Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

মির্জাগঞ্জে ৬ শিক্ষকের ৭ শিক্ষার্থী


দৈনিক পরিবার | স্টাফ রিপোর্টার এপ্রিল ১১, ২০২৫, ০৯:১০ পিএম মির্জাগঞ্জে ৬ শিক্ষকের ৭ শিক্ষার্থী

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে সাত শিক্ষার্থী নিয়ে কলাগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন ছয় শিক্ষক। স্থানীয়দের অভিযোগ, শিক্ষকরা তাদের সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। শুধু তা-ই না, স্কুলে শিক্ষার্থী বৃদ্ধিতে তাদের কোনো উদ্যোগ নেই। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯২ সালে কলাগাছিয়া গ্রামের স্থানীয়দের দান করা জমির ওপর বিদ্যালয়টি গড়ে ওঠে। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। ২০২২ সালে এক কোটি ২০ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৬ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ে চার কক্ষের একটি একতলা ভবন নির্মিত হয়। তারা সবাই একই কক্ষে তিন শিক্ষিকার সঙ্গে বসে আছে। প্রধান শিক্ষক ও একজন সহকারী শিক্ষিকা লাইব্রেরিতে আছেন। খাতা-কলমে ৫৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৮ জন উপবৃত্তির সুবিধা পাচ্ছে। উপবৃত্তি প্রাপ্ত ১৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ছয়জন পার্শ্ববর্তী মাদ্রাসার ছাত্র। 
স্থানীয় আব্দুল সালাম সিকদার বলেন, বিদ্যালয়ের উন্নয়নের টাকা ও খাতায় ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করে তারা। স্কুলে শিক্ষার্থী বৃদ্ধিতে তাদের কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তানদেরও অন্য বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করাচ্ছেন। স্কুলের পাশের দুই শিক্ষকের বাড়ি হওয়ায় তারা যেকোনো সময় বাড়িতে চলে যান। আমার ভাই ওই স্কুলের ছাত্র ছিল তাকে কিছুদিন আগে অন্য  বিদ্যালয়ে নিয়ে গেছি এবং আমার চাচাতো ভাইকে দুই একদিনের মধ্য নিয়ে যাব। এখানকার প্রধান শিক্ষক ঠিকমতো স্কুল পরিচালনা করতে পারেন না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো কয়েকজন বলেন, বিদ্যালয় একেবারে গোল্লায় গেছে। এখানে কোনো লেখাপড়া হয় না। শিক্ষকরা একজন অন্যজনের চুল দেখাদেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কোনো সময় ছাত্র-ছাত্রী বৃদ্ধির জন্য কাজ করেন না তারা।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য ও জমিদাতার পুত্রবধূ শাহিনা বেগম বলেন, ‘শিক্ষকদের গাফিলতির কারণে দিন দিন শিক্ষার্থী কমছে। আমার ছেলেকে ওই স্কুলে দিয়ে ভুল করেছিলাম। এখন মেয়েকে বাড়ির সামনের স্কুল রেখে কষ্ট হলেও দূরের অন্য বিদ্যালয়ে দিয়েছি। বিভিন্ন সময় দেখা যায়, পাঠ দান বাদ দিয়ে ২-৩ জন একই ক্লাসে বসে গল্পে ব্যস্ত থাকেন শিক্ষকরা।’
অভিযোগ স্বীকার করে সহকারী শিক্ষিকা মুকুল খানম বলেন, শিক্ষকরা স্কুলে এসে চেয়ারে বসে ঘুমায় এবং দুইজন শিক্ষকের বাড়ি প্রতিষ্ঠানের পাশে হওয়ায় তারা স্কুল চলাকালীন বাড়িতে যান। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক কোনো ব্যবস্থা নেন না। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানে প্রাক প্রাথমিকে জানুয়ারি থেকে কোনো শিক্ষার্থী আসে না।
প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষিকা মুকুল খানম সব কিছুই বলছে। আমার কিছু বলার নেই।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমি সরেজমিন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ পশ্চিম কলাগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তদন্তে গিয়ে দ্বিতীয় শিফটে ২০ জন শিক্ষার্থী ও পাঁচজন শিক্ষক পেয়েছি। আমার ধারণা, বর্তমানে শিক্ষকদের গ্রুপিংয়ের কারণে এবং শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাবে প্রতিষ্ঠানটির এ অবস্থা। এ কারণে এখানে শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘দক্ষিণ কলাগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা কম জানতে পেরে আমি তাৎক্ষণিক তদন্তে গিয়েছিলাম, তখন ১২ জন ছাত্র-ছাত্রী পেয়েছি। শিক্ষকদের দক্ষতার ঘাটতি আছে, আমি তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করছি। তাদের শিক্ষার্থী বৃদ্ধির জন্য তিন মাসের সময় দিয়েছি। যদি শিক্ষার্থী বৃদ্ধি না পায় তাহলে আমি বিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রাথমিক অধিদপ্তরে লিখিতভাবে জানাব।’

Side banner

শিক্ষা বিভাগের আরো খবর