কুড়িগ্রাম জেলা সদরের শান্তি নগর খলিলগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) যুব সংস্থার বিরুদ্ধে “মা ও শিশু স্বাস্থ্য সহায়তা প্রকল্প” বাস্তবায়নের নামের হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলা সদরের শান্তি নগর খলিলগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) যুব সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের দীর্ঘদিন ধরে অভিনব কৌশলে প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তা ব্যক্তিদের ভুল-ভাল বুঝিয়ে হতদরিদ্র মানুষকে সহায়তার নামে ১০ টাকার হাটে শাড়ি লুঙ্গি ব্লাউজের কাপড় বিক্রির অনুষ্ঠানে অতিথি করে প্রশাসনের কাছে নিজেকে মহৎ ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সাথে হতদরিদ্র পরিবারের জন্য কম দামে সবজি ক্রয়ের বাজার বসিয়ে আব্দুল কাদের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি অনুষ্ঠান করে তা পত্রিকায় ফলাও করে প্রচার করেন।
শুরু থেকেই আব্দুল কাদের গণ পাঠাগার ও ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের মতো বিভিন্ন কার্যক্রম কুড়িগ্রাম জেলায় চালিয়ে প্রশাসনের সামনে নিজের ইমেজ তৈরি করেন। মূলত তার ব্যক্তি ইমেজ তৈরি করে প্রশাসনকে ধোকা দিয়ে হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ধান্দায় তিনি এই সকল কার্যক্রম চালান। তার অনুষ্ঠানে গণমাণ্য ব্যক্তিদের ডেকে এনে মোটা অঙ্কের সম্মানি ভাতাও তিনি হাতে তুলে দেন। এতে করে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা তার উপর সন্তুষ্ঠ হন। এভাবেই প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কুড়িগ্রাম জেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে তিনি মা ও শিশু স্বাস্থ্য সহায়তা প্রকল্প নামে গর্ভবতী মা ও ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের দোরগোরায় রেজিস্ট্রার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা সঠিক স্বাস্থ্য সেবা পুষ্টি বিষয়ক কর্মসূচী বাস্তবায়ন ও বিজ্ঞান ভিত্তিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে সাধারণ জনগণকে ধোকা দিয়ে একটি ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
কুড়িগ্রাম পৌরসভা এলাকায় প্রতিটি ওয়ার্ডে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পুষ্টি কার্ড দিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে ৩৯০ টাকা হারে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রোস্তম আলী তোতা জানায়, ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) যুব সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের ৩নং ওয়ার্ডে প্রায় ৪’শ সদস্য করে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩৯০ টাকা হারে তুলে নিয়েছে।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জমসেদ আলী জানান, ৬নং ওয়ার্ডে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পুষ্টির কার্ড দিয়ে প্রায় ৮’শ সদস্যের কাছ থেকে ৩৯০ টাকা হারে তুলে নিয়েছে। কুড়িগ্রাম পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল মালেক জানান, তার ওয়ার্ডেও শত শত মানুষকে সদস্য করে ৩৯০ টাকা হারে নিলেও তাদেরকে কোন ধরণের সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়নি। এভাবে কুড়িগ্রাম পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক ফুল’র নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান, তার ইউনিয়নে ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) যুব সংস্থার মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সহায়তা প্রকল্পের নামে কয়েক হাজার মানুষকে সদস্য করে জন প্রতি রশিদ দিয়ে ৩’শ টাকা হারে নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সেখানেও কোন ধরণের সুযোগ সুবিধা পায়নি হতদরিদ্র পরিবারগুলো।
তিনি দাবি করেন ফুল’র নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে মিটিং করে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করে। যেহেতু উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত তাই বিশ্বাস করে ঘোগাদহ ইউনিয়নে প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নের সুযোগ দেয়া হয়। এতে প্রতারণার শিকার হওয়ায় হতদরিদ্র পরিবারগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা ইউপি চেয়ারম্য্যান মোঃ শাহাদত হোসেন মন্ডল জানায়, তার ইউনিয়নেও ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) যুব সংস্থা একটি স্বাস্থ্য সহায়তা প্রকল্পের নামে প্রায় ২২’শ লোকের কাছ থেকে সদস্য করে জনপ্রতি ২৬০ টাকা করে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কুড়িগ্রাম পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের গোরস্থান পাড়া এলাকায় সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, গোরস্থান পাড়ার রিক্তা, সুমি, সাধনা, মীম, নাছরিন, বিলকিছ, মিতু, ভাবনা, পুজা, মিলি, হাজরা, অর্চনা, প্রতিমা, সাবেত্রী, জয়েন্তী, বিচিত্রা, বর্ষা, স্মৃতি সহ অসংখ্য মহিলাকে সদস্য করে সদস্য ফি বাবদ ৩’শ টাকা ও ছবি তোলা বাবদ ৯০ টাকা হারে প্রত্যেকের কাছ থেকে নিয়েছে। কিন্তু দেড় বছর অতিবাহিত হলেও এখনও এই সকল সদস্যদের কোন ধরণের সহায়তাই দেয়নি ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) যুব সংস্থা। এব্যাপারে ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) যুব সংস্থার মাঠকর্মী জয়েন্তী ও কলি জানায়, মাঠের সমস্ত তথ্য নির্বাহী পরিচালকের কাছে রয়েছে। আমাদের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল সে অনুযায়ী আমরা সদস্য করেছি। সমস্ত দায় দায়িত্ব ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) যুব সং¯’ার নির্বাহী পরিচালকের।
এব্যাপারে ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) যুব সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের জানান, আমাদের প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে প্রশাসন অবগত রয়েছে। পত্রিকায় কোন রিপোর্ট আসলে প্রশাসন তদন্ত করে বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখবে। কেউ যদি আমাদের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের কাছে টাকা হাতিয়ে নেয় এর জন্য আমরা দায়ি না।
আপনার মতামত লিখুন :