চুয়াডাঙ্গায় কাস্টম ও ভ্যাট কর্মকর্তার শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

চুয়াডাঙ্গায় এক ঘন্টা দোকানপাট সব বন্ধ রেখে প্রধান সড়কে এসে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন সকল ব্যবসায়িরা। গতকাল বুধবার সকাল ১০ টায় শহরের  বড় বাজার চত্বরে বঙ্গ পিবিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক সেলিম আহম্মেদকে কাস্টমস কর্মকর্তা শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদে সড়র অবরোধ করে এই মানববন্ধনে অংশ নেন শহরের সব শ্রেণির ব্যবসায়িরা। এসময় মানববন্ধনটি আয়োজন করে চুয়াডাঙ্গা জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ। মানববন্ধন চলাকালীন সময়ে বড় বাজার এলাকায় তীব্র  যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তির স্বীকার হয় অসংখ্য মানুষ।
মানববন্ধনে ব্যবসায়ি নেতারা বলেন, ‘মেসার্স বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনসহ কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, যশোর-এর ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ৬ জানুয়ারি বঙ্গ পাইপ ইন্ডাস্ট্রিতে যায় এবং তল্লাশির নামে যা”েছতাই আচরণ করেন। অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান প্রতিষ্ঠানের মালিক সেলিম আহমেদের কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। সেলিম আহমেদ ঘুষ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এতে অপমানিত হয়ে মালিকপক্ষ। ৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে ২৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি ¯’ায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করে দেয়। এতে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকসহ প্রতিষ্ঠানটির উপর নির্ভরশীল পাঁচ শতাধিক পরিবার চরম অনিশ্চয়তায় পড়ে। অভিযুক্ত অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান ও তার ঘনিষ্ট সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনের শাস্তি, কাস্টমস কর্মকর্তাদের দ্বারা অনৈতিক হয়রানি বন্ধ এবং প্রতিষ্ঠানটি চালুর দাবির জানাছি। এই ভাবে যদি কাস্টমস কর্মকর্তারা যদি ব্যবসায়ীদের অত্যাচার করে, তাহলে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা কোথায়। কাস্টমস কর্মকর্তা মনে রাখবেন ব্যবসায়ীদের অত্যাচার করলে এই চুয়াডাঙ্গায় থাকতে পারবেন না। এই সমস্যা সমাধান না করলে কাস্টমস কর্মকর্তার অফিস সকল ঘেরাও করা হবে। তখন বুঝতে পারবেন ব্যবসায়ীদের অত্যাচার করা কি ভালো না খারাপ’। 
ব্যবসায়ী নেতারা আরও বলেন, ‘বঙ্গ পিবিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক সেলিম আহম্মেদকে কাস্টমস কর্মকর্তা শারীরিকভাবে যে লাঞ্ছিত করেছে তার সমাধান চাই। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তা রাকিবুল হাসানের অপসারণ ও ব্যবসায়ীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না করলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে ব্যবসায়ীরা। কাস্টমস কর্মকর্তা অযোক্তিক ভাবে ব্যবসায়ীদের কাছে পন্যের ভ্যাট আদায় করছে। এটি বন্ধ করতে হবে। সরকারি বিধি মতো ভ্যাট আদায় করতে হবে। ভ্যাট আদায়ের এই ডাকাতি বন্ধ করুন। অতিরিক্ত ভ্যাট আদায় বন্ধ না করলে ব্যবসায়িদের পথে বসতে হবে। তাই ভ্যাট আদায় করতে হবে। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ভাবে হয়রানি হ”েছ ও ক্ষতিগ্র¯’ হ”েছ কিছু অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তার কারণে। সকল ব্যবসায়িরা যেন সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারে সেজন্য সরকারের কাছে আবেদন করছি। আর এই চুয়াডাঙ্গার কাস্টমস কর্মকর্তার অপসারণ চাই। অপসারণ না করলে ব্যবসায়ীরা কঠোর আন্দোলনে ডাক দেবে বলে হুশিয়ারি দেন’। 
এসময় বক্তব্য রাখেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক, সদস্য সচিব ও চুয়াডাঙ্গা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার ইবু, চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মঞ্জুরুল আলম মালিক লার্জ, সোনা জোয়ার্দ্দার, কিশোর কুমার কুন্ডু, চুয়াডাঙ্গা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের জগলু, চুয়াডাঙ্গা পরিবেশক সমিতির সাবেক সভাপতি সালাউদ্দিন চান্নু, সভাপতি মাসুদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম রিংকু, চুয়াডাঙ্গা আলী হোসেন মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আজিজ, চুয়াডাঙ্গা হোটেল রেস্তোরা কমিটির সভাপতি পিয়ার আরী ও সাধারণ সম্পাদক তহিবুর রহমান বাবু, চুয়াডাঙ্গা সমবায় নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ি সুমন খাঁন, প্রিন্স প্লাজা মার্কেটের সভাপতি আমির বাদশা, রেলবাজার দোকান মালিক সমিতির সদস্য অপু বিশ্বাস ও ফারুক হাসান মালিক, চুয়াডাঙ্গা গমপট্টি ব্যবসায়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান, মৎস্য পট্টি ব্যবসায়ী সমিতির ফিরোজ হাসান, চুয়াডাঙ্গা পেট্রোল পাম্প ও ট্র্যাংকলরীর সাধারণ সম্পাদক এ.এস.এম. তছলিম আরিফ বাবু, বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রির ম্যানেজার হাফিজুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার খালিদ হাসান সজিব, হিসাবরক্ষক আব্দুর রাজ্জাক রুমি প্রমুখ।  
উল্লেখ্য, গত ০৬ জানুয়ারি  যশোর কাস্টমস প্রিভেনটিভ টিম চুয়াডাঙ্গার মেসার্স বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজে তল্লাশি চালায়। অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে কাস্টমস টিম বঙ্গ পিভিসির মালিক সেলিম হোসেনকে শারিরীক-মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করে মোটা অংকের ঘুষ দাবি করে। মূল্যবান কাগজপত্র তছনছ করে।  ঘটনার পরদিন ফ্যাক্টরির মালিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। উপায় না ফ্যাক্টরির শতাধিক শ্রমিক -কর্মচারী ৯ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সংবাদ সম্মেলন শেষে  শহরের বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে জেলা প্রশাসকের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়।