Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১

ইসলামী ব্যাংককে ৮ হাজার কোটি টাকা ধার


দৈনিক পরিবার | পরিবার ডেস্ক জানুয়ারি ২, ২০২৩, ০১:০৪ পিএম ইসলামী ব্যাংককে ৮ হাজার কোটি টাকা ধার

ইসলামী ব্যাংক কিছুদিন ধরে তারল্য সংকটে পড়েছে। ধারাবাহিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ নগদ জমা সংরক্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে। ব্যাংকটির তারল্য পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা কাটাতে শেষ পর্যন্ত সুদভিত্তিক ৮ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংকের 'ডিমান্ড প্রমিসরি নোট'-এর বিপরীতে এ অর্থ ধার দেওয়া হয়েছে। তবে জালিয়াতির মাধ্যমে বের করে নেওয়া অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা না করে শুধু তারল্য সহায়তা দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পরিচালিত হয় শরিয়াহ নীতিমালার আলোকে। সাধারণভাবে এ ধরনের ব্যাংক সুদভিত্তিক কোনো লেনদেন করতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মে সুকুকের মতো উপকরণের বাইরে ইসলামী ব্যাংককে ধার দেওয়ার সুযোগ নেই। সুকুকের বিপরীতে ব্যাংকটির ধারের সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন 'শেষ ভরসার ঋণদানকারী' হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডারের নির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী ৮ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিপরীতে ইসলামী ব্যাংককে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডারের ১৬ (৪) (ডি) ধারা এবং ১৭ (১) (বি) ধারা অনুযায়ী ৯০ দিন মেয়াদে এ অর্থ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকিং পরিভাষায় যা ওভারনাইট বা ওডি সুবিধা হিসেবে বিবেচিত। সমমূল্যের 'ডিমান্ড প্রমিসরি নোট' অর্থাৎ কোনো কারণে ব্যাংকটি বসে গেলে বা দেউলিয়া হলে সম্পদ বিক্রির অর্থ থেকে সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায় মেটানোর শর্তে এ অর্থ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, আর্থিক সূচকে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। তবে সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রচারণার কারণে এই ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের আমানত উত্তোলন হয়েছে। আবার ইসলামী ধারার ব্যাংকের জন্য সুকুক ছাড়া কোনো বিনিয়োগ উপকরণ নেই। ফলে এ ধরনের ব্যাংকের বেশিরভাগ বিধিবদ্ধ তারল্য রাখতে হয় নগদে। যে কারণে ইসলামী ব্যাংক সিআরআর ও এসএলআর রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যাংকটির চাহিদা অনুযায়ী ৮ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
শরিয়াহ ব্যাংককে সুদে টাকা দেওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকর এক নথিতে। এতে বলা হয়, গত ২৯ ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংক এক চিঠির মাধ্যমে জানায়, সম্প্রতি গ্রাহকদের অতিরিক্ত আমানতের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত চলতি হিসাবে জমা কমে গেছে। এতে সিআরআর ও এসএলআর ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ডিসেম্বরভিত্তিক সিআরআর ও এসএলআর ঘাটতি হলে আমানতকারীদের আস্থার সংকট বাড়বে। এতে তারল্য সংকট আরও প্রকট হবে। এ ছাড়া শরিয়াহ বিধি মোতাবেক পরিচালিত হওয়ায় ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে তারল্য সুবিধার বিভিন্ন পদ্ধতি যেমন- রেপো, স্পেশাল রেপো, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তারল্য সহায়তা (এএলএস) এবং জরুরি তারল্য সহায়তা (ইএলএস) প্রযোজ্য নয়। এমন প্রেক্ষাপটে 'লেন্ডার অব দ্য লার্স্ট রিসোর্ট' হিসেবে ব্যাংকটিকে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে ওভারনাইট সুবিধা হিসেবে ৮ হাজার কোটি টাকা দেওয়া যায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক দৈনিক ভিত্তিতে এবং দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে নগদ জমা সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকটি ২৪ দিন সিআরআর রাখতে পারেনি। ২৮ডিসেম্বর ব্যাংকটির সিআরআর ঘাটতি ছিল ৫ হাজার ১০১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকটির তারল্য পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক।
সার্বিক বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে টেলিফোন করে পাওয়া যায়নি।
বিদ্যমান নিয়মে কোনো ব্যাংকের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের সাড়ে ৩ শতাংশ দৈনিক ভিত্তিতে এবং দ্বি-সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ৪ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ নগদ জমা বা সিআরআর রাখতে হয়। আর সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদ বা এসএলআর হিসেবে ইসলামী ব্যাংকগুলোকে রাখতে হয় সাড়ে ৫ শতাংশ। কোনো ব্যাংক সিআরআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে অসংরক্ষিত অংশের ওপর ব্যাংক রেট যোগ ৫ শতাংশ তথা ৯ শতাংশ হারে দ সুদ দিতে হয়। আর এসএলআরের ব্যর্থ অংশের ওপর স্পেশাল রেপো তথা ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হয়।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশসহ কয়েকটি ব্যাংক থেকে দ্রুততার সঙ্গে নামসর্বস্ব কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রাজশাহী ভিত্তিক নাবিল গ্রুপের বিভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে ১১ প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার বড় অঙ্কের সুবিধাভোগী ব্যাংকের মালিকানার সঙ্গে যুক্ত কোনো পক্ষ বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ছাড়াও আরও কয়েকটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে তারল্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গত ১৫ নভেম্বর থেকে দৈনিক ভিত্তিতে ৫টি শরিয়াহ ব্যাংকের ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণসহ বিভিন্ন তথ্য নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পর্যবেক্ষক বসানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্নিষ্ট অন্য একজন কর্মকর্তা বলেন, ইসলামী ব্যাংক থেকে বেনামি ঋণ বের করার বিষয়টি গত সেপ্টেম্বরে উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়। এরপরও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে অদৃশ্য কারণে নীরব থাকায় পরিস্থিতি এ পর্যায়ে গেছে। এখন বেনামি ঋণ ফেরত না এনে শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার দিয়ে মানুষের আস্থা ফেরানো যাবে না। জালিয়াতির মাধ্যমে বের করা ঋণের সুবিধাভোগী বের করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

Side banner