কামরুজ্জামান টুটুল, যিনি দেবীগঞ্জ রেঞ্জ অফিসের আওতাধীন বদেশ্বরী বিট কার্যালয়ে কর্মরত। বন প্রহরী এই ব্যক্তি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পালন করছেন বিট কর্মকর্তার দায়িত্ব। কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে চোরাই গাছ আটকের পর তা বিক্রি করে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ দিন থেকে ঘুরেফিরে একই রেঞ্জে চাকরি করার সুবাদে তিনি এই অপকর্ম চালিয়ে আসছেন।
সম্প্রতি এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে নেমে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। গত মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দিবাগত রাতে বড়শশী ইউনিয়নের সর্দারপাড়া এলাকায় বন বিভাগের গাছ কেটে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরদিন সকালে বিট কর্মকর্তা কামরুজ্জামান প্রায় ৪০-৫০ পিস ইউক্যালিপটাস গাছের লগ (গাছের গুঁড়ি) ভাউলাগঞ্জে রাকিবুলের করাতকলে তার জিম্মায় রাখে। এতগুলো গাছ আটকের পরও সেদিন তা জানানো হয়নি রেঞ্জ কর্মকর্তাকে। পরে সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার। এভাবে গাছ জব্দের পর তা দ্রুত উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলেও জানান রেঞ্জ কর্মকর্তা। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন প্রায়ই এভাবে জব্দ করার পর নিজের সুবিধা মতো সময়ে গাছ বিক্রি করেন কামরুজ্জামান। বদেশ্বরী বিট এলাকায় যা ওপেন সিক্রেট। এভাবে গত কয়েক বছরে অন্তত অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়েছেন বলেও দাবি স্থানীয়দের।
পরে সাংবাদিকদের তৎপরতায় বিট কর্মকর্তা নিজের অপকর্ম ঢাকতে গত সোম ও মঙ্গলবার (১৮ ও ১৯ নভেম্বর) করাত কল থেকে বিট কার্যালয়ে নিয়ে রাখেন জব্দকৃত গাছ।
এর আগে ভাউলাগঞ্জে মোহন নামে এক ব্যক্তির জিম্মায় বেশ কিছু চোরাই গাছ রাখেন অভিযুক্ত বিট কর্মকর্তা। সেই গাছ এখনো বন বিভাগ উদ্ধার করতে পারেনি। কিভাবে জিম্মায় দিলে বন বিভাগ গাছ উদ্ধারে ব্যর্থ হয় এবং বন বিভাগের বাগানের তিন থেকে চারশো গজের মধ্যে মোহন নিজে অনুমোদনহীন করাত কল পরিচালনা করলেও কেন তার জিম্মায় জব্দকৃত গাছ রাখার প্রয়োজন পড়লো তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
গত ১৫ অক্টোবর সদর ইউনিয়নের তালতলা সরকারপাড়া এলাকায় লোকালয়ে রাখা কয়েকশো পিস মিনজিরি ও শিশু গাছের লগের সন্ধান পেলে তা বনবিভাগকে জানায় সাংবাদিকরা। সেদিন রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার দিনাজপুরে ও সদর বিট কর্মকর্তা রিয়াজুল হাসনাত ছুটিতে থাকায় রেঞ্জ কর্মকর্তার নির্দেশে ঘটনাস্থলে যান কামরুজ্জামান। পরে রাতে দেবীগঞ্জ রেঞ্জ কার্যালয়ে গাছ পাঠানোর কথা থাকলেও বড় লগগুলো কৌশলে পার্শ্ববর্তী ডোমার উপজেলায় পাঠানো হয় বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। লোক দেখানো কিছু লগ এনে রাখা হয় রেঞ্জ অফিসে।
এভাবে একের পর এক অনিয়ম করে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন এই বিট কর্মকর্তা। নিয়ম অনুযায়ী বিট কার্যালয়ে রাতে থাকার কথা থাকলেও কামরুজ্জামান থাকেন না। ফলে সন্ধ্যার পর মাদকাসক্তদের আসর বসে বিট অফিসে।
পার্শ্ববর্তী ডোমার উপজেলায় বাড়ি এই বিট কর্মকর্তা এর আগেও দেবীগঞ্জে কর্মরত থাকা অবস্থায় অনিয়মের কারণে দিনাজপুর ও লালমনিরহাটে বদলি হন। তবে তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় ও স্বপরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় প্রতিবার প্রভাব খাটিয়ে এবং উপর মহলকে ম্যানেজ করে পুনরায় দেবীগঞ্জে আসেন।
যদিও এতসব অভিযোগের পরও নিজের অবস্থানে অনড় এই কর্মকর্তা। সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি ছোট বিষয়গুলোকে বড় না করার অনুরোধ জানান। আর ভবন জরাজীর্ণ হওয়ায় বাসা থেকে তিনি অফিস যাতায়াত করেন বলে জানান।
এই বিষয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার বলেন, এমন কিছু অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। কর্মস্থলে নতুন যোগদান করায় স্টাফদের নিয়ন্ত্রণে আনতে একটু সময় লাগছে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, বিষয়গুলো জানা ছিল না। তবে অভিযোগ যেহেতু এসেছে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :