ঢাকা-লক্ষ্মীপুর-রায়পুর মহাসড়কটি বেহাল অবস্থা হয়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি সংস্কার করা হয় না। ফলে সড়কের বেশির ভাগ অংশেই পিচ ও মেকাডম (ভাঙা ছোট পাথর/খোয়া বিছিয়ে পিচ ঢালাই) উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। পথ পাড়ি দিতেও বেশি সময় লাগছে।
এ সড়কে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ থেকে স্থায়ীভাবে সংস্কার করা না হলেও পিচ ঢালাই কার্পেটিংয়ের এ সড়কটি সংস্কার করা হচ্ছে ইট দিয়ে সলিং! গত কয়েকদিন ধরে সড়কের বিভিন্নস্থানে বসানো হয়েছে ইটের সলিং। আর ইট বসানোর জন্য ব্যবহার হচ্ছে বালু। ফলে ধুলোর মাত্রা বেড়েছে কয়েকগুণ। দূষণ হচ্ছে পরিবেশ। এছাড়া সড়ক জুড়ে ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ জনসাধারণ।
ইটের সলিং দিয়ে সংস্কারের কারণে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে চলাচলকারীদের মাঝে। বিষয়টিকে ‘তামাশাও’ বলছেন অনেকেই। মহাসড়কের মত গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ইটের সলিং না করে স্থায়ীভাবে সংস্কারের দাবি স্থানীয়দের।
জেলার চন্দ্রগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুর বাস টার্মিনাল পর্যন্ত মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১৮ কিলোমিটার এবং লক্ষ্মীপুর থেকে রায়পুর অংশে ১৪ কিলোমিটার, আর রায়পুর থেকে রায়পুর-ফরিদগঞ্জের বর্ডার বাজার অংশে প্রায় ৭ কিলোমিটার।
সরেজমিনে মহাসড়কের চন্দ্রগঞ্জ বাজার থেকে রায়পুর পর্যন্ত ঘুরে বেহাল দশা চোখে পড়ে। বিশেষ করে চন্দ্রগঞ্জ বাজারের থেকে শুরু করে হাজিরপাড়া বাজারের পূর্ব ও পশ্চিম অংশ, বটতলী বাজারের পশ্চিম অংশ থেকে মান্দারী বাজার হয়ে যাদৈয়া মাদরাসা, জকসিন বাজার থেকে শুরু করে তেলের পাম্প, পুলিশ লাইন্স, ইসলাম মার্কেট, পলোয়ান মসজিদ, ঝুমুর, বাগবাড়ি, উত্তর তেমুহনী, বিসিক ও বাস টার্মিনাল এলাকার অবস্থা একেবারে নাজুক। এছাড়া লক্ষ্মীপুর-রায়পুর অংশে নতুন গো-হাটা, বেড়িরমাথা, দালাল বাজার, মাইলের মাথা, সর্দার বাড়ি, রায়পুরের বাসাবাড়ি থেকে রাখালিয়া, ফিশারিজ ব্রিজ থেকে শুরু করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত সড়ক ভাঙা।
যদিও মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা দিয়ে রেখেছে সওজ বিভাগ। প্রকল্প পাস হলে উন্নয়ন হবে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। তবে সেটিও বা কবে নাগাদ হবে তার সদুত্তর মেলেনি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে।
লক্ষ্মীপুর জেলার একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দিয়ে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশকিছু জেলার যাত্রীবাহী বাস ও ও মালবাহী ট্রাক-পিকআপভ্যান চলাচল করে।
স্থানীয়রা জানান, কার্পেটিং করার কয়েক বছরের মাথায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ দেখা দিলে ‘জোড়াতালি’ দিয়ে ওইসব অংশ নামমাত্র সংস্কার করা হয়। তবে স্থায়ীভাবে সংস্কার না হওয়ায় কয়েক মাসের মাথায় পিচ ঢালাই উঠে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ২০১৭ সালের দিকে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর-রায়পুর মহাসড়কটিতে কার্পেটিং এর কাজ করা হয়। এরপর থেকে আর কোনো কাজ হয়নি।
এদিকে সড়কে যানবাহনের চাপ, অন্যদিকে অতিবৃষ্টিতে ও ২৪ শে বন্যায় সড়কের পুরো এলাকায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এরপর বেশ কয়েকটি স্থানে দেখা দিয়েছে বড় বড় গর্ত। কণা ও বালু দিয়ে সেসব গর্ত ভরাটের চেষ্টা করা হয়। আবার কোথাও কোথাও কার্পেটিং সংস্কারের নামে অপচয় করা হচ্ছে অর্থ। কোনোটাই কাজে আসেনি। বছর খানেক আগেও সড়কের হাজিরপাড়া, মান্দারী, জকসিন, পুলিশ লাইন্স সংলগ্ন এলাকায় পিচ ঢালাই কার্পেটিং করা হয়েছে। কিন্তু তা বেশিদিন টেকেনি। ওইসব স্থানে এখন বসানো হচ্ছে ইটের সলিং।
এ সড়ক চলাচল করতে একদিকে যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, অন্যদিকে বালুতে অতিষ্ঠ হচ্ছে চলাচলকারী যাত্রী এবং আশপাশের লোকজন ও বাজারের ব্যবসায়ীরা।
চালকরা বলেন, পিচ ঢালাই সড়কে ইটের সলিং দেখে মনে হয় এটা একটা ‘তামাশা’। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি সংস্কার করতে হবে দীর্ঘস্থায়ীভাবে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা ইট বসিয়ে দিচ্ছে। এখানেও তাদের অনিয়ম আছে।
নাসির উদ্দীন বলেন, এমনিতেই সড়ক বালুময়। এরপর বালু দিয়ে ইটের সলিং করা হচ্ছে। এতে ধুলোবালির পরিমাণ আরও বেড়েছে। ফলে আমাদের ভোগান্তি কিন্তু কমেনি, বরং বেড়েছে। বালুর কারণে পরনের জামাকাপড় নষ্ট হয়। ধুলোতে শ্বাস নেওয়া যায় না। এটা স্বাস্থ্যের জন্যেও মারাত্মক ক্ষতিকর। জরাজীর্ণ সড়কের কারণে যাতায়াতে সময়ও অপচয় হচ্ছে।
তিনি বলেন, ইটের সলিংয়ের কারণে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। এ সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করে। যানবাহনের চাকায় ইট ভেঙে ধুলো উড়বে, আবারও সেই গর্তের সৃষ্টি হবে। এটা সড়ক বিভাগের খামখেয়ালিপনা কাজ।
যাত্রীরা বলেন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত মহাসড়কের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কিন্তু বন্যা পরবর্তী সময়ে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম বাজার পর্যন্ত নোয়াখালী অংশে সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্মীপুর অংশে কোনো সংস্কার হয়নি। এটা লক্ষ্মীপুর বাসীর জন্য দুর্ভাগ্য।
জকসিন বাজারে হোটেল ব্যবসায়ীরা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে সড়কের বেহাল অবস্থা পড়ে আছে, তার উপর বালুতে দোকানের খাবার জিনিসপত্রতে এসে পড়ে এখন আবার ইটের সলিং করা হচ্ছে, যাতে বালু দেওয়া হয়েছে, দূর্ভোগ কমার পরিবর্তে বাড়বে।
লক্ষ্মীপুর সওজ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সদর) মোশাররফ হোসেন বলেন, সড়কের খানাখন্দগুলো নরমাল সিলকোড করলে বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। তাই ইটের সলিংয়ের মাধ্যমে মেরামত করা হচ্ছে। ইট বসে গেলে দুর্ভোগ ছাড়াই যানবাহন চলাচল করতে পারবে। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য কাজ করছেন তারা।
স্থায়ী সমাধানের বিষয়ে এই কর্মকর্তা জানান, লক্ষ্মীপুর বাস টার্মিনাল থেকে চন্দ্রগঞ্জ বাজার পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর অংশে ১৮কিলোমিটার সড়কের চার লেনের ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি)’ সংশ্লিষ্ট বিভাগে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প পাশ হলে চার লেনে ২৪ফুট করে ৪৮ফুট এবং মাঝখানে ডিভাইডারও হবে।
আপনার মতামত লিখুন :