Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১
মেঘনা নদী থেকে বালু লুট থামাবে কে?

অস্ত্রধারী বালুূদস্যুরা তোয়াক্কা করছে না প্রশাসনকে


দৈনিক পরিবার | ফয়সল আহমেদ খান জানুয়ারি ১৬, ২০২৫, ০৪:২০ পিএম অস্ত্রধারী বালুূদস্যুরা তোয়াক্কা করছে না প্রশাসনকে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর সীমানায় মেঘনা নদীর বালু অবাধে লুট হচ্ছে। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার একটি চক্র অবৈধভাবে প্রতিদিন অন্তত ২০ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে। বালু লুটের ফলে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো যেমন ভাঙন ঝুঁকিতে, তেমনি বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। 
অভিযোগ উঠেছে, নরসিংদির স্থানীয় প্রশাসন ও নৌপুলিশকে ম্যানেজ করেই দিনের পর দিন চলছে বালু লুট। এছাড়া জেলার নবীনগর উপজেলার ধরাভাঙ্গা ও জাফরাবাদ এলাকায়ও মেঘনা নদী থেকে বালু লুট করছে রায়পুরার আরেকটি চক্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচাকান্দি এলাকায় মেঘনা নদী থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০ থেকে ১২টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার একটি বালুখেকো চক্র। প্রতিদিন অন্তত ২০ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করছে চক্রটি। যার বাজারমূল্য অন্তত প্রায় ৫০ লাখ টাকা। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অবাধে বালু লুট করে বিক্রি করছে ওই চক্রটি। রীতিমতো অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত ক্যাডার বাহিনীর পাহাড়ায় দিনভর চলে বালু উত্তোলন। বালুখেকো চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়ন যুবদল নেতা কাইয়ূম মিয়া। তার সঙ্গে আছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী। অবাধে বালু তোলার কারণে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচাকান্দি, কানাইগর, উলুকান্দি ও শান্তিপুর গ্রাম।
অপরদিকে, নবীনগর উপজেলার ধরাভাঙ্গা এলাকায় মেঘনা নদীতে ৫-৭টি ড্রেজার দিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে রায়পুরা উপজেলার অপর একটি চক্র। 
স্থানীয় বিএনপির কয়েকজনকে নিয়ে এই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রায়পুরা উপজেলার মির্জাচর গ্রামের বাসিন্দা নূর ইসলাম। এই চক্রটি কয়েক মাস আগে নবীনগর উপজেলার চরলাপাং এলাকা থেকেও বালু উত্তোলন করে। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পাঁচটি ড্রেজার জব্দ করে। সম্প্রতি ড্রেজারগুলো ছাড়ানোর পর আবারও ধরাভাঙ্গা এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো। এ সব গ্রামের বাসিন্দারা নদীগর্ভে ঘর-বাড়ি বিলীন হওয়ার আতংকে আছেন।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচাকান্দি ও শান্তিপুর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বালুখেকো চক্রটি দিনের বেলা নদীর মাঝখান থেকে বালু উত্তোলন করলেও রাতে বাঞ্ছারামপুর ভৌগলিক  সীমানার ভিতরে পর্যন্ত চলে আসে। এভাবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু তোলার কারণে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘর-বাড়ি ও নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি। ফলে নদীর তীরে বসবাস ক্রমাগত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে জানান তারা। 
মূলত এই মহালে বালুর জন্য আসা ক্রেতাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রায়পুরার বালুখেকো চক্রটি নিজেদের কাছ থেকে বালু কেনার জন্য বাধ্য করছে বলে অভিযোগ করছে ইজারাদার মুন্সি এন্টারপ্রাইজ। এর প্রতিবাদ করায় বালুমহাল সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত মুন্সি এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ে কয়েকবার এসে হামলাও চালিয়েছে ওই চক্রটি। 
মুন্সি এন্টারপ্রাইজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নবীর হোসেন বলেন, বৈধ ইজারাদার হয়েও আমরা নদী থেকে ঠিকমতো বালু উত্তোলন করতে পারছি না। সরকারি কোষাগারে যে টাকা দিয়ে মহাল ইজারা নিয়েছি, মেয়াদ ফুরিয়ে আসলেও সেই টাকা তুলতে পারছি না। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি রায়পুরার ওই চক্রটি ক্রেতাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে বালু কিনতে বাধ্য করে। যেহেতু তাদের ইজারা মূল্য দিতে হয়নি, সেহেতু তাদের পুরোটাই লাভ।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নজরুল ইসলাম মরিচাকান্দিতে বালু উত্তোলন প্রত্যক্ষ করতে যান বলে জানান।
তিনি বলেন, আমি গতমাসে জীবন বাজি রেখে দুই বালু দস্যুকে আটক করে ১২ লাখ টাকা জরিমানা করি ও মুচলেকা নেই। কিন্তু আজ যারা বালু উত্তোলন করছিলো তারা বাঞ্ছারামপুর সীমানায় বালু উত্তোলন না করায় ফিরে আসি। ওরা নবীনগর মৌজায় ছিলো।
নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিব চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, তারা অস্ত্রধারী দুর্ধর্ষ। তাদের ২ মাস আগে একবার আটক করেছিলাম। খুব শীঘ্রই নৌ থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় অভিযান চালাবো।
এ বিষয়য়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। খুব দ্রুত আমরা বড়রকমের অপারেশনে যাব। যেহেতু এটি বারবার হচ্ছে, সেজন্য শাস্তিও দ্বিগুণ হবে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে এবার আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

Side banner