গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদের স্বচ্ছ জলে নৌকা ভাসিয়ে খোলা আকাশের নিচে মুক্ত বাতাসের পরশ নিতে গ্রাম কিংবা শহরের অসংখ্য মানুষের ভিড় জমায় গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাশীঘাটে। এছাড়া যমুনা-ব্রহ্মপুত্র পারাপারের জন্য উত্তরের ৮ জেলা জেলার যাত্রী সাধারণের আসা-যাওয়া এই ঘাট দিয়েই। জেলা শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে বালাশীঘাটে ঢোকার আগে স্বাগত জানায় বালাশী ফেরিঘাট টার্মিনাল। চারদিকে ঘেরা। বাইরে থেকে ভেতরের সবই দেখা যায়। পর্যটকদের বিনোদনের জন্য এই স্থান হতে পারে নদী বেষ্টিত প্রকৃত স্থান।
২শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশাল এলাকাজুড়ে টার্মিনালটি পড়ে আছে জনমানব শুন্য হিসাবে। অথচ কথা ছিল যাত্রীরদের কোলাহলে মুখর থাকবে টার্মিনালটি। সেজন্যই এখানে গড়ে তোলা হয়েছে পাইলট হাউজ, মসজিদ, অফিস কক্ষ, টোল আদায় কক্ষ, যাত্রীদের বিশ্রামাগার, ক্যান্টিনসহ প্রয়োজনীয় সব স্থাপনা। কিন্তু সবই পড়ে আছে।
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে "আছে গরু না বয় হাল তার দুঃখ সর্বকাল" গাইবান্ধার বালাশী ও জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাটে পৌনে ২শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ফেরিঘাট টার্মিনালটি।
গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের কয়েকজন বলেন, জনগণের কোটি কোটি টাকা খরচ করে এত আয়োজন করা হলো। এই আয়োজন তো ফেলে না রেখে জনগনের কল্যাণেই ব্যবহার করা যেতে পারে। সংস্কারের এই সময়ে এই কেন্দ্রকে করতে হবে বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে। তাহলে জনগণের ব্যবহৃত টাকা জনগণের কল্যাণেই আসবে। এখানে কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া বিআইডব্লিউটিএর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। উদ্বোধনের দুই বছর পরও মূল ফটকসহ টার্মিনালের ভবনগুলো সবই তালাবদ্ধ।
বালাশী-বাহাদুরাবাদ নৌরুট এই অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষের রাজধানীর সাথে যোগাযোগের জন্য সড়কপথই একমাত্র ভরসা। কোনো কারণে বঙ্গবন্ধু সেতু অচল হলে এ অঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিপাকে পড়বে। রাজধানীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। সেজন্য এই রুটে ফেরি বা লঞ্চ চলাচল শুরু করা খুবই জরুরি। এই পথ সচল হলে সাধারণ মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পারাপার করতে হবে না। যতদিন এখানে বিকল্প ট্যানেল অথবা সেতু না হয় ততদিন এই টার্মিনালেটি পর্যটকদের বিনোদনে কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করতে হবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে ফেরিঘাট টার্মিনাল নির্মাণের পর আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম, আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। পৌনে ২০০ কোটি টাকার ফেরিঘাট টার্মিনাল পড়ে আছে, সেখানে এখন ছাগল চরছে। স্থানীয় লোকজন এখানে আসেন ঘাস তুলতে।
২০১৭ সালে শুরু হয় ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে গাইবান্ধার বালাশী ও জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট টার্মিনালের কাজ। ২০২২ সালের এপ্রিলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘাটটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী। উদ্বোধনের কয়েক দিন পরই যমুনা-ব্রহ্মপুত্রে নাব্য সঙ্কটে বন্ধ হয়ে যায় ফেরি চলাচল। বালাশী থেকে বাহাদুরাবাদ ২৬ কিলোমিটার নৌপথ সচল করতে একাধিকবার নদী খননের নামে মোটা অংকের অর্থ খরচ করেও এই রুট ফেরি চলাচলের উপযোগী করতে পারেনি বিআইডব্লিউটিএ। অথচ ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৯৩৮ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার চালু করেছিল রেলওয়ে ফেরি।
ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর জেলার গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যাত্রী ও মালপত্র পারাপারের জন্য এই ফেরি সার্ভিস বেশ জনপ্রিয় ছিল। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পরও কিছুদিন চালু ছিল মালবাহী ফেরি। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে নাব্য সঙ্কটে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর নতুন করে ফেরিঘাট টার্মিনাল নির্মাণ ও ফেরি চালুর উদ্যোগ উত্তরের লাখো মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করলেও আবারো বাধা হয়ে দাঁড়ায় যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্য সঙ্কট।
বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করে গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি যাত্রীদের অর্থ ও সময় সাশ্রয় করতে উদ্যোগ চান এই রুটে চলাচলকারী যাত্রী ও সাধারণ মানুষ। কিন্তু যতদিন না এটি হবে ততদিন মানুষের কল্যাণে বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করা জন্য সময় এসেছে। এটি বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হলে সরকার পাবে কোটি টাকার রাজস্ব অন্যদিকে গাইবান্ধা শহর হবে কোলাহল মুক্ত যানজট মুক্ত শহর।
আপনার মতামত লিখুন :