মেহেরপুরের গাংনীতে স্ত্রী রুপালী খাতুনকে মারধরের পর মুখে বিষ ঢেলে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্বামী কাজল ও তার মা হাসিনা খাতুনের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর), সকালের দিকে ঘটনায় গাংনী থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রুপালীর ভাই হাসিবুল ইসলাম।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, দীর্ঘ ৭ বছর পূর্বে গাংনী উপজেলার মাইলমারী গ্রামের হিসাব আলীর মেয়ে রুপালীর সাথে বিয়ে হয় একই উপজেলার হিজলবাড়ীয়া গ্রামের ফরহাদ হোসেনের ছেলে কাজলের সাথে। বিবাহের সময় কাজলের চাহিদা মোতাবেক ১ লক্ষ টাকা যৌতুক প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে বাড়ির জমি ক্রয় বাবদ আরও ২ লক্ষ টাকা দাবি করলে রুপালীর বাবা হিসাব আলী মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে আবারও ২ লক্ষ টাকা যৌতুক হিসেবে দেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আরো ২ লক্ষ টাকা যৌতুক হিসেবে কাজল গ্রহণ করে বলেও উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, কাজল একজন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি। বিবাহের পর থেকেই তার মায়ের কু-প্ররোচনায় মাঝে মধ্যেই রুপালীকে মারধরসহ শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। এমনকি কাজল তার সংসারে ঠিকমতো বাজার-ঘাটও করে না। বাসায় রান্নার চাল-ডাল ও তরিতরকারি না থাকলে বলতে গেলেও রুপালীকে মারধর করে কাজল। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার গ্রামে সালিশ বৈঠক বসেছে কিন্তু তাতে কোন ফল হয়নি বরং চলতেই থাকে নির্যাতন।
এরই অংশ হিসেবে গত রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে কাজল ও তার মা হাসিনা মিলে রুপালীকে মারধর করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে যখম করে। এছাড়া কাজল ও তার মা রুপালীকে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে এবং রূপালীর মুখে বিষ ঢেলে হত্যার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে তাকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এখন অবধি চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রয়েছে।
এবিষয়ে রুপালীর সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, তিনার অবস্থা ভালো নয়। মা, ছেলে মিলে রাস্তায় ফেলে টানা-হেঁচড়া করা হয়। চলে বেদম কিল-ঘুষি ও লাথি। এমনকি স্বামী কাজল তার গলা টিপে হত্যার চেষ্টা করলে এসময় কাজলের মা হাসিনা ছত্রাকনাশক বিষ (এমিষ্টার টপ) এনে রুপালীকে পান করিয়ে দেয়। রুপালী জানায় কাজল নিয়মিত গাঁজা সেবন করে থাকে। বলতে গেলেই চলে অমানুষিক নির্যাতন। শুধুমাত্র ৫ বছরের ছেলের দিকে তাকিয়েই নাকি কাঁথা সেলাই, সেলাই মেশিনে কাজ এমনকি মাঠে গরুর ঘাস কেটেও সংসারে টিকে থাকতে চেয়েছে। কিন্তু তার শ্বাশুড়ী হাসিনা স্বামী সংসার থেকে বাড়ি ফিরে আসার পর আর টিকে থাকা সম্ভব হয়ে উঠছেনা। কারণে অকারণে গালি-গালাজ, ছেলেকে মিথ্যে বলে মারধরের সুব্যবস্থা করাই তার কাজ। শেষ অবধি হত্যার চেষ্টা।
জানা যায়, রুপালী কে ইতিপূর্বে ৩/৪ বার মারধর করে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বারবারই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কথা শুনে ও ছোট্ট ছেলে মোহাম্মদ আলীর ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্বামীর বাড়ি ফিরেছে রুপালী। কিন্তু সুখের হয়নি স্বামাীর সংসার। নির্যাতিত হয়ে ফিরতে হয়েছে বাবার বাড়ি। অবশেষে আবারও হিজলবাড়ীয়া গ্রামের ইউপি সদস্য রিপন আলীসহ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অনুরোধে স্বামী কাজলের বাড়ি আসতে হয় রুপালীকে। কিন্তু হার মানতে হয় তাদেরকেও। দায়িত্ব নিয়ে রুপালীকে নিয়ে আসলেও কাজল ও তার মা হাসিনার অমানুষিক নির্যাতনে বিষ পর্যন্ত পান করিয়ে বাধ্য করেছে হাসপাতালে যেতে। গত ৩ দিন অবিবাহিত হলেও খোঁজখবর নেওয়া হয়নি রুপালী কেমন আছে। বিষয়টি সম্বন্ধে জানতে কাজলের বাড়ি হিজলবাড়ীয়া দক্ষিণপাড়াতে কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত হলে কাজল পালিয়ে যায়। তার মা হাসিনা অস্বীকার করে বিষ পান করানোর বিষয়টি।
এদিকে ভুক্তভোগী বোন রুপালীর উপর অমানুষিক নির্যাতন ও হত্যা চেষ্টার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে গাংনী থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন ভাই হাসিবুল।
এ ব্যাপারে গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি ছুটি শেষে গাংনী ফিরছেন। বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত নয় বলে জানান।
আপনার মতামত লিখুন :