তরুণ প্রজন্মের কাছে নতুন করে আবারো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পিঠা-পুলির পরিচিতি ঘটানোর লক্ষে নীলফামারীর সৈয়দপুরে তুলশীরাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয়েছে দিন ব্যাপি পিঠা উৎসব।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) ১১ টায় বিদ্যালয় চত্বরে এই পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। পিঠা উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুলশীরাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শিপ্লী আক্তার উৎসবের উদ্বোধন করে।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সহকারী শিক্ষক মোঃ রশিদুল ইসলাম বসুনিয়া, মো. গোলাম মোস্তাকিম, মোঃ মশিহুর রহমান, জয়দের কুমার রায়, মোঃ জাহাঙ্গীর কবির, মাহফুজা খাতুন সহকারী, কাজী সুলতান মাহমদ, মোঃ আশরাফুল কবির, মোঃ হাদী-উজ-জামান প্রমুখ।
এছাড়াও বিদ্যালয়ের কর্মচারী, অভিভাবক, শিক্ষার্থীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন।
উৎসবে শিক্ষার্থীরা ৮ টি স্টলে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ রকমের পিঠা নিয়ে হাজির হয়। প্রতিটি প্লেটে সাজানো ছিল হরেক রকম পিঠা। এসব সুস্বাদু পিঠা খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, অতিথি ও দর্শনার্থীরা। স্কুল প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন নামে স্টল স্থাপন করে বাহারি রকমের পিঠা নিয়ে বসে ছিলেন।তাসফিয়া জামান নামে অষ্টম শিক্ষার্থী নানান পিঠার পসরা সাজিয়েছেন তাঁদের স্টলে আরো ছিলো নূসরাত জাহানসহ একই স্কুলের অনেক সহপাঠী।
তাদের স্টলে রয়েছে ইলিশ পিঠা, দুধ চিতয়, নকশি পিঠা, ভাপা, ছাদ পিঠা, শামুক পিঠা, পাটিসাপটা, শর্ষে ভর্তা, গ্রিল, মালাই রোলসহ প্রায় ২০ রকমের পিঠা। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা সারা রাত ভর জেগে পরিবার ও বন্ধুরা কষ্ট করে বানিয়েছেন এসব হরেক রকমের নানান পিঠা।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইসরাত জাহান রাইসা জানান, রাত জেগে মায়ের সঙ্গে তিনি ৫ রকমের পিঠা বানিয়েছেন। সহপাঠীরা মিলে প্রায় ১৫ রকমের পিঠা বানিয়েছি। পিঠা উৎসবে পিঠা এনে বিক্রি করতে পেরে আমাদের খুবই ভাল লাগছে। শিক্ষা জীবনে আমাদের স্কুলে দ্বিতীয়বারে পিঠা উৎসব হচ্ছে তাই আমরা খুবই আনন্দীত। তাঁদের স্টলে এসে সহপাঠীসহ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অতিথিরা পিঠা খেয়েছেন।
একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণী রাফিয়াত জাহান রসনি বলেন, দ্বিতীয় বারের মতো বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পিঠা উৎসবের আয়োজন করে। আমরা ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই মিলে এ পিঠা উৎসবে অংশগ্রহণ করি। পিঠা উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পেরে ভাল লাগছে।
তিনি বলেন, এবারের ন্যায় প্রতি বছরে যদি এমন পিঠা উৎসবের আয়োজন করে তাহলে স্কুলের ছোট বড় সবাই নতুন নতুন পিঠা সম্পর্কে জানতে পারবে।
পিঠামেলায় আয়োজকদের মধ্যে বিদ্যালয়টির সহকারি শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর কবির জানান, দ্বিতীয় বারের মত স্কুলে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ সময় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অতিথিদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে স্কুল মাঠ প্রাঙ্গণ।
তিনি বলেন, সব স্টলে সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে বাহারি রকমের পিঠা।
তুলশীরাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শিপ্লী আক্তার বলেন, ১৯১৪ সালে আমাদের বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিবছর এর মতো এবছরেও পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাঠাদানের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চা করতে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। বাঙালি হাজার বছরের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী। আর শীতের সময় পিঠাপুলির স্বাদ সব থেকে ভালো পাওয়া যায় গ্রামে। কিন্তু শহরে একটু হলেও ভিন্নতা রয়েছে। এ উৎসবের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা নতুন পিঠার সঙ্গে পরিচিত হতে পারছে।
তিনি বলেন, স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসহ থেকেই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্কুলে কোমলমতি শিক্ষার্থী শিক্ষক দর্শনার্থীরা সবাই সুশৃঙ্খল ভাবে উপভোগ করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :