি প্রবেশ গেট। ঢুকতেই চোখে পড়ে নান্দনিক ফুলের বাগান।
ভিতরে প্রশস্ত খেলার মাঠ। মাঠের এক পাশে রয়েছে দোলনাসহ খেলার বিভিন্ন সামুগ্রী। অপর পাশে রয়েছে শিক্ষার্থী অভিভাবকদের বসার ছাউনি। মাঠের চারপাশে সজ্জিত ফুলের বাগান। ফুটেছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল। মাঠে প্রবেশ করা মানেই প্রকৃতির মাঝে যেন হারিয়ে যাওয়া। সবুজ দুর্বা ঘাস আর সবুজ পাতার ফাঁকে শিশুরা যেন শৈশবকে হাসি, ঠাট্টা আর আনন্দ উপভোগ করে কাটিয়ে দিচ্ছে। এ বিদ্যাপিঠে এতটাই আধুনিকতার পরশ রয়েছে যে, এর ভিতরের নান্দনিক দৃশ্য দেখলেই বিস্মিত হবে না এমন কেউ নেই।
এ বিদ্যাপিঠের প্রবেশ মুখ ও দেওয়ালে দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে বাংলা-ইংরেজি বর্ণ, শ্রেণিকক্ষ ও ভবনের চারপাশে ফলমূল, দেশ-প্রকৃতি, কার্টুনসহ নানা মনীষীদের ছবি ও বাণী। এছাড়া প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে আঁকা হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র ও গুণীজনের প্রতিকৃতি। লেখা আছে শিক্ষামূলক নানা নীতিবাক্য। দৃষ্টিনন্দন শ্রেণি কক্ষগুলো কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করছে। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন ছোটবেলা থেকেই শিল্পমনা মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছে, তেমনি জানতে পারছে দেশ-প্রকৃতি সম্পর্কে, সহজবোধ্য হচ্ছে শ্রেণিপাঠে।
প্রাক-প্রাথমিকের শ্রেণিকক্ষটি স্থান পেয়েছে শিল্পীর রং তুলির আঁচড়ে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। পড়া-লেখার পাশাপাশি ছবি আঁকাসহ খেলার জন্য রয়েছে প্লাস্টিকের পুতুলসহ বিভিন্ন ধরণের খেলনা সামুগ্রী। এসব দেখে স্কুল ছেড়ে ফিরতেই চায় না শিশুরা। ছুটি হলেই মন যেন ভার।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমাদের স্কুল মাঠে সুন্দর বাগানটি ভালো লাগে। অনেকে এখন আমাদের এ বাগান দেখতে আসে। আমরা ক্লাস ছুটির পর সবাই মিলে খেলাধুলা করি বাগানের ভেতরে।
অভিভাবকরা জানান, আগের চেয়ে এখন সুসজ্জিত বিদ্যালয় ভবন পেয়ে শিশুরা খুশি, তারাও খুশি। বাগানের দৃশ্য ও ডিজাইন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। যা সত্যিই প্রশংসনীয়। স্কুলের সুন্দর বাগান দেখে শিক্ষার্থীরা নিজেরাও এখন বাসাবাড়িতে ফুলের বাগান তৈরি করছে। স্কুলকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলায় স্কুলের প্রতি শিশুদের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। আগ্রহ বাড়ছে পড়াশোনার প্রতি।
নান্দনিক এ কারুকার্যের রূপকার প্রধান শিক্ষক মো. নাফিউল সিদ্দিকী জানান, সরকারিভাবে প্রাপ্ত বরাদ্দ দ্বারা বিদ্যালয়টিকে আরও স্মার্ট ও দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয়ে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। যাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়মুখী হয়। এতে পাঠের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানা উপকরণ ব্যবহারে শিশুদের একঘেয়েমি দুর হবে। বিদ্যালয়টি শিশুদের জন্য হয়ে উঠবে আরও আনন্দমুখর। আশাকরি বিদ্যালয়টি এক দিন জাতীয় পর্যায়ে উন্নিত হবে।
আপনার মতামত লিখুন :